মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক। তিনি ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্রথম নির্বাচিত মেয়র, পরে সদর আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও হুইপ। বিসিসি নির্বাচনের আগে সরোয়ার দাবি করেন, বিসিসির বদলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার আগ্রহ বেশি। তবে দলের নির্দেশে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন তিনি। দলের ম্যান্ডেট নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এই বিএনপি নেতা। তবে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন তিনি। নিজের এই ফল বিপর্যয় সম্পর্কে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘নির্বাচন তো শুরুই করতে দেয়নি, ভোট তো পরের কথা।’
এত কম ভোট পাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোনও প্রচারণা চালতে দেয়নি। নেতাকর্মীদের আটক করেছে। আগের রাতে নৌকায় সিল মেরে রেখেছে। পরের দিন সকালেও আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকায় সিল দিয়েছে। শতাধিক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রের মধ্যেই ঢুকতে দেয়নি। একারণে সকাল ১০টার দিকে আমি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করি। নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোট বন্ধের আবেদন জানাই। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে প্রহসনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, সেভাবেই বরিশালের নির্বাচনে তারা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরেছে। আর এই প্রহসনের নির্বাচনের জন্য একদিন তাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বরিশালের এই নির্বাচনের প্রভার পড়বে।’
পরবর্তিতে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীতে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে ভোট কারচুপির বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো।’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে ছয়জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আর মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ জন ভোটার। নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি কেন্দ্রের বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে যেসব প্রার্থী মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পাবেন না তাদেরই জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। সে হিসেবে আট ভাগের এক ভাগের সমান ভোটের সংখ্যা হয় ১৬ হাজার ৬৬২ দশমিক ৫ ভোট। এই হিসাবে জামানত হারাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীসহ নির্বাচনের ছয় মেয়র প্রার্থী।
নির্বাচনের আগের রাতে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছিলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে ভোটের দিন মাঠে থাকবে বিএনপি। ভোটারদের ওপর তার আস্থা আছে। ভোট কারচুপি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বিএনপি লড়াই করবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরের আগেই তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেন। বিএনপির নেতারা নির্বাচনের এই ফলের জন্য একক কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের কারচুপিকে দায়ী করছেন।