পরিবারের সঙ্গে সুদুর সিঙ্গাপুর থেকে ঈদ করতে বরিশালে যাচ্ছিলেন মো. ইবরাহিম হোসাইন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী চাপে সদরঘাট থেকে হারিয়ে ফেলেন মূল্যবান তিনটি লাগেজ। যাতে আত্মীয় স্বজনদের জন্য নানা সামগ্রী ও পাসপোর্টসহ নিজের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিল। এগুলো আর ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চযোগে বরিশাল চলে যান এই প্রবাসী।
কিন্তু সদরঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চেষ্টায় লাগেজগুলো উদ্ধার হয়। এরপর নানাভাবে চেষ্টায় সন্ধান পাওয়া যায় প্রকৃত মালিক ইবরাহিমের। মঙ্গলবার দুপুরে তার ভাইয়ের কাছে লাগেজগুলো হস্তান্তর করে বিষাদ হতে যাওয়া ঈদে আনন্দ ফিরিয়ে আনল পুলিশ।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের এডিসি তাপস কুমার দাস ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিশ্চিত হারানো লাগেজ পুলিশের চেষ্টায় ফিরে পেয়ে খুশি ইবরাহিম হোসাইন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যদের প্রতি।
জানা গেছে, সোমবার সকালে ঢাকায় নেমে সদরঘাট থেকে বরিশাল যাচ্ছিলেন সিঙ্গাপুর ফেরত মো. ইবরাহিম হোসাইন। ঘাটে ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রচন্ড ভিড় ছিল। ঘাটে পৌঁছার পর কুলির কাছে লাগেজ দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু যাত্রীদের ভিড়ে হারিয়ে যায় কুলি। পরিস্থিতি খারাপ দেখে লাগেজের চিন্তা বাদ দিয়ে পরিবারকে নিরাপদে লঞ্চে নিয়ে ওঠেন ইবরাহিম। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে চলে যান বরিশালে। লাগেজ পাওয়ার আশা পুরোপুরি ছেড়ে দেন।
পরে ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তিনটি লাগেজসহ কুলিকে দেখতে পায়। একপর্যায়ে কুলি জানায় সে লাগেজের মালিককে খুঁজে পাচ্ছে না। পরে পুলিশ লাগেজগুলো তাদের সংরক্ষণে রেখে প্রকৃত মালিককে খুঁজতে থাকে। কন্ট্রোল রুম থেকে মাইকিংও করা হয়। কিন্তু কেউ লাগেজের খোঁজে না আসায় সেখানেই রেখে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে কন্ট্রোল রুমে ডিউটি করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তা তাপস কুমার দাস। পরে নিজের ফেসবুকে লাগেজগুলোর ছবি দিয়ে প্রকৃত মালিককে খুঁজে পেতে ফেসবুক বন্ধুদের সহযোগিতা চান তিনি। এছাড়া লাগেজের সঙ্গে থাকা পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঘেঁটে পাওয়া মোবাইল নম্বরে কথা বলেন তাপস কুমার। মোবাইল নম্বরটি ছিল লাগেজ তিনটির মালিক ইবরাহিমের বড় ভাইয়ের।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব ধরনের যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হই লাগেজগুলোর মালিক বরিশালের ইবরাহিম। তিনি যেহেতু বরিশালে ছিলেন এই মুহুর্তে তার ঢাকায় আসারও সুযোগ কম, তাই তার পাঠানো প্রতিনিধির কাছে লাগেজগুলো হস্তান্তর করি।
হারানো লাগেজ ফিরে পাওয়া ইবরাহিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। লাগেজের আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। গতকাল ঘাটের অবস্থাও ছিল মারাত্মক খারাপ। এই অবস্থার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছার আগেই মোবাইলে জানতে পারি লাগেজ পাওয়া গেছে। পুলিশ ফোন করে জানিয়েছে। তখন অনুভূতি কেমন ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না।
তিনি জানান, লাগেজ তিনটিতে নগদ টাকাসহ প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মালামাল ছিল।
পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইবরাহিম বলেন, অনেকে নানা কারণে পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে চান না। বিষয়টা তেমন নয়। আমার এই ঘটনায় সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে পুলিশ। তাদের জন্য আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।