দক্ষিনাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদীপথ। সহজ, আরামদায়ক, নিরাপদ ও বিলাসবহুল হওয়ায় এই নদী পথেই দক্ষিনাঞ্চলের সবথেকে বেশি মানুষ যাতায়াত করে থাকে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকেই মানুষ রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে।
তবে গত ২ দিন ধরে দক্ষিনাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখি নৌযানগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। কোথাও তিল ধরানোর ঠাই ছিলো না। ধারাবাহিকতায় আজও যাত্রী চাপ অনেকটাই বেশি থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ কারণে যাত্রীদের ঢাকায় নামিয়ে দিয়েছে মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ১ টার মধ্যে বরিশাল নদী বন্দরে বেশিরভাগ লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে এসে পৌছেছে। এদিকে বেলা ১ টার পর থেকেই বরিশাল নদী বন্দরে রাজধানীমুখি যাত্রীদের পদচারণা শুরু হয়ে যায়।
যাত্রীদের ভিড় বেশি হলে লঞ্চগুলো সন্ধ্যার পরে বরিশাল ঘাট ত্যাগ করবে। আর যাত্রী ভিড় মোটামুটি হলে রাত সাড়ে ৮ পর্যন্ত সব লঞ্চই ঘাটে থাকবে। বরিশাল নদী বন্দর সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল থেকে আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে ১৪ টি যাত্রীবাহি লঞ্চ সন্ধ্যার পরে যে কোন সময় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। এর পাশাপাশি বেলা ৩ টার দিকে দিবাসার্ভিসের গ্রিণ লাইন ও এ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির ৩ টি জাহাজ যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।
যার প্রতিটিতে পূর্ণ আসনের যাত্রী হয়েছে। এদিকে এমভি মধুমতি নামের বিআইডব্লিউটিসির সরকারি জাহাজ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাত্রা করবে। এছাড়া ভায়া রুটের বেশ কয়েকটি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর হয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও লোডলাইনের ওপর ভিত্তি সেগুলোকে এখানে ঘাট দেয়ার অনুমতি নাও দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এদিকে সবমিলিয়ে আজোও প্রায় অর্ধলক্ষের মতো মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে নদী পথে বরিশাল থেকে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।
যদিও লোডলাইনের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ার আগেই প্রতিটি লঞ্চকে ঘাট ত্যাগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক এবং বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে লঞ্চের ভেতরে মালামালও পরিবহন করা হয় কিন্তু এই বিশেষ সময়ে তার কোন সুযোগ নেই। তাই মালামালের পরিবর্তে যাত্রীদের উঠিয়ে লোডলাইন চেক করে লঞ্চগুলোকে ঘাট ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। গতকাল লোড লাইনের ওপর ভিত্তিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ১৬ টি লঞ্চকে ঘাট ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে এ কাজটি করা হলেও প্রায় ৫ শত যাত্রী কোন লঞ্চে যায়গা না পেয়ে পল্টুনে দাড়িয়ে থাকেন। পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওইসব যাত্রীদের নিয়ে উপকূলীয় যাত্রীবাহি নৌযান হিসেবে ক্ষ্যাত এমভি দোয়েল পাখি-১ লঞ্চটি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। যেহেতু লঞ্চটি বরিশাল থেকে মেঘনা পাড়ি দিয়ে লক্ষীপুরের মজুচৌধুরীর হাট যায়, তাই এটি নিরাপদেই চাঁদপুরে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে এসেছে।
তবে আজ গতকালের মতো যাত্রী না হলে এমনটা না হওয়ার সম্ভবনা নেই। তারপরও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে বিআইডব্লিউটিএ যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত বলে জানান এই কর্মকর্তা। এদিকে প্রতিদিনের মতো যাত্রীদের চাপ বাড়ার সাথে সাথে আজও নদী বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে নজিরবিহন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
র্যাব-৮, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিবি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, মেরিন ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবায় দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও এরমধ্যেই চাঁদর ও তোষক পেতে লঞ্চের ডেকের জায়গা চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রী লোকমান হোসেন জানান, দুপুরে এসেও লঞ্চে মনের মতো কোথাও জায়গা পায়নি। পের্ একজনে এসে ২ শত টাকার বিনিময়ে তার চাঁদর সরিয়ে আমাকে জায়গা দিতে চাইলো। তখনই বুঝলাম ডেকের জায়গা বিক্রি হচ্ছে।
অপর এক যাত্রী বেল্লাল হোসেন জানান, ঈদের স্পেশাল ট্রিপের লঞ্চের কেবিনের টিকিট নাকি আগেই বিক্রি হয়ে গেছে কিন্তু আজও ঘাটে এসে ভিন্ন পন্থায় একটি কেবিন পেলাম, যদিও দাম একটু বেশিই দিতে হয়েছে। এদিকে বরিশাল নদী বন্দরের মতো সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে, তবে বরিশাল থেকে মাওয়া পর্যন্ত রুটের যাত্রীদের ভিড় ছিলো বেশি। এ রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি ও মালিকানা বাসসহ মাইক্রোবাসেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো।
পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় অনেক সময় মাওয়া রুটের কাউন্টারগুলোতে দীর্ঘ লাইনেও দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। মামুন নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, গতরাতে লঞ্চে ঢাকায় যেতে না পেরে আজ মাওয়া দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কোন সমস্যা না হলে এ রুট দিয়ে অল্প সময়ে নিরাপদেই ঢাকায় যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।