অনলাইন ডেস্ক :: হিসেব অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর শনিবার (৮ জুন) বরিশাল নদীবন্দরে সব থেকে বেশি রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় হওয়ার কথা রয়েছে।
সে লক্ষ্যে দুপুর থেকেই বরিশাল নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। এরইমধ্যে বরিশাল নদীবন্দরের ছয়টি পন্টুনের মধ্যে চারটি পন্টুন পুরোপুরি এবং একটি পন্টুনের কিছু অংশ ঢাকাগামী লঞ্চের দখলে রয়েছে। বাকি একটি ও অন্যটির কিছু অংশ দিয়ে কোনোভাবে অভ্যন্তরীণ ডজনখানেক রুটের যাত্রী ওঠা-নামা করছে।
যদিও চারটি পন্টুনে ঢাকাগামী ১১টি লঞ্চ সরাসরি নোঙর (বাদিং) করার সুযোগ পেলেও বাকিগুলো অন্য লঞ্চের সঙ্গে মাঝনদীতে নোঙর করতে বাধ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে ভায়া রুটে লঞ্চ ও যাত্রীদের এ ঘাটে নোঙর করতে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
যদিও লোডলাইনের ওপর ভিত্তি করে যাত্রীদের চাপ বেশি হলে ভায়া রুটের লঞ্চ এ ঘাটে যাত্রী তুলতে পারবে না এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
তবে মেঘলা আকাশ ও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে যাত্রীর চাপ বেশি নাও থাকতে পারে বলে ধারণা করছে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের মতে, রাতে বরিশাল নদীবন্দর থেকে যে ১৫টি লঞ্চ ঘাটে অপেক্ষমান রয়েছে, তারা মোট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। সে হিসেবে যাত্রীর চাপ হলে সমস্যা হবে না। আর যাত্রীর চাপ না থাকলে কিছু লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা নাও করতে পারে।
কিন্তু লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, শনিবার ঘাটে থাকা লঞ্চগুলোর কেবিনের আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। তাই আশানুরূপ ডেকের (তৃতীয় শ্রেণীর) যাত্রী না হলেও ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে।
বরিশাল নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য এমভি সুন্দরবন-৮, ১১ সুরভী-৮, ৯, অ্যাডভেঞ্চার-১, ৯, কীর্তনখোলা-২, ১০ মানামী, পারাবত-৮, ৯, ১১, ফারহান-৮, টিপু-৭, কালাম-১ নামের ১৫টি লঞ্চ নদীবন্দরে রয়েছে। সব লঞ্চ মিলিয়ে লোডলাইনের ওপর ভিত্তি করে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার।
এছাড়া সন্ধ্যায় বিআইডব্লিউটিসির প্যাডেল সার্ভিসের স্টিমার পিএস মাহসুদসহ দু’টি সরকারি জাহাজ যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। যাদের দুই হাজারের মতো যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও দুপুরে বরিশাল ঘাট থেকে এমভি গ্রিনলাইন-২, ৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৫ নামের তিনটি ক্যাটারম্যান জাহাজ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। যেখানে দুই হাজারের মতো যাত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) কবির হোসেন জানান, নৌবন্দর, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পক্ষ থেকে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আগে থেকেই সবকিছু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শনিবারই ঢাকার ফিরতি ট্রিপে সব থেকে বেশি যাত্রী হবে এবং গত দু’দিন থেকে শনিবার লঞ্চের সংখ্যাও বেশি রয়েছে। তবে আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে আশানুরূপ যাত্রী নাও থাকতে পারে। বেসরকারি সার্ভিসের যে পরিমাণ লঞ্চ বরিশালে রয়েছে তাতে যাত্রীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, জায়গা সংকটের মধ্যেও পন্টুনে ১২টি লঞ্চের বার্দিং করানো সম্ভব হয়েছে। তিনটি লঞ্চ অন্য লঞ্চের পেছনে রয়েছে। তবে নিরাপদে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামা করানোসহ সার্বিক সহায়তার জন্য দুপুর থেকেই মেরিন ক্যাডেট, স্কাউট ও আনসার সদস্যদের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
নদীবন্দর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, পুরো বন্দর এলাকাজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। বন্দর এলাকার নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশের পাশাপাশি, কোতোয়ালি থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দল ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মেরিন ক্যাডেট ও স্কাউটদের সহায়তায় টার্মিনাল এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় ও যাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তবে শনিবারও টার্মিনাল ভবন ও পন্টুন এলাকায় হকার এবং ধূমপায়ীদের অবস্থান দেখা গেছে। যদিও এদের হটাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এদিকে, বরিশালে সকাল থেকে আকাশ মেঘলা রয়েছে, থেমে থেমে কয়েকবার বৃষ্টিপাতও হয়েছে। এ ধরনের বৃষ্টি এ মৌসুমে হওয়াটা স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।