27 C
Dhaka
জুলাই ৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আন্তর্জাতিক রাজণীতি

ট্রাম্পের গলায় এখন ভিন্ন সুর, তিনি বলেন হুয়াওয়ে হতে পারে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বানিজ্য চুক্তির অংশ

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে। এর প্রভাব কি শুধু হুয়াওয়েতে সীমাবদ্ধ থাকবে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও গুগল। মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাচ সতর্ক করে বলেছে, হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় অ্যাপলের ব্যবসায় ঝুঁকি তৈরি হবে। সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আইফোন নির্মাতার বৈশ্বিক মুনাফা ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।

ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারকে সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জিবিএর ব্যবস্থাপনা অংশীদার জর্জ বার্কোভিজ বলেছেন, হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় গুগলের ওপর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বার্কোভিজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবা ব্যবহারের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে তারা চীনা অ্যাপ ও সেবা দেশটির বাইরে ছড়িয়ে দিতে উৎসাহী হবে। এতে চীনা প্রতিষ্ঠান বাইদু গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করবে। এ ছাড়া উবারের বিরুদ্ধে লেগে যাবে ডিডি। যেসব এলাকায় হুয়াওয়ের ভিত্তি শক্ত, সেখানে গুগল ও উবারের মতো সেবাগুলো বিপদের মুখে পড়বে। বার্কোভিজ বলেন, শুধু চীন নয়, যেখানে হুয়াওয়ে স্মার্টফোন বেশি বিক্রি হয়, সেখানে সমস্যা সৃষ্টি হবে। গুগলের সার্চের বদলে মানুষ বাইদুর সার্চ ব্যবহার শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যাপী তাদের সেবা বাড়ানোর সুযোগ করে দেবে। ভারত, আফ্রিকার বাজার ধরার চেষ্টা করবে তারা। অ্যান্ড্রয়েড সুবিধা না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও উন্নত দেশগুলোয় হয়তো বাজার হারাবে হুয়াওয়ে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। সেখানে অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে কম দামে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য লুফে নেবে ক্রেতারা।

চীনের বাজারে দামি হার্ডওয়্যার বিক্রেতা হিসেবে অ্যাপল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বদলা নিতে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি বন্ধ করে দিতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে অ্যাপলের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তবে স্বল্পমেয়াদের প্রভাবের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেন বার্কোভিজ। তাঁর ভাষ্য, হুয়াওয়ের ওপর আক্রমণের অনেক পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে, যা প্রাথমিক প্রভাবের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৫ মে ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য। অবশ্য গত সোমবার হুয়াওয়ের বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার পর হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না বলে জানায় গুগল। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় ভবিষ্যতের স্মার্টফোনগুলোয় গুগলের অ্যাপ হুয়াওয়ের ফোনে চলবে না এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওএস ব্যবহার করতে পারবে না।

২৩ মে অ্যান্ড্রয়েড ডটকম থেকে গুগল কর্তৃপক্ষ হুয়াওয়ে পি৩০ প্রো ও মেট এক্স ফোন দুটি সরিয়ে দিয়েছে। হুয়াওয়ে বলেছে, পরিস্থিতি আগেই আঁচ করতে পেরেছিল তারা। নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে তাই আগেই কাজ শুরু করেছিল। সেই অপারেটিং সিস্টেমের নাম ‘হংমেং’। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই এ কাজ করেছে হুয়াওয়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হুয়াওয়ের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমে হুয়াওয়ের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর বাদে ফোন কিনতে আগ্রহী হন না। এর আগে হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেন ঝেংফেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নেবেন তাঁরা। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোয় বলা হচ্ছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন ওএস বাজারে আনবে হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ের নতুন অপারেটিং সিস্টেম বা ওএস স্মার্টফোন, ট্যাব, পিসি, টিভি, অটোমোবাইল, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্যসহ সব ধরনের ডিভাইসে চলবে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ বলছে, হুয়াওয়ের নতুন ওএস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ সমর্থন করবে।

হুয়াওয়ের ওএসে অ্যান্ড্রয়েড ওএস ৬০ শতাংশ দ্রুতগতিতে কাজ করবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে গুগল, এআরএম, ইনটেল, কোয়ালকম ও ব্রডকম হুয়াওয়ের সঙ্গে কাজ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে এসডি অ্যাসোসিয়েশন, ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্সও হুয়াওয়ের পাশ থেকে সরে গেছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হলেও তারা নিজেদের ক্ষতি কি চাইবে? ইতিমধ্যে গুগল ও হুয়াওয়ে সমস্যা সমাধান করার ইঙ্গিত দিয়েছে। জাপানের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্যানাসনিক হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েও এখন উল্টো সুরে কথা বলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গলায় এখন ভিন্ন সুর। তিনি বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তির অংশ হতে পারে হুয়াওয়ে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী মি. গাও বলেন, বাণিজ্য বিষয়ে তাঁরা আলোচনার পথ এখনো খোলা রেখেছেন। তবে আলোচনা করতে হলে তাঁদের এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে এবং ভুল পদক্ষেপগুলো সংশোধন করতে হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ আলোচনার টেবিলে বসা না পর্যন্ত সমাধানের পথ নেই। ১০ মে চুক্তি ছাড়াই আলোচনা শেষ হওয়ার পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আর কোনো আলোচনা হয়নি। হুয়াওয়ে ডুবলে আরও অনেককে নিয়ে যে ডুববে, তা এখন অনেকেই আঁচ করতে পারছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো যত দ্রুত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে, প্রযুক্তিপ্রেমীরা ততটাই স্বস্তিতে থাকবেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

সোলাইমান সেলিম-জ্যোতি তিনদিনের রিমান্ডে

banglarmukh official

চাচা ডেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুরকে বিয়ে করেন ফরিদা

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

কাদেরের কললিস্টে নায়িকা-নেত্রীদের তালিকা ভাইরাল

banglarmukh official