স্টাফ রিপোর্টার//তানজিম হোসাইন রাকিব:
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ইতিমধ্যে সারা দেশে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত বিপণি বিতানগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা।
প্রতি বছরের মতো বাহারি ডিজাইনের নানা নামের সব পোশাকে জমে উঠেছে বরিশালের বিপণি বিতান গুলোতে কেনাকাটা। মাছাক্কালী,আনুসকা,চুন্ডি,ইস্তার মতো এবারের ঈদ বাজারও সারা-রা ও গারা-রা নামের আকর্ষণীয় পোশাকের কবলে। কিন্তু বরিশালের ঈদ বাজারে এবার কদর বেশি ইন্ডিয়ান লং গাউনের!
প্রতি বছর ২০ রমজানের পরে ঈদ বাজারে ক্রেতাদের দেখা মিললেও এবার ১৫ রমজান থেকেই বরিশালের পোশাকের বাজার গুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ফুটপাত থেকে বহুতল ভবনের সব মার্কেটেই চোখে পড়ে দোকানিদের ব্যাস্ততা।
তরুণীরা বাজারে এসে সারা-রা ও গারা-রা নামের পোশাকের পাশাপাশি খুঁজছে ইন্ডিয়ান লং গাউন। বিক্রেতারা বলছেন- ‘বরিশালের বাজার ইন্ডিয়ান লং গাউনের বেচা-বিক্রিই বেশি হচ্ছে’।
চকবাজার পোশাকের দোকান পালকী এর সেলসম্যান মো: আসিফ জানান, বাজারে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে সারা-রা, গারা-রা, গাউন, টপস, মাছাক্কালী,আনুসকা,চুন্ডি,ইস্তা ও লেহেঙ্গা রয়েছে। তিনি আরো জানান, কাপড় ও ডিজাইন ভেদে সারা-রা ১৪ হাজার,গারা-রা ১৬ হাজার, মাছাক্কালী ১২ হাজার, আনুসকা ১৪ হাজার , গোল জরজেট ২৫ শত থেকে ৪ হাজার, গাউন ২৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সারা-রা,গারা-রা,মাছাক্কালী,আনুসকা সহ এসব পোশাকের দাম দোকান ও নকশা ভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ফুটপাত থেকে বহুতল ভবনের সব মার্কেটেই চোখে পড়ে দোকানিদের ব্যাস্থতা। মৌ তাইতী পয়েন্ট এর ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বেচাকেনা ভালো তবে গাউনের বেচা-বিক্রি বেশি।
বরিশাল কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, মূলত ঈদে পোশাক কেনাকাটা করার আনন্দই আলাদা। বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় পোশাকের কদরই বেশি দেখছি। তবে এবার বান্ধবীরা সবাই মিলে লং গাউন কিনেছি।
অপরদিকে শাড়ির দোকানে কোন ভিড় নেই নারীদের। বরিশালের চকবাজারের শাড়ির দোকান স্বদেশী’র নিখিল দাস জানান,এবার ঈদে বেচা কেনা মোটেও ভালো না। শাড়ির চাহিদা নেই । তবে ঈদে মার্কেটে এসছে কাতান, সিল্ক, বেলগা কাতান ও জামদানি । এসব শাড়ি ১২শ থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঈদ বাজারের বিপরীত অংশে ছেলেদের জন্য রয়েছে, বাহারি ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জী, পাঞ্জাবির সমারোহ। তবে গজ কাপড়ের দোকানে ভিড় নেই সবাই রেডিমেট কাপড় এর দিকেই ছুটছে বলে জানান কাটপট্রি রোড এর সৈয়দ ক্লথ স্টোর এর অক্ষয় বনিক। তবে এবারের চেয়ে আগের বার বেচাকেনা ভালো ছিল বলে জানান অনেক রেডিমেট কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়িরা।
গরমের কারণে হালকা নকশায় পাতলা বা সুতি কাপড়ের কদরই বেশি । এ সব পাঞ্জাবির মধ্যে সুতি পাঞ্জাবি ১৮শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, জর্জেট পাঞ্জাবি দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, সিল্ক পাঞ্জাবি (ভারতীয়) ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, জামদানি পাঞ্জাবি ৭শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা, টিস্যু পাঞ্জাবি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।
প্রতিবারের মতো এবারও শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ পোশাকের আকর্ষণ। তবে ক্রেতারা জানিয়েছেন গরমের কারণে হালকা নকশায় পাতলা বা সুতি কাপড়ের মধ্যেই নিজের সন্তানের জন্য পোশাক কিনছেন তারা।
চকবাজারের বরিশাল সু হাউজের স্বত্বাধীকারী হাজী জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, বেতন আগে হওয়ায় গত বছরের থেকে এবার বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে ছেলেদের প্রথম পছন্দ চায়নার বিভিন্ন জুতা আর মেয়েরা এবার দেশি পন্য নিপ্পুন জুতা বেশি কিনছে। বাচ্চাদেরও জুতা বেশি বিক্রী হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ছেলেদের জুতা দাম ৮শ থেকে ১৫শ,মেয়েদের ৯শ থেকে ১৫ শ ,আর বাচ্চাদের ৬শ থেকে ১৩শ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাবে।
এদিকে পোশাক কেনার পাশাপাশি কসমেটিকস, ওড়না-হিজাব ও জুতোর দোকানে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের।