বরিশাল নগরের ৩০০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং ১০০ জন দুস্থ নারীর মাঝে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নতুন পোশাক দিয়েছেন ও ইফতারি করিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন উচ্ছ্বাস এর স্বেচ্ছাসেবকরা। উচ্ছ্বাসের এবারের প্রোগ্রামটি ছিলো ” ইদের খুশি,সিজন-৫” (ইদ পোশাকের অনাবিল আনন্দ, জীবনে আনুক বর্ণিল ছন্দ)।
গত শনিবার বিকেল ৪ ঘটিকায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু এবং নারীদের হাতে পোশাক ও ইফতার তুলে দেন উচ্ছ্বাসের স্বেচ্ছাসেবকরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম. অজিয়র রহমান, মেসার্স সালাম শিপিং লাইনস লিমিটেড এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর রিজিওনাল অফিসার দীপু হাফিজুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তর এর প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ এবং উচ্ছ্বাস সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রসেনজীৎ সাহা।
অনুষ্ঠানের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্ছ্বাসের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক। পোশাক বিতরণের সময় বরিশালের মাননীয় জেলা প্রশাসক “এস, এম, অজিয়র রহমান বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এমন ভালো কাজ করে তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উচ্ছ্বাস যে কাজ করছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
উচ্ছ্বাসের স্বেচ্ছাসেবকদের মতো সমাজের প্রত্যেকে যদি এগিয়ে আসতো, তাহলে সমাজটা হতো অনেক সুন্দর ” এছাড়াও উচ্ছ্বাসের সভাপতি-প্রসেনজীৎ সাহা বলেন, প্রতিবছর ইদে সবাই নতুন জামাকাপড় পরে কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নতুন পোশাক পরা সম্ভব হয়ে উঠে না, আমরা চেষ্টা করি এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে। আমরা শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে অনেক খুশি। আমরা সামনের দিনগুলিতেও ভালো কাজ করে যাব। ঈদে নতুন জামা পেয়ে বরিশালের বঙ্গবন্ধু কলোনির লামিয়া (বয়স ১১) বলে, আমি ঈদে নতুন জামা পাইয়া অনেক খুশি হইছি, কারণ আমার আব্বা বলছিলো এবার ইদে কিছু দিতে পারমু না। বঙ্গবন্ধু কলোনী নিবাসী আরেক শিশু সীমা(৯)বলেছিল,”এইবার আমার ঈদটা অনেক মজা হইবো,নতুন জামা গায় দিয়া ঘুরমু।” শুধুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুই নয় উচ্ছ্বাস সাহায্য করেছে দুস্থ নারীদেরও।
প্রায় ১০০ জন মহিলাদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছে। ইফতার পেয়ে খুশি হয়ে কেয়া আক্তার বলেন, “স্যারেরা আমাগো বাচ্চাদের ঈদের পোশাক দিছে ,আমাগো ইফতারি দিছে তাই আমরা অনেক খুশি। এমন একজন-দুজন নয়,হাজারো সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আছে আমাদের চারপাশে। তাদের দুঃখ -ক্লেশ দূরীভূত করার প্রয়াসে এক অনুকরণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে উচ্ছ্বাস এর একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। তারা তাদের বিবেক ও মননকে কাজে লাগিয়ে ২৫ শে মে ২০১৯, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩০০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাঝে পোশাক ও ইফতার ও ১০০ জন দুস্থ নারীর মাঝে ইফতার বিতরণ করে।
এ মহৎ কাজটি করা একদিনে সম্ভব হয়ে ওঠেনি,প্রায় ১ মাস যাবৎ বরিশাল শহরের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক,বঙ্গবন্ধু উদ্যান,এিশ গোডাউন,লঞ্চঘাট সহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য সংগ্রহ ও নিজেদের সঞ্চিত অর্থ গুছিয়ে চেষ্টা করে এসেছে শুধু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। ঈদের খুশি,সিজন -৫ এ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাণে যে খুশি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে, সেটাই উচ্ছ্বাস কর্মীদের চরম সার্থকতা।
বর্তমানে উচ্ছ্বাসের ভলেন্টিয়ারের সংখ্যা ১০০০ এর ও বেশি, ভলেন্টিয়ারদের মধ্যে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,সরকারী বি এম কলেজ, হাতেম আলী কলেজ, মহিলা কলেজের,অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা সহ আরো অনেকে। উচ্ছ্বাস মূলত দুস্থ ও অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করে পাশাপাশি উচ্ছ্বাসের অঙ্গ সংগঠন “স্বপ্নপূরণ বিদ্যানিকেতন” মূলত সুবিধাবঞ্চিত ১৮০ জন সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রছাত্রীকে এবং ৮০ জন নিরক্ষর নারীকে বিনামূল্যে পাঠদান করায়। মানসম্মত পাঠদানের পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধন করাই “স্বপ্ন পূরন বিদ্যানিকেতন” এর মূল লক্ষ্য।