হায়াত রিজেন্সি হোটেল বার্মিংহাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে। উপমহাদেশে বিশ্বকাপ হলে টিম হোটেল থেকে যে দূরত্বে নিরাপত্তা চৌকি থাকার কথা, বার্মিংহামে সেখানে নাইট ক্লাব। তাই রবিবারের সকালে জমজমাট উইকএন্ড নাইটের বর্জ্য ছড়িয়ে এখানে ওখানে। এসব দিনে দেরিতে জাগে ইউরোপের শহরগুলো, বার্মিংহামও ব্যতিক্রম নয়।
বিদেশ সফরে বাংলাদেশ দলের নাইট আউটে যাওয়ার অভ্যাস বহুদিন হলো নেই। তাই গতকাল প্র্যাকটিসে যাওয়ার জন্য মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বাস মিস করায় উইকএন্ড নাইটের কোনো প্রভাব নেই। টিম রুলস অনুযায়ী দেরির মাসুল হিসেবে এক শ পাউন্ড জরিমানাই শুধু গুনতে হয়েছে এ পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে, ভারতের বিপক্ষে যাঁকে নতুন বলে ছুটতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
অবশ্য মুস্তাফিজুর রহমানের মতো সাইফ উদ্দিনের পরিসংখ্যানেও পুরনো বলে স্বাচ্ছন্দ্যের ছাপ বেশি। তাই ভারতের বিপক্ষে ২ জুলাইয়ের ম্যাচের আগেও প্রথম ১০ ওভারের বোলিং নিয়ে উদ্বেগ আছে। দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ স্বভাবতই ব্যাখ্যার ঢালে বিষয়টি আড়াল করতে চাইলেন গতকাল, ‘আসলে এটা নির্ভর করে উইকেটের চরিত্রের ওপর। বার্মিংহামের উইকেট কেমন হবে জানি না।
উইকেটে বল যদি টার্ন করে, তাহলে এক প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ করাই ভালো। তাতে শুরুতে উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই আজকের (ইংল্যান্ড-ভারত) ম্যাচে দেখি কী হয়। তবে উইকেটে যদি সামান্য সুইংও থাকে, আমরা চাইব পেসাররা যেন সেটার সদ্ব্যবহার করে। সবটাই নির্ভর করছে উইকেটের ওপর। সেভাবেই নতুন বল ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হবে।
গতকাল প্র্যাকটিসে যাওয়ার আগে টিম হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছিলেন ওয়ালশ তখন ভারতীয় স্পিনারদের পিটিয়ে রানের পাগলা ঘোড়া ছোটাচ্ছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয়। অথচ নতুন বলে রান আটকে রেখেছিলেন ভারতের দুই পেসার জসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সামি। তাতে আজকের ম্যাচেও নতুন বলে পেসারদেরই অগ্রাধিকার প্রাপ্য।
ওয়ালশ নিজে নতুন বলের বোলার ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সীমিত পেস ভাণ্ডারে এমন কোনো রত্ন নেই যে চট করে বলে দেবেন নতুন বলে নিজের পছন্দের কথা, ‘আমার চেষ্টা থাকে সবাইকে তৈরি রাখা যেন নতুন বলে বল করতে পারে। আমরা এখন তিন পেসার খেলাচ্ছি। রুবেলও একটা ম্যাচ খেলেছে। আমি তো মনে করি নতুন বলে এরা সবাই বল করতে পারে, সেভাবেই ওদের তৈরি রাখা হয়েছে। উইকেটে যদি মুভমেন্ট থাকে, তাহলের মুস্তাফিজের চেয়ে একটু বেশি সুবিধা পায় সাইফ উদ্দিন। কিন্তু ফিজ এখনো বল বাঁক খাওয়াতে পারে। মাশরাফি তো সব সময়ই সুইং পায়। তাই সে অর্থে নতুন বলে বোলিংয়ের জন্য আমাদের বিকল্পের অভাব নেই।’
বিকল্প অনেক কিন্তু মাঠে এই সুবিধার প্রতিফলন নেই। ভারতের বিপক্ষে নতুন বলে সাফল্য অত্যন্ত জরুরি। কে না জানে যে, ভারতের টপ অর্ডার দাঁড়িয়ে গেলে প্রতিপক্ষ ছিটকে পড়ে ম্যাচ থেকে। আবার ভারত বধের সহজতম রেসিপি হলো ওদের টপ অর্ডারকে দ্রুততম সময়ে ফিরিয়ে দেওয়া।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য করা ছকে বোলিং শুরু করবে বাংলাদেশ—মাশরাফি ও সাইফ উদ্দিনকে দিয়ে। অধিনায়ক উইকেট পেয়েছেন মোটে একটি, তবে এ নিয়ে বিশেষ খেদ নেই ওয়ালশের মনে, ‘উইকেটই তো সব নয়। রান রেটও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাশ উইকেট পায়নি। টুর্নামেন্টে এমন অনেকেই আছে, যারা উইকেট পায়নি। কিন্তু ওর ইকোনমি রেট দেখুন, খুবই ভালো। আমি নিশ্চিত যে ম্যাশ উইকেটও পাবে। তবে সত্যি বলতে কি, ওর উইকেট না পাওয়া নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই, আমি চাই ও টাইট লাইনে বল করুন। এ কাজটাই ও করে আসছে। আর ও শুরুতে উইকেট পেয়ে গেলে তা আমাদের জন্য বোনাস। আরো তো দুটি ম্যাচ আছে। আমি আশাবাদী যে ম্যাশ সেটা করবে।’
সেটা ভারতের বিপক্ষেই হতে পারে। একটা সময়ে বীরেন্দর শেবাগের উইকেট নিতেন মাশরাফি। রোহিত শর্মার জন্য আচমকা ভেতরে ঢোকা বল আছে তাঁর স্টকে। আবার বিরাট কোহলির জন্য আউট সুইংয়ে আস্থা মাশরাফির। তাই ভারতের বিপক্ষে ২ জুলাই হতে পারে বোলার মাশরাফির প্রত্যাবর্তনের দিনও।