বাংলাদেশে ফিরেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া ৬ কিশোরী ও নারী। রবিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া হয়।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ৫১ বিএন বিএসএফের কমান্ড্যান্ট শ্রী কে উমেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চগড় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৮ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এরশাদুল হকের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এ সময় তেতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা, সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে তেতুলিয়া থানা পুলিশ ওই কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তেতুলিয়া থানায় প্রয়োজনীয় আইনি কার্যক্রম শেষে তাদেরকে দিনাজপুরে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন পরে সন্তানদের ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন ওই কিশোরী ও নারীদের অভিভাবকরা।
বিজিবি, পুলিশ ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা জানান, পাচারকারীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে তাদের ভারতে নিয়ে যান। পরে তাদের ভারতের চেন্নাইয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরা এক বছর থেকে ৭ বছর ধরে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছিল। ভারতীয় পুলিশ চেন্নাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের ধরে আদালতের মাধ্যমে চেন্নাইয়ের সরকারি একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখেন। সেখান থেকে তাদের ১৫ জুন ভারতের শিলিগুড়ি নিয়ে আসা হয়। ভারতের শিলং এর ইমপালস এনজিও নেটওয়ার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের একটি এনজিওর (ব্র্যাক) সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদান করে পাচারকারী কিশোরী ও নারীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। উভয় দেশের এনজিও পাচারকারীদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নিয়ে আসেন।

সিভিল সার্জন অফিসের একটি মেডিক্যাল টিম কিশোরী ও নারীদের তেতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারি পরীক্ষা করেন। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় তেঁতুলিয়া মডেল থানায়। সেখানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে বিকালে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় দিনাজপুর। সেখানে সোমবার তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নড়াইলের এক কিশোরীর মা জানান, ‘৭ বছর আগে আমার মেয়েকে তার ১২ বছর বয়সে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। দীর্ঘদিন খুঁজেও আমার মেয়ের কোন খোঁজ পাইনি। আজ আমার মেয়েকে আমি ফিরে পেলাম। কত দিন তাকে দেখিনা। আমি বোঝাতে পারবো না আমার কতটা ভাল লাগছে। তবে আমরা চাই পাচার চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. এ কে আজাদ জানান, ‘ওই কিশোরী ও নারীদের নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে রিপোর্ট পেলে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’

তেতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ‘দালালরা তাদের চাকরির প্রলোভন দিয়ে ভারতে পাচার করে। তারা ভারতের চেন্নাই পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। এরপর তাদের চেন্নাইয়ের একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে তাদের রাখা হয়। পরে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত আনা হয়। প্রায় এক বছর ধরে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির পর তাদের বিশেষ ট্র্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা শেষে ফেরত আসাদের তেতুলিয়া থানায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তাদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। ওই এনজিওটি পাচার হওয়া কিশোরী ও নারীদের কাউন্সিলিংয়ের পর বৈধ পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া হবে। পাচার হওয়া নারী ও কিশোরীরা কেউ ৭ বছর থেকে এক বছর আগে ভারতের চেন্নাইয়ে পাচার করা হয়।’
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এরশাদুল হক জানান, ‘বিএসএফ বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে তাদের নিয়ে আসে। পরে তারা আমাদের হাতে হস্তান্তর করেন। আমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করি।