মাসখানেক পরই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইতিমধ্যেই কোরবানির পশুর হাট বসানোর ও বেচাকেনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এবারের ঈদে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। বরং জোগান চাহিদার চেয়ে বেশি হবে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে।
দেশের খামারি ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে এসব পশুর জোগান আসবে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল থেকেও চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতি বছরই গবাদি পশু এসে থাকে। এবার সে রকম হলে জোগান আরও বেশি হবে। ফলে এবার দাম কম বা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চোরাই পথে গরু আসা নিয়ে চিন্তিত দেশি উৎপাদকরা। তাদের মতে এবার দেশেই উৎপাদন বেশি। তার ওপর চোরাই পথে গরু আসলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আসা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ। এ বছর চাহিদা বেড়ে ১ কোটি ১১ লাখ হবে। এর বিপরীতে এবার কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর জোগান দেয়া যাবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি রয়েছে।
এর মধ্যে দেশের ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬ খামারির গরু আছে ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৫টি, মহিষ ৮৮ হাজার ৪৪৮টি, ছাগল ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭২টি ও ভেড়া ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮টি। এর বাইরে সাধারণ গবাদিপশু আছে ৬ হাজার ৫৬৩টি। এগুলোও কোরবানির বাজারে আসবে।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক যুগান্তরকে বলেন, গত ৩ বছর ধরে ভারত থেকে গরু আমদানি কম হচ্ছে। এ ৩ বছর দেশীয় উৎস থেকেই কোরবানির পশু ও দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়াও বাজারে দেশি গরুর চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশীয় গরু-ছাগল উৎপাদনে ছোট-বড় প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক খামারি কাজ করেছেন।
এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরও অনেক ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে। এগুলো থেকে কোরবানির পশুর জোগান আসবে। আশা করছি, এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশে গবাদি পশুর কোনো ধরনের সংকট হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র আরও জানায়, দেশে এখন ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি বড় খামার রয়েছে। এর বাইরে ছোট ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খামারও রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও গবাদি পশু পালনের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিশেষ করে চর ও উপকূলীয় এলাকায় গরু, ছাগল ও মহিষ পালনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাদের অনেকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গবাদিপশু লালন-পালন করেন। সব মিলে দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এর একটি বড় অংশই কোরবানির ঈদে বাজারে আসে।
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটের ব্যবসায়ী বরকত আলী যুগান্তরকে বলেন, দেশের খামারগুলোতে বর্তমানে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সেটা যথেষ্ট। এজন্য মনে হচ্ছে এ বছর কোরবানির পশুর দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ ঘিরে ভারত থেকে নানা ভাবে গরু আসে। এতে করে দাম কমে যায়। এমনিতেই এবার ধারণা করা হচ্ছে পশুর দাম কম হবে, এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে পশু এলে দেশীয় ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এবার যাতে তেমনটি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে।’
যশোর সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের খামারি শরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘একটি গরুর জন্য দিনে ১৩৫ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, কুড়ো, ফিড ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এ বছর ১২টি গরু মোটাতাজা করেছি। মানভেদে প্রতিটি গরুর দাম ৫০ হাজার থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হবে। আর এ গরু বিক্রি কর লাভের আশা করছি।’
তিনি আশঙ্কা করে বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বেশি মাত্রায় গরু এলে দেশি গরুর দাম কমে যাবে। তখন আমাদের লোকসান গুনতে হবে। যেহেতু দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত গরু আছে, সে কারণে আমরা চাই ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হোক। তাহলে খামারি একটু লাভের মুখ দেখবেন। আর দেশের একটি কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত দাঁড়িয়ে যাবে।’
গবাদিপশুর খামারগুলোতে স্বাস্থ্য হানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘খামারগুলোতে স্বাস্থ্য হানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার প্রভাবে খামারিরা প্রাকৃতিক ভাবে গরু মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য তৈরি করছেন।’
সূত্র জানায়, গত বছর কোরবানির ঈদ ঘিরে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ভাবে জোগান ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩টি পশুর। গত বছরও চাহিদার তুলনায় ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩টি গবাদিপশু বেশি ছিল।
এবার গত বছরের চাহিদার সঙ্গে ৫ শতাংশ হিসাব বাড়িয়ে চাহিদা করা হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ গবাদিপশু। তার বিপরীতে জোগান আছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু। এ বছরও চাহিদার চেয়ে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু বেশি আছে।