দাদনের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বরগুনার পাথরঘাটায় এক জেলেকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ট্রলার মাঝি জাকির হোসেন রবিবার (৯ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলে শ্রমিক মো. জসিমকে শিকলে দিয়ে বেঁধে মারধর করেন। জেলে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এ ঘটনা দুঃখজনক। জেলে মো. জসিম পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হাজিরখাল এলাকার বাসিন্দা।
জসিম জানান, চার মাস আগে তিনি পাথরঘাটার ট্রলার মালিক নজরুলের মালিকানাধীন ট্রলারে জেলে শ্রমিক হিসেবে সাগরে মাছ ধরতে আট হাজার টাকা দাদন গ্রহণ করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে মাছ ধরায় সরকারি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ট্রলারের মাঝি জাকির সাগরে যেতে তাড়া দেন। কিন্তু তিনি যেতে রাজি হননি। রবিবার সকালে বাজারে আসলে জাকিরের সাথে জেলে জসিমের দেখা হয়। এ সময় জসিমকে লঞ্চঘাটের সায়াদত নগরের ট্রলারের কাছে নিয়ে আসেন মাঝি জাকির। জাকির টাকা ফেরত চাইলে জসিম ১৫ দিন সময় চান। কিন্তু সময় না দিয়ে অন্যান্য জেলেদের সহায়তায় জাকিরকে শিকল দিয়ে বেঁধে মারধর করেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলে জসিমকে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে ট্রলার মালিকের ছোটভাই আল-আমিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে জসিমকে মুক্ত করে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠান।
ওই ট্রলার মালিক নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৌসুমে মাঝির দায়িত্বেই ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে যায়। জেলে শ্রমিক জোগাড় ও তাদের দাদন দেওয়াসহ জেলেদের সব দায়-দায়িত্ব থাকে মাঝির ওপর। এ ঘটনা আমি শুনে তাৎক্ষণিক ছোটভাইকে পাঠিয়ে জসিমকে মুক্ত করে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। মাঝি জাকির যে ঘটনা ঘটিয়েছে জেলে সমিতির মাধ্যমে এর বিচার হবে।
মাঝি জাকির হোসেন বলেন, জসিম আরো কয়েকটি ট্রলারের দাদন নিয়েছে খবর পেয়েছি। আমাদের টাকা ফেরত চাইলে দিচ্ছিল না। তাকে ট্রলারের স্টাফদের কাছে রেখে আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম। কে বা কারা বেঁধেছে আমি জানি না।
পাথরঘাটা জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি জানান, জেলে সমিতিতে ভুক্তভোগী জেলে অভিযোগ করলে সত্যতা মিললে মাঝির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের বলা হয় শূন্যভাগী। উপজেলায় এমন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। কোনো পূঁজি ছাড়া শ্রম দিয়ে মাছ ধরে আহরিত লভ্যাংশের বিনিময়ে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করেন তারা। মৌসুম শুরুতে শ্রমিকগণ ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাদন হিসাবে পরিবারের খাই-খরচা হিসেবে নিয়ে থাকে। মৌসুম শেষে তাদের মজুরি থেকে কেটে নেয় মালিক। মৌসুম শেষ হয়নি, ভরা মৌসুমে সাগরে চলছে সরকারঘোষিত ৬৫ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। তাই কোনো শ্রমিকের ওপর এমন আচরণ দুঃখজনক।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ সিকদার বলেন, ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।