নিউজ ডেস্ক:
দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ করিয়া বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি জেলার বিশাল জনপদের অধিকাংশ মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করিয়া থাকে নৌপথে।
এই নৌপথে দিবারাত্রি সর্বদাই ছোট-বড় যাত্রীবাহী লঞ্চ যাতায়াত করিতেছে। তদুপরি ঈদের মৌসুমে যাত্রী চলাচল করিতে শুরু করিয়াছে তিনগুণ; কিন্তু পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ হইতে জানা গিয়াছে, অযত্ন-অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই নৌপথে যাতায়াত কতকটা লাগামহীন ঘোড়ায় চড়িবার মতো ঝুিঁকপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। দীর্ঘ এই নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলিতে নাই বিকন বাতি, মেঘনার দুই পয়েন্টে ১৫ কিলোমিটার বিপজ্জনক পথে নাই পর্যাপ্ত মার্কার। বহুস্থানে রহিয়াছে বিপজ্জনক ডুবোচর। অনেক স্থানেই নাই বয়াবাতি। ফলে লঞ্চ চালাইতে হয় অনুমানের উপর ভর করিয়া।
এছাড়া বরিশালে মাত্র ৩টি পন্টুনে ঈদের বিশেষ সার্ভিস দেওয়া ২৩টি লঞ্চ ভিড়িয়া যাত্রী ওঠানামা করানো এক দুঃসাধ্য কাজ হইয়া পড়ে। পন্টুনে জায়গা না হওয়ায় একটি লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ ভিড়াইয়া যাত্রীদের ওঠানামা করানো হইতেছে। হাজার হাজার মানুষের এই ওঠানামার যে কোনো মুহূর্তে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা দেখা দিতে পারে। ওদিকে ভোলা-ঢাকা নৌপথের ভেদুরিয়া টানেলটি অস্বাভাবিক সরু। ওই স্থানে নাব্যতাও কম। ফলে জায়গাটি ঝুিঁকপূর্ণ। পটুয়াখালীর লোহাদিয়া এবং কারখানা নদীতে রহিয়াছে অসংখ্য ডুবোচর। যে কোনো সময় লঞ্চ আটকাইয়া চরম ভোগান্তি তৈরি হইতে পারে। অন্যদিকে পিরোজপুর-ঢাকা রুটে কচা নদীর টগরা এবং চরখালী পয়েন্টে ডুবোচরের কারণে ভাটার সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখিতে হইতেছে। ফলে ইতোমধ্যেই ঘরে ফেরা মানুষের বিড়ম্বনা শুরু হইয়াছে। লক্ষ করিলেই দেখা যাইবে সমস্যা একমুখী নহে।
এই নানাবিধ সমস্যার যে কোনো একটির মুখোমুখি হইলে যাত্রী সাধারণের ভোগান্তিই শুধু নহে, মৃত্যুর কারণ ঘটিতে পারে।
এই ঢাকা-দক্ষিণাঞ্চলের লম্বা রুটে ‘যাত্রীসেবা’ দিতে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হইতেছে; কিন্তু কেবল লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোকে আমরা সার্ভিস বলিতে পারি না। বরং পরিবহনে কিছুটা সুবিধা দেখা দিলেও, উহাতে যাতায়াত ঝুঁকি রহিয়াই যাইতেছে। নৌপথে উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলি মালিক-চালকদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহার দায় বহন করিবে কে? অথচ পথের যে অবস্থা তাহাতে ঈদের চাপে কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়া যাওয়া অস্বাভাবিক বলিয়া মনে হইতেছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিশেষ অনুরোধ জানাইব, এই দীর্ঘ যাত্রাপথ সুগম করিয়া দিন। প্রয়োজনীয় বয়া, বিকনবাতি, মার্কার স্থাপন করা কোনো জটিল অথবা দীর্ঘসূত্রতার বিষয় নহে। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। মনে রাখিতে হইবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মাত্র কয়েকদিনে এই পথে যাতায়াত করিবে।
প্রত্যেকটি মানুষের জীবনই মহামূল্যবান। সার্ভিস যদি দিতেই হয়, তাহা হইলে তাহা দিতে হইবে। উপরন্তু আমরা পরামর্শ দিব, এই নৌরুটে উদ্ধার তত্পরতার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি ব্যাপকভাবে বাড়াইতে হইবে