একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন আওয়ামী লীগের ৯ জন প্রার্থী। কিন্তু মহাজোট প্রার্থী এরশাদের কারণে তাঁরা আর নির্বাচন করেননি। তবে এরশাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিভিন্ন দলের সাতজন প্রার্থী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় উপনির্বাচনকে ঘিরে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের সেই ১৬ প্রার্থী।
এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর সদর আসনে ২৮ বছরের রাজত্বের আপাত অবসান ঘটেছে জাতীয় পার্টির। দলীয়ভাবে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও ঘুরেফিরে জাপার তিনজনের নাম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আপাতত এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে প্রার্থী করে আসন হারানোর ঝুঁকি নিতে চায় না সদ্য অভিভাবক হারানো দলটি। এ মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুজনের নাম আলোচনায় আসছে। তাঁরা হলেন এরশাদের ভাই হুসেইন মুহম্মদ মোর্শেদ এবং এরশাদের ছেলে রাহগীর আলমাদি সাদ এরশাদ। এ ছাড়া এরশাদের ভাতিজা (দল থেকে বহিষ্কৃত) সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের নামও আলোচনায় রয়েছে। পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সে তালিকায় প্রথমে রয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর।
জেলা জাপা নেতা আসাদুুজ্জামান, মমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বলেন, রংপুর সদর আসন হচ্ছে এরশাদ বা জাপার মূল ঘাঁটি। এখানে কোনো দলই সুবিধা করতে পারবে না। দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যেই প্রেসিডিয়াম বৈঠকে রংপুর-৩ আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে এরশাদের অবর্তমানে রংপুর সদর আসনে জাপাকে আর ছাড় দিতে চাইছে না আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর সদরের মানুষ এরশাদকে বিজয়ী করে আসছে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মাঝে এরশাদের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তবে জোটগত নির্বাচনের কারণে গত তিনটি নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। ফলে প্রতিবারই এরশাদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু গত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে ভরাডুবি এবং এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি এই আসনটি আসলেই ধরে রাখতে পারবে কি না—এই প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে এখন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসন থেকে জাপা পেয়েছে মাত্র দুটি। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও দলটি চেয়ারম্যান পেয়েছে মাত্র একজন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ১৯৯১ সালে রংপুর সদর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সদর আসনটি তাঁর দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২১টিতেই জয় পায় জাপা। এর পর থেকে দলটির আসনসংখ্যা শুধু কমেছে। শুধু সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচনই নয়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রংপুরের ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে মাত্র জাপার প্রার্থী জিতেছেন।
গত নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৯ জন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, সাবেক মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রোজি রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক লতিফা শওকত, রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসিমা জামান ববি, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হোসনে আলা লুত্ফা ডালিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন ও জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল। এরশাদের শূন্য হওয়া আসনে তাঁদের অনেকেই এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিগত সংসদ নির্বাচনে এরশাদ ছাড়াও পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রিটা রহমান (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-ধানের শীষ), আমিরুজ্জামান পিয়াল (ইসলামী আন্দোলন-হাতপাখা), সাব্বির আহম্মেদ (পিডিপি-বাঘ), আনোয়ার হোসেন বাবলু (বাসদ-কোদাল), আলমগীর হোসেন আলম (জাকের পার্টি-গোলাপ ফুল), তৌহিদুর রহমান মণ্ডল (খেলাফত মজলিস-দেওয়াল ঘড়ি) ও ছামসুল হক (এনপিপি-আম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরাও এবার এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি তিনবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু জোটগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আশা করি, এবার এই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দেওয়া হবে।’
রংপুর-৩ আসন রংপুর মেট্রোপলিটন সিটি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৪২ হাজার ১৪৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ২০ হাজার ৭১৫ জন এবং পুরুষ ভোটার দুই লাখ ২১ হাজার ৪৩৪ জন।