গত ১০ মে ২০১৯ তারিখে মানবপাচারকারী প্রতারক চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পথে লিবিয়া হতে ইউরোপ গমনকালে তিউনিসিয়া উপকূলের কাছে ভূমধ্য সাগরে নৌকা ডুবিতে ৩৭ জন বাংলাদেশী নিখোঁজ হয়। অবৈধ পথে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে এসকল পরিবারের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এসকল পরিবার এখন নিঃস্ব। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারক চক্র ইউরোপে মানব পাচারে তিনটি রুট ব্যবহার করছে এবং অবৈধভাবে কয়েকটি দেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। রুটগুলো হচ্ছে (১) বাংলাদেশ হতে তুরস্কে গমন, তুরস্কের ইস্তাম্বুল হতে লিবিয়া গমন করে। (২) বাংলাদেশ হতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গমন-ভারত হতে শ্রীলংকায় গমন (৪-৫ দিন অবস্থান)-তুরস্কে গমন (৪-৫ দিন অবস্থান)- অতঃপর লিবিয়ায় গমন করে। (৩) বাংলাদেশ হতে দুবাই (৭-৮ দিন অবস্থান)- জর্ডান গমন (৭-৮ দিন অবস্থান)- ত্রিপলীতে (লিবিয়া) গমন করে। লিবিয়া হতে ভূমধ্যসাগর হয়ে তারা পর্যায়ক্রমে ইউরোপে বিভিন্ন দেশে গমনের চেষ্টা করে।
২। উক্ত অনাকাংখিত প্রাণ হানির ঘটনায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক চাঞ্চল্যতা এবং উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়। অবৈধপথে বিদেশে প্রেরণকারী সকল দালাল সদস্যকে গ্রেফতারের জন্য র্যাব ফোর্সেস ডিজি মহোদয়ের নির্দেশে র্যাব অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতারক চক্রের ০৩ জন সক্রিয় সদস্যকে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে গ্রেফতার করেন। এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় ২৪ মে ২০১৯ তারিখে ২২৩০ ঘটিকায় র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর খান সজিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ আভিযানিক দল মোঃ রফিকুল ইসলাম (৩২), পিতা- মোঃ জসিম উদ্দিন, সাং- কুশোট, থানা- কাহারোল, জেলা- দিনাজপুরকে গাজীপুর জেলার রাজাবাড়ী বাজার হতে গ্রেফতার করে। মোঃ রফিকুল ইসলাম ২০০৭ হতে ২০১৭ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন এবং দেশে ফিরে গাজীপুরে গ্রামীন টেলিকমের ব্যবসা শুরু করেন। টেলিকম ব্যবসার আড়ালে সে অবৈধভাবে বিদেশে প্রেরণের নামে দালাল চক্রের হয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে। সে বিদেশে গমনের পূর্বে মোঃ হাকিম (৪৫) নামক দুঃসম্পর্কের চাচার সাথে তার নিজ এলাকা দিনাজপুরে পরিচিত হন। বর্তমানে মোঃ হাকিম লিবিয়া প্রবাসী। লিবিয়ায় অবস্থানকালীন সময়ে মোঃ রফিকুল ইসলাম দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধ পথে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা সাধারণ মানুষের নিকট হতে গ্রহন করেন। মূলত বিদেশে পাঠানোর নামে নিজস্ব একাউন্টে টাকা জমার পর তা মোঃ হাকিমের নির্দেশে উক্ত অর্থ বিভিন্ন একাউন্টে প্রেরণ করেন। ২-৩টি ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে মোঃ রফিক অবৈধভাবে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের নিকট হতে টাকা গ্রহন এবং প্রদানের কাজে হাকিমকে সহযোগিতা করে যার বিস্তারিত প্রমাণ পাওয়া যায় তার ব্যাংক লেনদেনের স্টেটমেন্টের মাধ্যমে। মোঃ রফিকুল ইসলাম অল্প পরিমাণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে এবং অধিক পরিমাণের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করেন। ভিকটিম মৃত মোঃ রাজিব (২৫), পিতা- ইয়ার মোহাম্মদ খান, সাং- নলতা, থানা- নড়িয়া, জেলা- শরিয়তপুর লিবিয়া হতে ইউরোপে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে তার পরিবারকে সর্বশান্ত করে ১,৭০,০০০/- টাকা গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে মোঃ রফিকুল ইসলাম গ্রহন করে। এরকম অনেক ব্যক্তির নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা তিনি গ্রহন করে যা প্রকাশ্য প্রতারণা এবং ধোকাবাজি। মোঃ রফিকুল ইসলাম তার এ সকল কর্মকান্ড প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
৩। যে সকল ভিকটিম প্রতারিত হয়েছে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য র্যাব কাজ করছে। ভবিষ্যতে র্যাবের এ ধরণের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।