মে ১৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অন্যান্য

নিজেকে কখন মুসলিম দাবি করতে পারব

ইসলাম অর্থ সমর্পণ, আর ঈমান অর্থ বিশ্বাস। তাই আল্লাহ তাআলার সামনে পরিপূর্ণ সমর্পণকারীকে মুসলিম এবং আল্লাহ ও তাঁর বিধানকে পূর্ণরূপে বিশ্বাসকারীকে বলা হয় মুমিন। ইসলাম ও ঈমান একটি অন্যটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থাৎ একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় বিধান হলো ঈমান। ঈমান হলো ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম মেনে তা গ্রহণ করে নেওয়া। ইসলাম আকাইদ ও আহকাম, তথা বিশ্বাস ও বিধানাবলির সমষ্টি। ইসলামের বর্ণিত সঠিক আকাইদ, ইসলামের প্রদত্ত শরিয়ত মেনে নেওয়ার নাম ঈমান। এগুলোর অস্বীকার করা কুফর। ঈমান ও ইসলামের মৌলিক ও প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট ফতোয়া গবেষক ও মুহাদ্দিস মুফতি মাহমুদ হাসান

 

আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সব মেনে নেওয়া

ঈমান হলো, ওই সত্য সঠিক আকিদাকে স্বীকার করা ও সত্য বলে বিশ্বাস করা, যা ওহির দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে ওহি কোরআন ও সুন্নাহরূপে সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে ইনশাআল্লাহ। ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, কোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে মেনে নেওয়া ও বিশ্বাস করা। স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর ঈমান আনার কিছুই নেই। চোখে দেখা বিষয়কে তো বেঈমানরাও স্বীকার করে।

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও দৃশ্যমান বস্তুগুলো বা সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বোঝা যায় এমন বিষয়গুলো ঈমানের বিষয়বস্তু নয়। এসব তো মানুষ এমনিতেই মেনে নেয়। এতে ঈমান আনা না আনার প্রশ্নই অবান্তর। মুমিনকে তো এ জন্য মুমিন বলা হয় যে সে না দেখা বিষয় শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সংবাদের ওপর ভিত্তি করেই মেনে নিয়েছে ও বিশ্বাস করেছে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদের শুরুতেই মুমিনের এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, ‘আলিফ লাম মীম—এটি সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি  হিদায়াত, এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসগুলো বিশ্বাস রাখে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। আর যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং তারা পরকালে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১-৫)

 

ইসলাম হলো বিশ্বাসের সঙ্গে সমর্পণ

ইসলাম গ্রহণের অনিবার্য শর্ত—বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। তাঁর প্রতিটি আদেশ শিরোধার্য মনে করবে,     মনে-প্রাণে কবুল করবে, অন্তরে কোনো দ্বিধা থাকবে না। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমর্পণ, আর ইবলিস ও তার অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য বিপরীত যুক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ব্যতীত ইবরাহিমের ধর্মাদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে। পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি; আর আখিরাতেও সে অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। তার প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করো, সে বলেছিল, জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৩০-১৩১)

 

ঈমান অবিচল বিশ্বাসের নাম

ঈমান অটল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রণ এখানে হতে পারে না। দৃঢ় বিশ্বাস না হলে তা ঈমান নয়। অনুমান আর কল্পনা-কুসংস্কারের কোনো অবকাশ তাতে নেই।

কোরআনে কারিমের ইরশাদ—‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, অতঃপর সন্দেহ পোষণ করে না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৫)

সংশয় ও দোদুল্যমানতা কাফির ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য, মুমিনের নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান আনে, তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা তোমার নিকট করে না। আল্লাহ মুত্তাকিদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা শুধু ওরাই করে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না এবং যাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। ওরা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৪-৪৫)

পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা ছাড়া মুসলিম হওয়া যায় না

ঈমান সাব্যস্ত হওয়ার জন্য ইসলামের সব অকাট্য বিধান ও বিশ্বাসকে সত্য মনে করা এবং মন থেকে কবুল করা অপরিহার্য। এর কোনো একটিকে অস্বীকার করা বা কোনো একটির ওপর আপত্তি তোলাও ঈমান বরবাদ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো? সুতরাং তোমাদের যারা এ রকম করে, তাদের একমাত্র পরিণাম পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে, তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৫)

হ্যাঁ, শরিয়তের বিধি-বিধানকে সঠিক ও অবশ্যপালনীয় বলে স্বীকার করার পর পালনে ত্রুটি হলে তা গুনাহ, কুফর নয়। কারণ এই ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী মনে করে। পক্ষান্তরে বিধানের ওপর বিরুদ্ধ প্রশ্ন বা আপত্তি করা সরাসরি আনুগত্যত্যাগ, যা সাধারণ অপরাধ নয়, বিদ্রোহ। এটা মানুষকে চিরজাহান্নামি সাব্যস্ত করে।

 

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মর্মকথা

ঈমানের সর্বপ্রথম রুকন হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর স্বীকারোক্তি ও ঘোষণা; অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ঈমান। আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব স্বীকার করা, একমাত্র তাঁকেই রব ও সত্য মাবুদ বলে মানা—এটিই হলো দ্বিনের মূল ভিত্তি। এর দাবি হচ্ছে, আল্লাহর সত্তা ও গুণসংশ্লিষ্ট আকিদা সঠিক হতে হবে—তিনিই এক ও অসীম, সুমহান, তাঁর মতো ও সমকক্ষ কেউই নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন; সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। ইবাদতের উপযুক্ত তিনিই। তাঁর কোনো স্ত্রী, সন্তানাদি ও মাতা-পিতা নেই। তিনিই সবার খালিক ও মালিক। তিনিই প্রতিপালক, রিজিকদাতা, মৃত্যু ও জীবনদাতা এবং পুনরুত্থানকারী। সুস্থতা-অসুস্থতা, ধনাঢ্যতা-দারিদ্র্য, লাভ-ক্ষতি শুধুই তাঁরই ক্ষমতাধীন। পথপ্রদর্শন, উপকার-অপকার, নিরাপত্তা ও রক্ষা একমাত্র তাঁরই হাতে। সম্মান ও লাঞ্ছনা তিনিই দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর সত্তা অনাদি ও অনন্ত, সর্বজ্ঞানের অধিকারী, প্রজ্ঞাময়, পরাক্রমশালী, ন্যায়পরায়ণ, গৌরবময়, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ও প্রশংসিত, অসীম ইচ্ছাশক্তির অধিকারী, সৃষ্টি ও সৃজন তাঁর গুণ। আলিমুল গাইব, হাজির-নাজির, সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা, সর্ববিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী, সংকট মোচনকারী, অসীম দয়া ও কল্যাণময় এবং বিপদাপদে সাহায্যকারী। তিনি অধিক ধৈর্যশীল, সহিঞ্চু ও পরম ক্ষমাশীল। গোটা জগতের এক, অদ্বিতীয় স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রকও তিনিই।

আল্লাহর কোনো অংশীদার কিংবা পরামর্শক নেই। রুবুবিয়্যত ও উলুহিয়্যতের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা যাবে না। তাঁর বিশেষ হক ও একান্ত বৈশিষ্ট্যসমূহে কাউকে শরিক করা যাবে না। সাধারণ কার্যকারণ ও উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে না। তাঁর কাজে কারো দখল দেওয়ার অবকাশ নেই। বিধি-বিধান নির্ধারণ তাঁরই অধিকার। এতে কাউকে শরিক করবে না—না কোনো মতবাদকে, না কোনো নেতা বা দলকে, না রাষ্ট্র বা সম্প্র্রদায়কে। তিনি মালিকুল মুলক—রাজাধিরাজ। আহকামুল হাকিমিন—মহাবিচারক। তাঁর হুকুমের বিপরীতে অন্য কারো হুকুম কখনো মানা যাবে না; চাই সে শাসনকর্তা, মা-বাবা কিংবা গোত্রপতি অথবা নিজের প্রবৃত্তি হোক।

 

শিরকমিশ্রিত ঈমান আল্লাহর কাছে ঈমানই নয়

একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই পালনকর্তা ও সত্য মাবুদ বলে মানা, রুবুবিয়্যত ও উলুহিয়্যতের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। সর্ববিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী এবং বিপদাপদে তাঁকেই একমাত্র ত্রাণকারী বিশ্বাস করবে। গোটা জগতের এক, অদ্বিতীয় স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রকও তিনিই। বিধি-বিধান নির্ধারণ তাঁরই অধিকার। তাঁর একান্ত বৈশিষ্ট্যসমূহে কাউকে শরিক করবে না—না কোনো মতবাদকে, না কোনো নেতা বা দলকে, না রাষ্ট্র বা সম্প্রদায়কে। মোটকথা, তাওহিদকে পূর্ণরূপে ধারণ করা ও শিরক থেকে পরিপূর্ণ বেঁচে থাকা ঈমানের সবচেয়ে বড় অংশ। আল্লাহর কাছে মুশরিকের ঈমান ঈমানই নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে। এটাই সঠিক দ্বিন। কিতাবিদের মধ্যে যারা কুফরি করে, তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম।’ (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫-৬)

 

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার মর্মকথা

ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত সৃষ্টি। নূরের তৈরি। পুরুষও নন, নারীও নন। কাম, ক্রোধ, ক্ষুধা, রিপু ইত্যাদি থেকে মুক্ত। তাঁদের পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানাদি নেই। তাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত সীমায় বিপুল শক্তির অধিকারী। বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন। কখনো আল্লাহর হুকুমের অমান্য করেন না, বরং সর্বদা আল্লাহ প্রদত্ত কাজে নিমগ্ন। ফেরেশতাকুলের সর্দার হলেন জিবরাঈল (আ.)। (দেখুন—সুরা : নহল, আয়াত : ৪৯-৫০; সুরা : তাকবির, আয়াত : ১৯-২১)

 

আসমানি কিতাবের ওপর ঈমান আনার মর্মকথা

আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে মানুষের হিদায়াতের জন্য নবী-রাসুলদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পক্ষ থেকে ছোট-বড় কিতাবও নাজিল করেছেন। সেগুলো আল্লাহ প্রদত্ত সত্য কিতাব, মানবরচিত নয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ চারখানা :

১. তাওরাত—হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

২. জাবুর—হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

৩. ইনিজল—হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

৪. আল-কুরআনুল কারিম, যা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছে।

আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সব কিতাবের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হচ্ছে ‘আল-কুরআনুল কারিম’। আল-কোরআন নাজিল হওয়ার পর আগের নবী-রাসুলদের সব কিতাব ও শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র কোরআনের বিধানই বলবৎ থাকবে। (দেখুন—সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৭৯; সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৬)

আল-কোরআন ছাড়া পূর্বেকার সব কিতাবই কমবেশি শাব্দিক ও অর্থগত বিকৃত হয়েছে। একমাত্র কোরআনই কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত ও নির্ভুল থাকবে, তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না। আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। (দেখুন—সুরা : হিজর, আয়াত : ৯) কোরআনের ন্যায় কোনো কিতাব কোনো মাখলুক বানাতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা যেরূপ অনাদি, তাঁর কালামও অনাদি। তবে আমাদের পঠিত ও লিখিত আয়াতগুলোর শব্দ ও লেখাগুলো সৃষ্ট।

 

ঈমান শুধু সত্য গ্রহণ নয়, অসত্য বর্জনও

কোনো আকিদা মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তার বিপরীত বিষয়কেও সঠিক মনে করা স্ববিরোধিতা, কোনো সুস্থ বুদ্ধি তা গ্রহণ করতে পারে না। ঈমান তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন বিপরীত সব কিছু বাতিল ও মিথ্যা মনে করবে এবং তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। সব ধরনের শিরক, কুফর ও অনৈসলামিক রীতিনীতি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঈমানের অংশ। ইবরাহিম (আ.) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্র্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক করো তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা : আনআম, আয়াত :    ৭৮-৭৯) মোটকথা, ধর্মহীনতা যেমন কুফর, তেমনি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বিন অন্বেষণ করাও কুফর। সত্য আকিদাগুলো গ্রহণ করা আর কুফরি কর্ম ও বিশ্বাস থেকে সম্পর্কহীনতা অবলম্বন করা—এ দুয়ের সমষ্টির দ্বারা ঈমান অস্তিত্ব লাভ করে। ঈমান ও ঈমান বিনষ্টকারী বিষয় একত্র হতে পারে না।

 

মৌলিক যেসব বিষয়ে ঈমান রাখা অপরিহার্য

মৌলিকভাবে ছয়টি বিষয়ে ঈমান রাখতে হয়। যথা—

১. আল্লাহর প্রতি ঈমান।

২. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান।

৩. আল্লাহর নাজিলকৃত সব কিতাবের প্রতি ঈমান।

৪. আল্লাহর প্রেরিত সব নবী-রাসুলের প্রতি ঈমান।

৫. আখিরাতের প্রতি ঈমান।

৬. তাকদিরের প্রতি ঈমান।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘রাসুল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসুলগণের ওপর, আমরা তাঁর রাসুলগণের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৮৫) একটি হাদিস শরিফে জিবরাঈল (আ.)-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঈমান হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, আখিরাত ও ভালো-মন্দ তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ১)

 

পরকালে বিশ্বাসের মর্মকথা

কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দ্বারা জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর আল্লাহ তাআলা সব প্রাণীকে পুনরুত্থিত করবেন। সব মানুষ ও জিন পুনরুত্থানের পর নিজ নিজ কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। মুসলিমরা কিয়ামতের পর পুনরুত্থানে বিশ্বাসী, তবে দুনিয়ায় পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী নয়। আখিরাত বিষয়ক নিম্নের বিশ্বাসগুলোও অপরিহার্য :

♦ কবরে সওয়াল-জবাব অনিবার্য সত্য। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৭১)

♦ মুমিনদের কবরে শান্তি পাওয়া এবং কাফির ও গুনাহগারদের আজাব হওয়া সত্য। তা জীবিত মানুষদের বোধগম্য নয়, কেননা তা আলমে বারজাখে হয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৯০৫)

♦ শারীরিক ও আত্মিক উভয়ভাবে পুনরুত্থান এবং হাশরের ময়দানে বিচার ও হিসাব-নিকাশ সত্য।

(সুরা : জুমার, আয়াত : ৬৮; সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৭৮-৭৯)

♦ ভালো-মন্দ আমলের ওজন করা অনিবার্য সত্য। (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)

♦ নেককারদের আমলনামা ডান হাতে এবং বদকারদের আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে। (সুরা : হাক্কা, আয়াত : ১৯-২৯; সুরা : কাহ্ফ, আয়াত : ৪৯)

♦ আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারিশ এবং পরবর্তী সময়ে আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতা, নবীগণ ও সৎ মুমিনদের সুপারিশ অনিবার্য সত্য।

(বুখারি, হাদিস : ৪৪৭৬; মুসলিম, হাদিস : ৩২২)

♦ আমাদের নবী (সা.) কাউসার নামক নহর থেকে নেককার উম্মতকে পানি পান করাবেন। (সুরা : কাউসার, আয়াত : ১; বুখারি, হাদিস : ৬৫৭৯; মুসলিম, হাদিস : ২২৯৫)

♦ জাহান্নামের ওপর দিয়ে চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়েও ধারালো পুল পার হওয়া অনিবার্য সত্য। নেককাররা তাদের আমল অনুপাতে দ্রুতগতিতে পার হবে। আর গুনাহগাররা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে, অথবা তাদের টেনে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ৮০৬; মুসলিম, হাদিস : ২৯৯)

♦ নেককাররা আল্লাহর রহমতে জান্নাতে যাবে এবং বদকাররা আল্লাহর ন্যায়বিচারে জাহান্নামে যাবে।

♦ গুনাহগার ঈমানদারদের কাফির বলা হবে না এবং তারা চিরজাহান্নামিও হবে না। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৮)

♦ মুমিনরা চিরজান্নাতি এবং কাফিররা চিরজাহান্নামি হবে।

(সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৬-৮)

♦ পরকালে মুমিনরা আল্লাহ তাআলাকে স্বচক্ষে দেখবে।

(সুরা : ক্বিয়ামাহ, আয়াত : ২২-২৩; বুখারি, হাদিস : ৫৫৪)

 

সব নবী-রাসুলের ওপর ঈমান আনার মর্মকথা

মহান আল্লাহ যুগে যুগে মানুষ ও জিনের হিদায়াতের জন্য তাঁর মনোনীত নবী-রাসুলদের প্রেরণ করেছিলেন। তাঁরা আল্লাহর বাণীকে তাঁদের কথা ও কাজ দ্বারা বান্দাদের প্রতি পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁদের সংখ্যা অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হলেও একটি বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে তাঁদের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজার। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২২৮৮) তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম হলেন আদম (আ.) এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন মুহাম্মদ (সা.)। নবীদের ব্যাপারে নিম্নোক্ত বিশ্বাসগুলো রাখতে হবে :

♦ নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব আল্লাহ প্রদত্ত দয়া ও অনুগ্রহ। কেউ পরিশ্রম করে নবী-রাসুল হতে পারবে না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০৫)

♦ নবী-রাসুলগণ সর্বযুগের সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (সুরা : হাজ্জ, আয়াত : ৭৫)

♦ তাঁরা মাটির তৈরি সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ। তাঁরা আল্লাহও নন, আল্লাহর পুত্রও নন। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩০)

♦ নবী-রাসুলদের প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত আল্লাহর প্রতি ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৫০)

♦ নবী-রাসুলরা সবাই ছোট-বড় গুনাহ থেকে নিষ্পাপ। সবাই ন্যায়ের পথে ছিলেন। (শরহুল ফিকহিল আকবার, পৃষ্ঠা ১৬)

♦ তাঁরা আল্লাহর বাণী উম্মতদের কাছে যথাযথ পৌঁছিয়েছিলেন, তাতে কোনো ত্রুটি করেননি। (সুরা : আহযাব, আয়াত : ৩৯)

♦ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সর্বসম্মতিক্রমে নবীরা ইন্তেকালের পর শহীদদের চেয়েও বেশি জীবন ও অনুভূতিসম্পন্ন। যদিও তা দুনিয়ার জীবনের ন্যায় জীবন নয়। (দেখুন—সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৭৫; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৩৪২৫, হাদিসটির সনদ সহিহ)

তাকদিরে বিশ্বাসের মর্মকথা

ভালো-মন্দ তাকদিরের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা। সব সৃষ্টির ব্যাপারে লাওহে মাহফুজে আগে থেকেই শুরু-শেষ, ভালো-মন্দ বিস্তারিত কুদরতি কলম দ্বারা লিপিবদ্ধ ও নির্ধারিত আছে। মানব-দানবের ভালো-মন্দ তাকদির আল্লাহ তাআলা আলিমুল গাইব হিসেবে আগে থেকেই লিখে রাখলেও মানুষ কোনো কাজে বাধ্য ও অক্ষম নয়, বরং আল্লাহ তাআলা সবাইকে নিজ নিজ ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন, যা কাজে লাগিয়ে সে  ভালো-মন্দ কাজ করে থাকে। এ জন্যই ভালো কাজে পুরস্কার এবং মন্দ কাজে শাস্তির বিধান রয়েছে। তাকদির নিয়ে বেশি গবেষণা ও বাড়াবাড়ি নিষেধ। কেননা তা আল্লাহ তাআলার কুদরতের একটি রহস্য। (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯; মুসলিম, হাদিস : ১; বুখারি, হাদিস : ৪৯৪৫; তিরমিজি, হাদিস : ২১৩৩)

সম্পর্কিত পোস্ট

তদন্তে প্রমাণিত অভিযুক্ত শিক্ষকের পৃষ্ঠপোষকতায় জাপান সফরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি

banglarmukh official

জামান পার্কে ইমরানের স্ত্রী, বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন

banglarmukh official

এইচএসসির ফলাফল ঘোষণায় নতুন সিদ্ধান্ত

banglarmukh official

মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

banglarmukh official

চীন-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু

banglarmukh official

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ

banglarmukh official