বরিশাল নগরীর ১৭৯ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকার গৃহকর বকেয়া। এদের মধ্যে আছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। বকেয়া আদায়ে তাদের বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা এই বিপুল অর্থ আদায়ে শেষ পর্যন্ত ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। এসব ব্যক্তির বাড়ির সামনে বারবার মাইকিং করে বকেয়া পরিশোধের লাগাতার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এরই মধ্যে কর পরিশোধের জন্য যোগাযোগ করেছেন।
করপোরেশনের কর আদায় শাখার তথ্যমতে, নগরীতে মোট গৃহকরধারী ৫১ হাজার ৯৮০ জন। তাদের মধ্যে ১০৫২ জন আছেন যাদের কাছে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহকর বকেয়া পড়েছে। এদের মধ্যে ১৭৯ ব্যক্তির কাছেই বকেয়া পড়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৮ টাকা। এই ১৭৯ জনকে তালিকাভুক্ত করে তাদের বাড়ির সামনে মাইকে বকেয়া পরিশোধের লাগাতার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিসিসির কর কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী বাবলু জানান, গৃহকর বকেয়ার তালিকায় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নগরীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সাবেক কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম গুলজারের কাছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন জুয়েলের কাছে ৭৯ হাজার টাকা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান শাহিনের কাছে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, সাবেক কাউন্সিলর শহীদুল আলম নাসিরের কাছে ৬৫ হাজার টাকা, সাবেক কমিশনার মোফাজ্জেল আলী খান মন্টুর কাছে ৮৪ হাজার ২৪০ টাকা, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জহির উদ্দিন মো. বাবরের কাছে ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা, নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের জাগুয়ায় প্রাণ গ্রুপের সেলস ডিপোর কাছে ১৬ লাখ টাকা, এপেক্স হোমিওপ্যাথিক কলেজের কাছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা, বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৮৭ হাজার টাকা ও হাটখোলার ব্যবসায়ী হুমায়ূন হাওলাদার এন্টারপ্রাইজের কাছে ৫৬ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলু বলেন, অনেক বছর ধরে ১৭৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গৃহকর দিচ্ছেন না।
এ জন্য একাধিকবার নোটিশ এমনকি মালপত্র ক্রোকের নোটিশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় তাদের মাল ক্রোক করা হয়নি। তবে গত রোববার থেকে বাড়ির সামনে মাইকে বারবার তাদের নাম ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বকেয়া পরিশোধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এর পরও বকেয়া পরিশোধ না হলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাল ক্রোক করা হবে। এদিকে বাড়ির সামনে মাইকে বকেয়ার তাগাদা দেওয়ায় সামাজিক লজ্জায় পড়ে কয়েকজন ইতিমধ্যে বিসিসিতে যোগাযোগ করেছেন বলে কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কেউ কেউ এভাবে হেনস্তা করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। বকেয়া তালিকায় থাকাদের অন্যতম বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমাদের ফান্ড না থাকায় কর দিতে পারছি না। চেম্বারের নিজস্ব আয়ের উৎস নেই। কর কমানোর জন্য মেয়রের কাছে আবেদন করা হবে। আবেদন মঞ্জুর না হলে চেম্বার সদস্যরা চাঁদা তুলে গৃহকর পরিশোধ করবেন।