‘ভাই এহন কথা কওয়ার সময় নাই, মাছ বেইচ্যা টাহা নিয়া বাড়ি যামু। আবার তাড়াতাড়ি সাগরে যাইতে অইবে।’
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে এমন কথাগুলো বলেন সাগর থেকে ফিরে আসা জেলে হাফিজুর ও আ. রহিম।
কথা বলার জন্য তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা মাত্রই তারা বলেন, ভাই সময় নাই, পরে কমুয়ানে। সাগর থেইক্যা আইছি, সাগরে জমমের (খুব বেশি) মাছ। তাড়াতাড়ি আবার যাইতে অইবে। এক খেইয়ে অনেক মাছ পাইছি।
বিএফডিসি মৎস্য বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গভীর সমুদ্রে থেকে আসা সারিবদ্ধ ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। কিছু ট্রলার থেকে মাছ উঠাচ্ছে ঘাটের শ্রমিকরা, আবার অনেকগুলো ট্রলার নোঙর করা রয়েছে।
সারিবদ্ধভাবে একের পর এক ঘাট শ্রমিকরা ট্রলার থেকে মাছ উঠিয়ে টলসেডে স্তুপ করে রাখছেন। সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেদের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট শ্রমিক থেকে শুরু করে ট্রলার মালিক এবং আড়তদারদের মুখে হাসি ফুটছে। এক কথায় পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন ঈদের আনন্দ বইছে।
ইলিশ মৌসুমে দীর্ঘ অপেক্ষার পর গভীর বঙ্গোপসাগরে ২৪ জুলাই সাগরে যাত্রা শুরু করে জেলেরা। সাগরে যাওয়া মাত্রই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। তবে পার্শ্ববর্তী নদীতে ইলিশ কম পাওয়া গেলেও সু-স্বাদু হওয়ায় এ মাছগুলোর দাম অনেক বেশি। এ নদীর মাছ প্রতিমণ বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা দরে এবং গভীর সমুদ্র থেকে যে ট্রলারগুলো আড়তে ফিরে আসে সেসব ট্রলারের ৭ থেকে ৮শ’ গ্রামের ইলিশের প্রতিমণ বিক্রি হয় ১৮ হাজার টাকা করে। আবার ৪ থেকে ৫শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয় ১২ হাজার টাকা দরে। প্রায় ট্রলারই প্রতি ট্রিপে ৪ থেকে ৮ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করছে। এ ইলিশগুলো পাথরঘাটার মৎস্য আড়ৎ থেকে রপ্তানিকারকরা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করছেন।
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৭০টন মাছ বিক্রি হয়েছে যা থেকে এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩০ টাকা।
ট্রলার মাঝি মো. জাকির হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরে এখন যেভাবে মাছ ধরা পড়ছে সাগরে তাতে আমরা অনেক খুশি। তবে এ নিষেধাজ্ঞা ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশে একসঙ্গে দেওয়া হলে সাগরে আরও বেশি মাছ বৃদ্ধি পাবে।
তারা আরও বলেন, আমরা প্রত্যেকটা ট্রলারে অল্প করে জাল ফেলতে পেরেছি তাতেই ৪ হাজার মাছ পেয়েছি। যা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব।