ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার ভয়ে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। বিপদে উপকূলের মানুষের মাথা গোঁজার একমাত্র আশ্রয়স্থল এটি। কিন্তু বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রটি নিজেই সর্বনাশা বিষখালীর কড়াল গ্রাসে পড়েছে। ধীরে ধীরে ভাঙনের থাবায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে এর অস্তিত্ব।
উপকূলের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থলটি এখন বিষখালী নদীর ভাঙনের মুখে। ঝালকাঠি সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম-আশ্রয় কেন্দ্রের একাংশ।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে শুক্রবার (১০ মে) সকালে বিদ্যালয়ের একটি পানির ট্যাংক ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বেইসমেন্টের নিচের মাটিও সরে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে ভবনটি। আতঙ্কে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা এলেও সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মাত্র চার বছর আগে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর তীরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভবন নির্মাণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ভাঙন কবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয় লোকজন আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভবনটি ভাঙনের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে আজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়-কাম-আশ্রয় কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়া সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয় বাজারটিও। সরে গেছে ভবনের বেইসমেন্টের নিচের মাটি। সেখানে ঢুকে পড়েছে পানি। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটির তিন দিকেই বিষখালীর পানি থইথই করছে।
দেউরী গ্রামের হাসেম আলী হাওলাদার বলেন, ‘আবহাওয়ার সঙ্কেত শুনে আগে আশ্রয় নিতাম বিদ্যালয়ে। সরকার আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে এটি নির্মাণ করে। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ সঠিক হয়নি। নদীর পাশে নির্মাণ করায় আজ বিলীনের পথে এটি।
পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় রক্ষার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। এখন এটি নদীগর্ভে বিলীন হলে স্থানীয় লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়বে। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও সেটি শেষ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন শেল্টারটি রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঝালকাঠিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আতাউর রহমান বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্র রক্ষায় দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে।’