বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ছোট দলগুলোর ঐক্যপ্রক্রিয়ায় ‘ঘুম হারাম’ হয়ে যাচ্ছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর। ঐক্যপ্রক্রিয়ার কারণে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার হারাতে পারেন হেফাজতের ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ হারাতে পারেন নগরের ভূমিহীন ও কলোনিবাসীর ভোট।
হেফাজতে ইসলামের বরিশালের আমির ওবায়দুর রহমান মাহাবুব এবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের হয়ে। হেফাজতের সমর্থন পাবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। সম্প্রতি তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে গত সোমবার তিনি বরিশালের আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে হেফাজতের পাশাপাশি আলেম সমাজ ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এদিকে সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ঐক্যে ফাটল
ধরেছিল। কিন্তু প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে দফায় দফায় বৈঠক চলছে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। দুদলের মেয়রপ্রার্থীই আশা করছেন, দ্বন্দ্ব নিরসন করে তারা একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতার পথেই হাঁটছেন। তবে দুজনের মধ্যে কে প্রার্থী থাকছেন, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ওবায়দুর রহমান মাহাবুব আলেম সমাজকে নিয়ে ভোটের মাঠে নামার ঘোষণায় কপাল পুড়তে পারে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের। কারণ হেফাজতে ইসলাম সমর্থকরাই বিএনপির ‘ভোটব্যাংক’। আর তাই বিএনপির পথের কাঁটা হতে পারেন হেফাজত তথা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহাবুব।
ভোটের সমীকরণে বিপদে আছে আওয়ামী লীগও। কারণ বাম সংগঠন দুটির মেয়রপ্রার্থী নগরের ভূমিহীন ও কলোনিবাসীর কাছে জনপ্রিয়। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহকে ভোট হারাতে হতে পারে। কারণ বাম সংগঠনের অনুসারীরা সাধারণত তাদের প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে থাকেন।
নগরীর বেলতলা জামেয়া ইসলামিয়া মাহামুদিয়া মাদ্রাসা এলাকায় গত সোমবার সকালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহাবুব বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে সভা করেন। সেখানে শিক্ষকরা বলেন, আল্লামা শফীর প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তারা মাহাবুবের পক্ষে কাজ করবেন। এ ব্যাপারে ওবায়দুর রহমান মাহাবুব বলেন, শনিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আমার ওস্তাদ মাওলানা আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি নির্বাচন করার জন্য অনুমতির পাশাপাশি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই সব আলেম-উলামাকে নিয়ে সোমবার জামেয়া ইসলামিয়া মাহামুদিয়া মাদ্রাসায় বৈঠক করেছি। এ নির্বাচনে বরিশালের আলেম সমাজের মহাঐক্য হবে।
এদিকে সিপিবির মেয়রপ্রার্থী দলটির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমঝোতার জন্য আলোচনা চলছে। তবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমি মেয়রপ্রার্থী হওয়ার কথা বলেছি। মণীষার এখনো অনেক সময় রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর আর সিলেটে আমাদের প্রার্থীরা বাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। সে হিসেবে বরিশালে বাসদের ছাড় দেওয়া উচিত। তার পরও দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা চাচ্ছি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে।
বাসদের মেয়রপ্রার্থী ডা. মণীষা চক্রবর্তী বলেন, ঐক্যের চেষ্টা চলছে। সিপিবিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সিটি নির্বাচনে বাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে। প্রতিদান হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিপিবির প্রার্থীকে সমর্থন দেবে বাসদ। আশা করি, সিপিবি বিষয়টি মেনে নেবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আগামী ৯ জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ এবং ৩০ জুলাই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।