29 C
Dhaka
এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম প্রচ্ছদ

সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়?

১। যে অর্থ/সম্পদে যাকাত আসে সে অর্থ/সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আদায় করা ফরয। মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোনো আসবাবপত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যায়।

২। যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বতসর ধরা হবে। যখনই কেউ নেছাব পরিমান অর্থ/সম্পদের মালিক হবে তখন থেকেই যাকাতের বতসর শুরু ধরতে হবে।

৩। সোনা রূপার মধ্যে যদি ব্রঞ্জ, রাং, দস্তা, তামা ইত্যাদি কোনো কিছুর মিশ্রণ থাকে আর সে মিশ্রণ সোনা রুপার চেয়ে কম হয়, তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করা হবে-মিশ্রিত দ্রব্যের কোনো ধর্তব্য হবে না। আর যদি মিশ্রিত দ্রব্য সোনা রুপার চেয়ে অধিক হয়, তাহলে সেটাকে আর সোনা রুপা ধরা হবে না। বরং ঐ মিশ্রিত দ্রব্যই ধরা হবে।

৪। যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ, ওয়াজিব হওয়ার সময় সোনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মুল্য ধরতে হবে তখনকার (ওয়াজিব হওয়ার সময়কার) বাজার দর হিসাবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।

৫। শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মাসয়ালা হল-যারা কোম্পানীর লভ্যাংশ অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন শেয়ার বেচা-কেনা করে লাভবান হওয়া এর উদ্দেশ্য, তারা শেয়ারের বাজার দর ধরে যাকাত হিসাব করবেন। আর শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানী থেকে লভ্যাংশ অর্জন করা এবং সাথে সাথে এ উদ্দেশ্যও থাকে যে, শেয়ারের ভাল দর বাড়লে বিক্রিয় করে দিব, তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দরের যে অংশ যাকাতযোগ্য অর্থ/সম্পদের বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে, অবশিষ্ট অংশের উপর যাকাত আসবে না।উদাহরন স্বরূপ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু (বাজার দর) ১০০ টাকা, তার মধ্যে ৬০ ভাগ কোম্পানীর বিল্ডিং, মেশিনারিজ ইত্যাদির বিপরীতে, আর ৪০ ভাগ কোম্পানীর নগদ অর্থ, কাঁচামাল ও তৈরী মালের বিপরীতে, তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ, ১০০ টাকার ৬০ ভাগ বাদ যাবে। কেননা সেটা এমন অর্থ/সম্পদের বিপরীতে যার উপর যাকাত আসে না । অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে।

৬। যাকাতদাতার যে পরিমান ঋণ আছে সে পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত হিসাব করবে। ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেছাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরয হবে না। তবে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী সাহেব বলেছেন, যে লোন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা যে লোন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরী তৈরী করা হয় বা মিল ফ্যক্টরীর মেশনারীজ ক্রয় করা হয়, এমনিভাবে যেসব লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না- যেমনঃ বাড়ি ও ফ্যক্টরী বা ফ্যক্টরীর মেশিনারিজের মূল্যের উপর যাকাত আসে না-এসব লোন যাকাতের জন্য বাধা নয় অর্থাৎ, এসব লোনের পরিমান অর্থ যাকাত থেকে বাদ দেয়া যাবে না। হাঁ যে লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার উপর যাকাত আসে, যেমনঃ লোন নিয়ে ফ্যাক্টরীর কাচামাল ক্রয়, এরুপ ক্ষেত্রে এ লোন পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে। মুফতী তাকী উছমানী সাহেব তার এ মাসলাটিকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, অতএব তার এ মতটি গ্রহন করার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে।

৭। কারও নিকট যাকাতদাতার টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে। পাওনা তিন প্রকারঃ

(ক) কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছে কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য বাকী রয়েছে। এরূপ পাওনা কয়েক বছর পর উসুল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমান হয় যাতে যাকাত ফরয হয়, তাহলে অতীত বতসরসমুহের যাকাত দিতে হবে। যদি একত্রে উসূল না হয়-ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয়, তাহলে ১১ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। এর চেয়ে কম পরিমাণ উসূল হলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে না-তবে অল্প অল্প করে সেই পরিমাণে পৌছে গেলে তখন ওয়াজিব হবে। আর যখনই ওয়াজিব হবে তখন অতীত সকল বতসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি এরুপ পাওনা টাকা নেছাবের চেয়ে কম হয় তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজেব হবে না।

(খ) নগদ টাকা ঋণ দেয়ার কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রি করার কারণে পাওনা নয় বরং ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, চাষাবাদের গরূ ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে, এরূপ পাওনা যদি নেছাব পরিমান হয় এবং কয়েক বছর পর উসূল হয় তাহলে ঐ কয়েক বতসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হবে ততক্ষন যাকাত ওয়াজিব হবে না। যখন উক্ত পরিমাণ উসূল হবে তখন বিগত বতসর সমূহের যাকাত দিতে হবে।

(গ) মহরের টাকা, পুরষ্কারের টাকা, খালা তালাকের টাকা, বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনা থাকলে এরূপ পাওনা উসূল হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব হয় না। উসূল হওয়ার পর ১ বতসর মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাতের হিসাব শুরু হবে। পাওনা টাকার যাকাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযোজ্য হবে যখন এই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযোগ্য অন্য কোনো অর্থ/সম্পদ না থাকে। আর অন্য কোনো অর্থ/সম্পদ থাকলে তার মাসলা উলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিবেন।

৮। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নেই, এরূপ ঋণের উপর যাকাত ফরয হয় না। তবে পেলে বিগত সমস্ত বতসরের যাকাত দিতে হবে।

৯। যৌথ কারবারে অর্থ নিয়োজিত থাকলে যৌথভাবে পূর্ণ অর্থের যাকাত হিসাব করা হবে না বরং প্রত্যেকের অংশের আলাদা আলাদা হিসাব হবে।

১০। যেসব সোনা রূপার অলংকার স্ত্রীর মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে স্বামীর সম্পত্তি ধরে হিসাব করা হবে না বরং সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি। আর যেসব অলংকার স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেয়া হয়, মালিক থাকে স্বামী, সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে হিসাব করা হবে। আর যেগুলোর মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তা স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। যেসব অলংকার স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ থাকে তৈরী বা যেগুলো বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে, সেগুলো স্ত্রীর সম্পদ বলে গণ্য হবে। মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মায়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে। আর শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়। নাবালেগা মেয়েদের বিয়ে-শাদি উপলক্ষে তাদের নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালেগা ছেলে কিংবা মেয়ের বিবাহ শাদীতে ব্যয়ের লক্ষ্যে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানো হয় সেটার মালিক তারা। অতএব সেগুলো পিতা/মাতার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং পিতা/মাতার যাকাতের হিসাবে সেগুলো ধরা হবে না। আর বালেগ সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরী করে রাখলে বা টাকা লাগালেই তারা মালিক হয়ে যায় না যতক্ষণ না সেটা সে সন্তানের দখলে হয়। তাদের দখলে দেয়া হলে তারা মালিক, অন্যথায় সেটার মালিক পিতা/মাতা।

১১। হিসাবের চেয়ে কিছু বেশি যাকাত দিয়ে দেয়া উত্তম। যাতে কোনো রূপ কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেটুকু যাকাত না হলেও তাতে দানের ছওয়াব তো হবেই।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official