স্টাফ রিপোর্টার:
দু’দিনের সফরে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক যখন বরিশালে অবস্থান করছেন ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর অর্ধশত সদস্যের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলে নিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি রোডের কাজিপাড়া এলাকায় গভীর রাতের ওই দখলের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে উত্তেজনা শুরু হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিরোধীয় জমিতে টিন দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা ঘর নির্মাণ করে সেখানে আনসার সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে আছে। পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত না করে আনসার বাহিনী কর্তৃক জমি দখলের খবরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও হতবাক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মেট্রো পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে আনসার কর্তৃক জমি দখল করতে গিয়ে তারা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে যে প্রতিষ্ঠানের দোহাই দিয়ে আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দাবি তুলছে তার স্বপক্ষে বাহিনীর কর্মকর্তা কোন প্রমাণপত্র গণমাধ্যমকে দেখাতে পারেনি। একইসাথে তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের দখলের চিত্র ও তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরীর বগুড়া আলেকান্দা মৌজার জে.এল নং ৫০, খতিয়ান নং- ১৪৯৪, ১৪৯৫, ৩৮৫৬, ৩৮৫৭ দাগ এস.এ- ৪০৪, ১১০২ বি.এস- ২৫৩২, ডিপি- ১১৩৫২ এর ১ একর ১২ শতাংশ জমি ২০১১, ১২ ও ১৩ সালের বিভিন্ন সময় স্থানীয় মৃত: মোসা: আনোয়ারা বেগমের ওয়ারিশ মোঃ হাবিবুর রহমান মল্লিক গংদের কাছ থেকে ক্রয় করেন একই এলাকার পশ্চিম বগুড়া রোডের বাসিন্দা এসাহাক মুন্সীর ছেলে আমিনুল ইসলাম মুন্সী।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় কাজী মাহাতাব হোসেন জমির মালিকানা দাবি করে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাই কাজী মাহাতাব হোসেন ও কাজী আলতাফ হোসেন পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যার নং এমপি-১২৪/১৭ এবং ১৭৬/১৭। আদালত ওই মামলা দুটির সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হলে উভয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন বিবাদী আমিনুল ইসলাম মুন্সীর পক্ষে যায়।
এদিকে আদালতের রায়ের বিষয়টি বাদীরা উপেক্ষা করে দখলের পায়তারায় লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে তার অপর ভাই আনসার ভিডিপির রংপুর জেলা কমান্ড্যান্ট কাজী শাখাওয়াত হোসেন টুলুর প্রভাব খাটিয়ে বরিশাল আনসার ক্যাম্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় ১০ সদস্যের আনসার টিম নিয়ে জমি দখল করে বৃহস্পতিবার রাতে। তারা বিরোধীয় জমিতে টিন দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা কক্ষ তৈরী করে সেখানে অস্ত্রসহ অবস্থান নেয়।
আনসার ভিডিপির উপজেলা অফিসার আফজাল হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। ওই জমি সরকারি কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। সরকারি জমি হলে তার স্বপক্ষে প্রমাণপত্র দেখতে চাইলে তিনি আল হাদী ট্রেডিং নামক প্রতিষ্ঠানের আবেদন দেখান। তিনি আরো জানান, শাখাওয়াত হোসেন টুলুর নির্দেশ, অপরদিকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরিশাল জেলা কমান্ড্যান্টের কার্যালয় থেকে গত ১০ মে করা এক অফিস আদেশ সংবাদকর্মীদের দেখানো হয়। আদেশে উল্লেখ আছে, সৈনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবং ক্যাম্পের মান-সমুন্নত রাখার স্বার্থে বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্ন বর্ণিত সংস্থার ১০ জন অঙ্গীভুত আনসার সদস্যকে বদলী করে আনসার ক্যাম্পে বদলী করা হলো। উল্লেখিত বিরোধীয় জমি আনসার ক্যাম্প কিনা জানতে চাইলে তার কোন সদুত্তর উপস্থিত আনসার কর্মকর্তারা দিতে পারেননি। এদিকে অফিস আদেশে আনসার ক্যাম্পে বদলী লেখা হলেও আনসার সদস্যরা জানান, ওই জমির নিরাপত্তায় তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে।
জমির মালিক আমিনুল ইসলাম মুন্সী জানান, এ জমি আমার ক্রয়কৃত। বিবাদী পক্ষ জমি দখল দিতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করলেও আদালতের রায় আমার পক্ষে আসে। তারা আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে আনসারের ক্ষমতা ব্যবহার করে জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কবির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জমিটি আনসার সদস্যরা দখলে নিয়েছে। তারা সেখানে কাউকে প্রবেশ করতেও দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, জমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তবে ক্রয় সূত্রে জমির মালিক আমিনুল ইসলাম মুন্সী। তবে আনসার সদস্যরা এ জমিতে অবস্থান করার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।