স্টাফ রিপোর্টার// শাওন অরন্য:
একটা ইলেক্ট্রিক স্কুটি কিনেছিলাম। প্রতিদিন বাসের ভিতরে ধাক্কা কিংবা রিকশাওয়ালা মামাদের সাথে ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি আর ভাল লাগছিল না।
কিনেই ফেললাম স্কুটিটা। মেয়েদের জন্য এযুগে এইটিই মনে হয় একমাত্র হয়রায়নি ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা। ভালই চলছিল সব।
ইলেক্ট্রিক স্কুটির ব্যাটারির ওয়ারেন্টি ছিল ৬ মাস৷ এর মধ্যেই শুরু হলো ঝামেলা। রাস্তার মাঝখানে অফ হয়ে যায়, এক চার্জে যেত ৩০/৩২ কিমি আর আগে যেত ৫০ কি.মি র মতো।
স্কুটির কোম্পানির শো রুমে গিয়ে বসে থাকি, ওরা বলে ঠিক আছে। যেহেতু অফিস করতাম, তাই স্কুটির কোন প্রব্লেম হলে সেটা নিয়ে ওদের শো রুমে যেতে যেতে ২/৩ দিন। শো রুম অন অফের সাথে আমি ঠিক মিলাতে পারছিলাম না।
এইভাবে ৫ মাসের শেষের দিকে দেখি স্কুটি ২০/২২ কিমি যায় এক চার্জে। মাথা পুরোই নষ্ট। ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে ৬ মাসের মাথায় ই যদি স্কুটির এমন হয়ে যায় তাহলে মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ার কথা।
৬ মাস হওয়ার আগেই শো রুমে গিয়ে সব জানালাম, কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলাম। ওরা জানালো, ওদের মেকানিক এসে সব দেখবেন। আমি শো রুমে গেলাম। মেকানিক সব দেখলো, বললো ব্যাটারি আমরা একবার চার্জ করে দিচ্ছি, দেখেন ঠিক হয়ে যাবে। ১২০/- টাকা দেয়।
কেন ভাই? এটা তো আমার ওয়ারেন্টির মধ্যে।
-না আপা দিতে হবে, কাস্টমার কেয়ার থেকে বলেছে। পরে জানতে পারি এটা মিথ্যা বলেছে।
আমি সব কথা রেকর্ড করে রাখছিলাম যেটা উনারা জানতেন না। পরে ১২০/- টাকা দিলাম। স্কুটি ফেরত নিয়ে এসে পরের দিন দেখি আবার সেই সমস্যা। কাস্টমার কেয়ারে জানাতে উনারা বললেন, আপনি আগামীকাল আবার আসুন৷ আবার অফিস ফেলে সকালে গেলাম।
শো রুমের লোকের কথা, আজকে ৬ মাস হয়ে গেছে, আমরা কিছু করতে পারবো না। মানে ওরা চেয়েছিল কোন মতে ৬ মাস যাক তাহলেই আর ওদের দায় নেই।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মামলা করলাম। কিছুদিনের ভিতরেই ডাক পড়লো৷ গেলাম, কোম্পানির লোকও এলো। কিছুতেই স্বীকার করে না তারা। অনেক যুক্তিতর্ক আর আমার রেকর্ড করা প্রমাণের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইলেন সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী ম্যাডাম। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্তের আগে ম্যাডাম আমাদের একবার উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার স্যারের সাথে কথা বলতে বললেন।
আমি স্যারের রুমে দরজা খুলতেই দেখলাম স্যার বেশ কিছু টাকা হাতে নিয়ে উনার অফিস সহায়ককে দিয়ে বলছেন যাও টাকাটা মহিলা কে দাও, উনার বাচ্চার লাগবে৷ গরীব মানুষ।
তাকিয়ে দেখলাম একজন গরীব মহিলা বাচ্চা নিয়ে আছেন।
স্যার আমাদের বসতে বললেন। সব ঘটনা শুনার পর আবার শুনানির তারিখ দিলেন। নির্ধারিত তারিখে গেলাম। কোম্পানির লোকও আসলেন স্যারের রুমে।
সব কিছুর পর স্যার কোম্পানির লোককে বললেন, আপনারা কেন দিনের পর দিন মেয়েটাকে ঘুড়াচ্ছেন? ইলেক্ট্রিক জিনিস, ব্যাটারি প্রব্লেম হতেই পারে ওয়ারেন্টির মধ্যে। ঠিক করে দিন। আমি কোন জরিমানা করছি না। সামান্য ২টাকা বেশি রাখলে সেটার জন্য কতো টাকা জরিমানা করি।
আপনারা ভুল বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছেন একচার্জে ৭০ কিমি যায় স্কুটি। এটাতেও জরিমানা হতে পারে। এখন ফ্যাক্টরিতে গিয়ে সব ব্যাটারি চেক করবো ঠিক আছে কি না?
কোম্পানির লোক তখন ৮০৪০/- টাকা আমাকে নতুন ব্যাটারি কিনতে দিল।
ভাবছেন কেন বলছি একথা? আমি টাকা পেয়েছি তাই? মোটেও না। আমি একজন ন্যায় বিচারক দেখেছি, তাই ই কথা বলছি৷ একটা টাকাও আমাকে না দিলে আমি এই ঘটনাটা লিখতাম। কারণ আজ সেই মঞ্জুর মোহাম্মদ স্যারকে বদলি করা হয়েছে। বদলি সরকারি চাকরিতে হবেই, কিন্তু এভাবে কেন? নামীদামি ব্র্যান্ডেকে জরিমানা করে খুব ভুল করেছেন স্যার? আমাদের ভেজাল খেয়ে, ভেজাল মেখে, ভেজাল পড়ে ই মরতে দিতেন! বুকফেটে কান্না আসছে…. সরি স্যার, এর চেয়ে সস্তা শব্দ আমার জানা নেই। আপনি এই দেশের যোগ্য না। আপনি হয়তো দেশের এক কোনায় বসে অফিস করবেন কিন্তু সবসময় আপনার জন্য দোয়া করবে এই ১৮ কোটি জনতা।
কথা গুলি বলছিলেন শাকিলা জান্নাত নামে একজন ব্যাক্তি। পেশায় তিনি একজন ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার।
তিনি আশা করেন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলির আদেশ বাতিল করে তাকে তার পদে বহাল রাখা হবে।