পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমাতেই হেবে। আগে বলা হয়েছিলো ১২ বছর সময় আছে এটি করার জন্য। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, আগামী দেড় বছর পৃথিবীকে রক্ষা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। যা কিছু করার এই সময়ের মধ্যে করতে হবে।
এই শতাব্দিতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখতে চাইলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। এমনই দাবি করেছে গত বছর জাতিসংঘের জলবায়ূ বিষয়ক (ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ,আইপিসিসি) বিজ্ঞানীরা। ২০১৭ সালে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ূ বিজ্ঞানী বলেন, অতো সময় নেই। কার্বন নির্গমন কমাতে ২০২০ সালের আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পৃথিবীকে রক্ষার ২০২০ সালই শেষ সময়।
সম্প্রতি কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসও একই কথা বলেন। যুবরাজ বলেন, আগামী ১৮ মাসেই নির্ধারিত হবে জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের টিকে থাকার মাত্রায় আটকে রাখতে পারবো কিনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নিরাপদ সীমার মধ্যে রাখতে পারবে না। চলতি শতাব্দির শেষ নাগাদ তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
জানা যায়, এ বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পরিকল্পনাগুলো ৫/১০বছর মেয়াদী। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমাতে ব্যবস্থা নেবে। তারপর এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও ওই চুক্তির ‘রুলবুকই তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে, তা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নিরাপদ সীমার মধ্যে ধরে রাখতে পারবে না। এ অবস্থায় এ শতাব্দির শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পটসড্যাম ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের হ্যান্স জোয়াকিম শেলনহুবার বলেন, ‘জলবায়ু বিষয়ক অঙ্কটা নির্মমভাবেই স্পষ্ট । অবহেলায় পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি হবে, যদি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর ক্ষত সারিয়ে তোলা সম্ভব না হয়। এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ডাকা বিশেষ জলবায়ু সম্মেলনকে উদ্দেশ্য করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, কোন দেশ যদি তাদের কার্বন নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর প্রস্তাব করতে পারে, তবেই যেন তারা এই সম্মেলনে আসে। এ বছরের শেষে চিলির সান্তিয়াগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ নামে একটি সম্মেলন হবে। সেখানেও এই প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে যে সম্মেলন হবার কথা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ কাজের জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার তা দেখাতে পারবে বলে আশা করছে যুক্তরাজ্য। এ ব্যপারে দেশটির পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ বলেন, যদি এই সম্মেলন আয়োজনে সফল হয়, তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই আটকে রাখা যায়, সম্মেলনে অংশগ্রহকারী সব দেশকে সেরকম পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইউরোপ জুড়ে তাপমাত্রা যে বাড়ছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজনীতিবিদরাও এখন এ বিষয়ে সচেতন হয়েছেন। যুক্তরাজ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করেছে। সামনের বছর যখন যুক্তরাজ্যে জলবায়ু সম্মেলন হবে, তখন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পাকাপাকিভাবে প্যারিস চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান এবং ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বিজয়ী হন, তাহলে উল্টোটাও হতে পারে।
তবে যাই হোক বিরাট প্রভাব পড়বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর সংগ্রামে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর কাজে বাগড়া দিতে বর্তমানে বেশ কয়েকটি দেশ জোট বেঁধে চেষ্টা চালাচ্ছে । যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কুয়েত ও রাশিয়া রয়েছে। এসব দেশ জাতিসংঘে আইপিসিসির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনাই আটকে দেয়। সম্প্রতি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় সৌদি আরবও আপত্তি জানায়।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের জলবায়ু উপদেষ্টা ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের অধ্যাপক মাইকেল জ্যাকবস বলেন, যুক্তরাজ্যের জলবায়ু সম্মেলনের সুযোগ যদি কাজে লাগানো না যায় তাহলে তাপমাত্রা এক দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য অর্জনের কোন সুযোগ থাকবে না।