সুরের জাদুকর রাহুল দেববর্মনের আজ ৮০ তম জন্মদিন। আট থেকে আশি সব প্রজন্মের মানুষের কাছেই তাঁর সৃষ্টি মিউজিক আজও সমান জনপ্রিয়। কিংবদন্তি শিল্পী আর ডি বর্মনের সুরের সাগরের ডুব দেয়নি এমন সংগীত প্রেমী মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বন্ধত্ব হোক কিংবা প্রথম প্রেমে পড়া ,কিম্বা দুঃখ- জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তার গান আমাদের মুগ্ধ করে চলেছে।
১৯৩৯ সালের ২৭ জুন ভারতের বিখ্যাত সংগীত পরিচালক শচীন দেববর্মন এর সহধর্মিনী মীরা দেব বর্মনের কোল আলো করে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন রাহুল দেব বর্মন। যিনি পরবর্তীকালে পঞ্চম নামে পরিচিতি লাভ করেন। ৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্ক, আর. ডি. বর্মনের কলকাতার বাড়ির ঠিকানা। কথিত আছে, জন্মের পর তিনি যখন কাঁদছিলেন, তখন সেই আওয়াজ টা সংগীতের পঞ্চম নোটের আকার ধারন করেছিল। এ ছেলে যে একেবার পঞ্চম স্বরে কাঁদে, কী করে এর নাম টুবলু হবে! দাদুর দেওয়া টুবলু নাম টা হয়ে গেল পঞ্চম।
ছোট বেলা থেকে বাবা-মা শচীন দেব বর্মন ও মীরা দেব বর্মনের সুরের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা পঞ্চমের। ভালো তবলা বাজাতে পারতেন। মাত্র ন বছর বয়সে একটা সুর দিয়েছিলেন পঞ্চম। ছোট্ট পঞ্চমের দেওয়া সেই সুর ১৯৫৬ সালের ‘ফান্টুস’ ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন শচীন দেববর্মন | সেই গান টি হল ‘আয়ি মেরি টোপি পালট কে আ’। তিনি প্রথম কাজ করেন অভিনেতা মাহমুদ প্রযোজিত ‘ছোটে নবাব’ ছবিতে ১৯৬১ সালে। মিউজ়িক শিক্ষা পেয়েছিলেন প্রখ্যাত সারদ বাদক ওস্তাদ আলি আকবর খান এবং তবলা বাদক শামতা প্রসাদের কাছে। খুব ভালো মাউথ অরগান বাজাতে পারতেন পঞ্চম। বাবার সহকারী হয়ে কাজ শিখেছেন, কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।
অসংখ্য জনপ্রিয় হিন্দি, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক আরডি বর্মন। তিনি প্রথম কাজ করেন অভিনেতা মাহমুদ প্রযোজিত ‘ছোটে নবাব’ ছবিতে ১৯৬১ সালে।
৩৩১টি ছবিতে মিউজ়িক কম্পোজ় করেছিলেন আর ডি বর্মন। এর মধ্যে ২৯২টি হিন্দি, ৩১টি বাংলা, ৩টি তেলেগু, ২টি তামিল, ২টি ওড়িয়া ও ১টি মারাঠি। সংগীত জীবনে আরডি বর্মনের জনপ্রিয় ছবি, ‘তিসরি মঞ্জিল ‘ ,ইয়াদো কি বারাত, ‘কাটি পতঙ্গ’, ‘গোলমাল’, ‘খুবসুরত’,’কুদরত’ ‘শোলে’, ‘শান’, ‘সাগর’, ‘পরিন্দা’, সনম তেরি কাসাম’, ‘১৯৪২- আ লাভ স্টোরি’,। শেষ কাজ করা সিনেমাটি হল ‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’।
১৯৬৬ সালে রীতা পটেলকে বিয়ে করলেন রাহুল। মাত্র ৫ বছর স্থায়ী হয়েছিল সেই দাম্পত্য। এরপর দীর্ঘ ৯ বছর পর ১৯৮০ সালে আশা ভোঁসলেকে বিয়ে করেন রাহুলদেব|
কীভাবে দেখা হয়েছিল আর ডির সঙ্গে আশার? কি ভাবে আর ডির প্রেমে পড়েছিলেন আশা?

১৯৬০ সালে গণপত রাওয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আশা নিজের কেরিয়ারে মনোনিবেশ করতে থাকেন। দুজনের পরিচয় দীর্ঘদিনের। গানের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়ে যায় পারস্পরিক নির্ভরশীলতা।
আর ডি বর্মনের প্রেমের প্রস্তাবে আশা ভোসলে প্রথমে সেভাবে না এগোলেও, পরের দিকে প্রেমে পড়ে বিয়েও করেন দুজনে। পরবর্তীকালে তাঁদের বিয়ে হলেও তাঁদের সাংসারিক জীবন খুব একটা সুখের হয়নি বলে জানা যায়। স্বামীর প্রতি অনুযোগ ছিল আশার। পঞ্ছম সব সব ভাল ভাল প্রেমের গান দিয়ে দেন দিদি লতাকে, আর আশার জন্য থাকত ক্যাবারে, জ্যাজ প্রধান সব গান। এই নিয়ে বাকবিতণ্ডাও কম হয়নি দুজনের। পরবর্তীকালে আশা নিজেই জানিয়েছেন একাধিক সাক্ষাত্কারে| তবে আশা ভোসলে-রাহুল দেববর্মণ জুটি আমাদের উপহার দিয়েছেন কালজয়ী সব গান।

