বরিশালের বানারীপাড়ায় মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করা শিক্ষার্থীরা জানেন না কে, বা কারা তাদের নামে অনলাইনে আলিম শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করে রেখেছেন। পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে না পেরে তারা সোম ও মঙ্গলবার এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ধরে রাখার জন্য উপজেলার বেশীরভাগ মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ দাখিল ও আলিম পরীক্ষা শেষে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ফলাফল ঘোষণার পরপরই তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের রোল,রেজিষ্ট্রেশন ও মোবাইল নম্বর (কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যের মোবাইল নম্বর) দিয়ে গোপনে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে রাখেন। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বানারীপাড়া উপজেলায় ৯ টি দাখিল,৭টি আলিম ও ৩ টি ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীকে নিজ প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার জন্য প্রথমে তাদের মোটিভেশন করে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হলে কিংবা শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রস্তাবে রাজি না হলে সু-চতুরতার আশ্রয় নিয়ে তারা বিকল্প পথ হিসেবে পাস করা ওই শিক্ষার্থীদের রোল,রেজিষ্ট্রেশন ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে গোপনে ভর্তির আবেদন করে রাখেন। বানারীপাড়ার আহম্মদাবাদ হোসাইনিয়া আলিম মাদ্রাসার দাখিল পাস করা শিক্ষার্থী মো. রনি,মো. আজিজুল হক,মো. রিফাত মৃধা ও মো. বায়েজিদ রোববার বানারীপাড়া পৌর শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে পছন্দের তালিকায় চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজ সহ ৫ টি কলেজের নাম উল্লেখ করে অনলাইনে ভর্তির ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখেন অনলাইনে এর আগেই তাদের ভর্তির আবেদন করা হয়েছে।
ফলে ওই শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের কলেজে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে না পেরে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একইভাবে বানারীপাড়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করা শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বী প্রতারিত হয়ে মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলমকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে ওই মাদ্রাসাগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি সর্তক করেন।
একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে। এদিকে আহম্মদাবাদ হোসাইনিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন এবার তার মাদ্রাসা থেকে ২৮ জন দাখিল পরীক্ষার্থী পাস করেছে। যাদের কাছে মাদ্রাসার বেতন সহ অন্যান্য টাকা পাওনা রয়েছে তাদের ওই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর মার্কশীট আটকে রাখার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
বানারীপাড়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসাইনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও অপর প্রান্ত থেকে কোন প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন দাখিল পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে সেজন্য দ্রুত তাদের মার্কশীট দিয়ে দেওয়ার জন্য মাদ্রাসাগুলোতে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ ব্যপারে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। তাদের মার্কশীট আটকে দিয়ে এবং না জানিয়ে গোপনে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে রাখা অমার্জনীয় অপরাধ।