জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে আগাম মেয়র প্রার্থী ঘোষণার মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও জামায়াত একই ধরনের কৌশল নিয়েছে। দলটি ৭০ থেকে ৮০টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করে তাঁদের এলাকায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এসব প্রার্থীর কেউ কেউ ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার ছেপে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। দলটি এখন আর নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। তাকে হয় জোটগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে, অথবা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। জোটগত রাজনীতিতে থাকলেও জামায়াত স্বতন্ত্রভাবেও ভোট করার একটা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
এর আগে সিটি নির্বাচনে আগাম মাঠে নেমে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও প্রস্তুত করার চেষ্টা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সিলেটে এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, বরিশালে মুয়ায্যম হোসাইন (হেলাল) ও রাজশাহীতে সিদ্দিক হোসেনকে প্রার্থী মনোনীত করেছে জামায়াত। প্রার্থীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে রোজার ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নগরীতে পোস্টার লাগিয়েছেন। আবার কেউ ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মী সংযোগ শুরু করেছেন। সিলেটের জোবায়ের ও বরিশালের মুয়ায্যম মহানগর জামায়াতের আমির। আর সিদ্দিক হোসেন রাজশাহী মহানগর কমিটির সেক্রেটারি।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, সিটি নির্বাচনে আগেভাগে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ঘোষণার অন্য উদ্দেশ্যও আছে। একদিকে বিএনপির ওপর স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করা, যাতে মেয়র পদে দলের সমর্থনের বিনিময়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিএনপি সমঝোতায় বসে। এ ছাড়া আগাম প্রার্থী ঘোষণার রাজনৈতিক কৌশলও আছে। তা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে পড়া দলীয় কার্যক্রম প্রকাশ্যে আনা। তাই বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত মাঠে থেকে দলীয় প্রচারণার সুযোগটি নিতে চায় জামায়াত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে আগাম প্রার্থী ঘোষণা দিলেও জামায়াত শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না-ও থাকতে পারে। বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবেই অংশ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থিতা তুলে নেবে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বরিশালে জামায়াতের মেয়র পদপ্রার্থী মুয়ায্যম হোসাইন প্র বলেন, ‘সবে তো শুরু, শেষের কথা কি এখনই বলতে পারি? আমরা দলীয় সিদ্ধান্তেই কাজ করছি। পরে বসে যেয়ো, এ রকম কোনো ম্যাসেজ দল দেয়নি।’
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি ও গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। ঢাকায় মহানগর উত্তর কমিটির আমির সেলিম উদ্দিন ও গাজীপুরে মহানগর আমির এস এম সানাউল্লাহকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছিল। ঢাকার নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। আর ১৫ মে গাজীপুরের স্থগিত নির্বাচন ২৬ জুন হবে। এই নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগেই জামায়াত গাজীপুরের মেয়র প্রার্থী তুলে নিয়ে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে সমর্থন দেয়। এর পরদিনই এক ঘরোয়া বৈঠক থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারকারী জামায়াতের নেতা সানাউল্লাহসহ দলের ৪৫ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ও বরিশালের চেয়ে সিলেটে জামায়াতের প্রার্থীকে নিয়ে নেতা-কর্মীরা বেশ সক্রিয়। অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে তারা সিলেটে মেয়র পদটি চাইবে।
এ বিষয়ে সিলেটে জামায়াতের মেয়র পদপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘সিলেটের ব্যাপারটা আলাদা। আমরা নির্বাচন করব। প্রস্তুতি চলছে।’
অবশ্য বিএনপি জামায়াতের আগাম প্রার্থিতাকে খুব গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তারা মনে করছে, সব রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে নির্বাচন করার ও প্রার্থী দেওয়ার। জামায়াতও সেভাবে হয়তো আগাম প্রার্থী দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জামায়াত তাদের কৌশল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে চূড়ান্তভাবে তারা কী করে, সেটাই দেখার বিষয়। মানুষও জানে, কার সঙ্গে কার নির্বাচন হবে, কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।