বরিশাল বিভাগে বিভিন্ন বয়সী এক হাজারেরও অধিক এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর পরিবার-পরিজন কিংবা আত্মীয়-স্বজন ছাড়াই এবারের ঈদুল ফিতর পালন করতে যাচ্ছে। তবে বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-স্বজন সাথে নেই তাতে কি হয়েছে। স্বাভাবিক অন্য ১০টি পরিবারের মতোই তাদের ঈদ উদ্যাপন যাতে আনন্দময় ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সেলক্ষ্যে এরইমধ্যে আগাম প্রস্তুুতি নিয়ে রেখেছে সমাজসেবা অধিদফতর।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিতৃ-মাতৃহীন বা পিতৃহীন এতিম শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও তাদের উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সরকারীভাবে শিশু পরিবার পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে পাঁচ থেকে নয় বছরের মধ্যকার শিশুদের যেমন এখানকার পরিবারে আশ্রয় মেলে, তেমনি ১৮ বছর হলে এ পরিবার ত্যাগ কারাটাও তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় বরিশাল বিভাগে এরকম মোট নয়টি শিশু পরিবার রয়েছে। যারমধ্যে পাঁচটি মেয়েদের জন্য ও চারটি ছেলেদের জন্য। সবমিলিয়ে এখানে এক হাজার ৫০টি আসন রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মোট আসনের অনুকূলে ৮৮১ জন এতিম শিশু-কিশোর রয়েছে শিশু পরিবারগুলোতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত আগৈলঝাড়ার সেরাল গ্রামে “শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত” বৃদ্ধাশ্রমে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছয়জন বৃদ্ধ রয়েছেন।
অন্যদিকে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একশ আসনের বিভাগীয় ছোটমনি নিবাসে রয়েছে পিতৃ ও মাতৃ পরিচয়হীন ২২জন শিশু। সাত বছর বয়স পর্যন্ত পরিত্যক্ত ও পাচার থেকে উদ্ধারকৃত এসব শিশুদের ছোটমনি নিবাসে মাতৃস্নেহে প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও খেলাধুলার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ৫০ আসনের বরিশাল বিভাগীয় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রায় ১৫জন মেয়ে রয়েছে। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা বিপন্ন শিশুদের জন্য বরিশাল ও বরগুনা জেলায় অবস্থিত চারটি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩৫৮ জন শিশু-কিশোর রয়েছে। এর বাইরে বিভাগের একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১১০টি আসনে ছয় থেকে ১২ বছর বয়সী ৬৩জন শিশু রয়েছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক শাহ পারভীন বলেন, এসব শিশুদের শুধু ভরণ-পোষণই নয়, প্রতিটি উৎসবেই তারা আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, সব শিশুকে ঈদের আনন্দ পাইয়ে দিতে প্রতিবছর এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের নতুন পোশাক ও জুতা দেওয়া হয়। প্রতিদিনের চেয়ে ঈদের দিন আরও উন্নতমানের খাবার পরিবেশন ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ ইকবাল কবির বলেন, পুরো রমজান মাসজুড়ে শিশু পরিবারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজন ও ঈদের পোশাক দেওয়ার কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বিপিএম বেবী হোমের শিশু ও সেরালের বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতদের মধ্যে ঈদের নতুন পোষাক, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।