বরগুনার তালতলীতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে নিশানবাড়ীয়ায় নির্মাণাধীন ৩০৭ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহন ও ভূমিহীনদের পূর্নবাসন , কাজ শেষ করে সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
নিশানবাড়ীয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হলে উপকূলীয় এলাকার ঘরে ঘরে পৌঁছাবে বিদ্যুতের আলো। আর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে ভারি ও মাঝারি মানের শিল্প কারখানা, এমনটাই আশা স্থানীয়দের। ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ ও আইসোটেক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি নির্মানে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।
নির্মানাধীন ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকায় বসবাসকারীরা নিশাণবাড়ীয়া সলগ্ন পায়রা নদীর মোহনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাধেঁর পাশেই ঘর তুলে বসবাস করতো ১৩৯ পরিবার। তাদের কারোই ছিলনা জমির কোনো মালিকানা। তাদের ই একজন জামাল বলেন আমাগো ওয়াপদা অফিস যায়গা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে। মোগো তো এমনিতেই চইল্যা যাইতে হতো তারপরেও বিদ্যুত কেন্দ্র স্যারেরা মোগো দেড় লাখ কইর্যা টাহা দেছে। হেই টাকা দিয়া জমি কিন্যা এহন মোরা ঘর বানাই ছি। এহন আর মোগো ডর ও ভয় নাই।
সরেজমিনে দেখা যায় বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকা থেকে চলে যাওয়া ভূমিহীনদের ৬০ জন একত্রে মিলে ৪০ বিঘা জমি ক্রয় করে তাদের বসবাসের জন্য বিদ্যুত কেন্দ্রের পূর্বদিকে একটি গ্রাম গড়ে তুলেছেন। নাম দিয়েছেন নতুন গ্রাম। তার পাশেই আরো ৭৯ জন একত্রে মিলে নতুন গ্রামের পাশেই আরেকটি গ্রাম করেছেন।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া এ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জানান, আমরা সম্পূর্ণ মানবিক কারণে কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেই। তাদের জন্য বাড়ি করে দেওয়া প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন ভূমিহীন এই জেলে পরিবারগুলো ঘরের পরিবর্তে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে। যাতে তারা সে টাকা নিয়ে নিজের সুবিধামতো জায়গায় বসতি গড়েছেন।
তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, বরগুনা জেলা তালতলীর কয়লাভিত্তিক ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি বেশ। ২০২২ সালের শুরু থেকেই উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ নামের প্রকল্পটির ব্যাপারে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি হয়। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড’। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। মোট ৩০০ একর জমির উপর নির্মিতব্য এই প্ল্যান্ট থেকে চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬.৭৭ টাকা। তবে কয়লার দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৪ টাকা।
আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া এডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী বলেন, ‘ওই এলাকায় শুধু বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নয়, সেখানে কর্মরতদের ও স্থানীয়দের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল হবে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরোজমিনে দেথা যায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মধ্যে এই প্রকল্পটি শেষ হবে।
আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ একটি প্রধান উপাদান। পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে।