এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

করোনা সন্দেহে বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী, পাশে দাঁড়ালো পুলিশ

বগুড়া শেরপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন তারই স্ত্রী। এরপর প্রতিবেশীর বাড়িতেও আশ্রয় না পেয়ে শেষপর্যন্ত ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ বৃষ্টির মধ্যেই বাড়ির পাশের মাঠে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে থাকেন। এতে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাটি উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া শিমলা গ্রামে। ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, রংপুর থেকে কয়েকবছর আগে এখানে এসে বসতি গড়েন বৃদ্ধ বেলাল হোসেন। তাই গ্রামের লোকজন তাকে রংপুইরা বলে চেনেন এবং ডাকতেন। অভাবের সংসার। দিনমজুরির কাজ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। এলাকায় কাজ না থাকলে বাইরের জেলা-উপজেলায় গিয়ে কাজ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কাজের সন্ধানে মাসখানেক আগে ঢাকার মানিকগঞ্জে যান। সেখান থেকে গত ১৫জুন বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকেই ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বেলাল হোসেন। এরপর থেকে স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। এক পর্যায়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন স্ত্রী। একইসঙ্গে তার ঘরেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে শুরু হয় অবিরাম বৃষ্টি। শেষমেষ উপায় না দেখে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে সামান্য সময়ের জন্য আশ্রয় চান। কিন্তু সেখানেও আশ্রয় মেলেনি। পরে বাড়ির পাশের মাঠে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ বেলাল হোসেন বলেন, নিজের স্ত্রী বাড়ি বের করে দেওয়ার পর কোথাও আশ্রয় না পেয়ে ভেবেছিলাম  বৃষ্টিতে ভিজেই আমার মরণ হবে। কিন্তু হঠাৎ সরকারি লোকজন আমার সামনে হাজির হন। পরে আমার মতো একজন হতভাগা ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

বৃদ্ধের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামীর করোনা হয়েছে বলে গ্রামের লোকজন বলাবলি করছিলো, তার সঙ্গে থাকলে আমাদেরও বাড়ির মধ্যে বন্ধ করে রাখা হবে; ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে আমরাও মারা যাবো। তাই এই কাজটি করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

বিশালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, ওই বৃদ্ধের করোনা হয়েছে সন্দেহ করে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটি জানার পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির সঙ্গে কথা বলি। পরে তারা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

শেরপুর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই অমানবিক ঘটনাটির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমার দায়িত্ববোধ থেকেই এই কাজ করেছি। এছাড়া পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, মহামারি করোনাকালে এটি তার আরেকটি বাস্তব প্রমাণ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী শেখ বলেন, ওই বৃদ্ধকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের বলেন, জ্বর-সর্দি হলেই করোনা হয়েছে -এমন ধারণা সঠিক নয়। রোগীর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের আলোকেই কেবল রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বৃদ্ধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বগুড়া পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official