ঈদুল ফিতর’র বাকি আর মাত্র দুই দিন। তীব্র গরমের মধ্যেও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বরিশাল লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে বাড়ি ফেরা এসব মানুষের ভিড় আজ রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চোখে পড়ার মত। কর্মব্যস্ত শহর রাজধানী থেকে কিছু দিনের জন্য হলেও প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে চিরচেনা সেই নিজ বাড়িতে ছুটে আসছেন কর্মজীবিরা।
তবে এবার দক্ষিঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা-ঘাট খানা খন্দ না থাকার কারনে সড়ক পথে কষ্ট কম পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষের। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে প্রতিদিন বাড়ি ফিরছে হাজার হাজার মানুষ। উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে দক্ষিণঞ্চলের পথে ছেড়ে আসছে একটির পর একটি লঞ্চ। যত কষ্টই হোক না কেন নিজের জন্মস্থান, গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনে উদগ্রীব মানুষগুলো ছুটে আসছেন নিজ গন্তব্যে স্থানে।
পথে যতই ভোগান্তি ও দুর্ভোগ হোক না কেন পরিবার-স্বজনদের দেখা মিললে নিমিষেই মুছে যায় সকল ব্যথা। গতকাল রবিবার বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় হাজার মানুষের ভিড়। ঈদ আসলেই আনন্দযাত্রা ভোগান্তি দিয়েই শুরু হয় মানুষের। যারা বাসে চড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হয় মহাসড়কে। তাই লঞ্চে আসতে অনেক বেগ পোহাতে হলেও নদীপথে ঝুঁকি নিয়েই আসছে দক্ষিনাঞ্চলের হাজারও মানুষ। লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, প্রশাসন যাত্রীদের হয়রানি না করার জন্য বার-বার মাইকিং করা সত্তেও লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নামার সঙ্গে সঙ্গেই মাহেন্দ্রা ও আটোরিক্সা সহ বিভিন্ন পরিবহন, অটোরিকশার চালকরা যাত্রীদের লাগেজ ধরে টানাটানি করছে।
তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। যাত্রীদের অভিযোগ আসন্ন ঈদকে জিম্মি করে আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে অনেক বেশি। কি আর করবো পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্যই বাড়ি আসা। ঢাকা থেকে বরিশালে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক সাইদুর হোসেন বলেন, পরিবার-পরিজনের সাথে খুশির দিনটি উপভোগ করতে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে আমার মত হাজার হাজার কর্মজীবিরা। তিনি আরো বলেন ঈদের বাকি মাত্র আর ২ দিন।
আজ ছুটি পেয়েই বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেছি। ছেলে মেয়েরা পথের দিকে চেয়ে আছে বাবা কখন বাড়িতে আসবে। তাই একটু ব্যাস্ততা। অন্যদিকে আগামীকাল সরকারী একবেলা অফিস করেই সরকারী ছুটি তাই বরিশাল নগর ছাড়ছে অনেক কর্মজীবি মানুষ। বরিশাল নগর ছেরে গন্তব্য স্থানে ছুটে যেতে দেখা সরকারী-বেসকারী চাকরীজিবীদের। শুধু লঞ্চ আর বাসেই নয়।
স্পিডবোটে যাত্রী তোলা হচ্ছে। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড় হচ্ছে সাধারন যাত্রীরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। মূলত নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ আজ থেকে শুরু হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ আজ থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করবে। এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশাল প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। গেটের সামনেই রয়েছে নৌ-পুলিশের মোবাইল টিম।
শৃঙ্খলা বজায় রাখতে লঞ্চঘাটে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে স্কাউট ও আনছার বাহিনীর সদস্যরা। পথের এসব শত বিড়ম্বনা আর ঝক্কি ঝামেলা মেনে নিয়েই স্বজনদের সান্নিধ্যে ছুটছেন ঘরমুখো মানুষ। বরিশাল পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, লঞ্চ স্টাফদের কেবিন যাত্রীদের জন্য ভাড়া দেয়া যাবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বন্দর এলাকাসহ গোটা বরিশাল নগরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। যারা তাৎক্ষণিক বন্দর এলাকা ত্যাগ করতে চান না তাদের জন্য টার্মিনাল ভবনের সামনে আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত নিরাপদেই অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। নদীবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্দর এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় মধ্যরাত থেকেই বিআইডব্লিউটি-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বরিশাল সদর নৌ থানা পুলিশ, মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, বরিশাল সদর ও নৌ-ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। যারমধ্যে পুলিশের নারী সদস্যদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পরার মতো। লঞ্চঘাটে যাত্রীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য পুলিশকে বিশেষ নজর রয়েছে।