28 C
Dhaka
জুলাই ৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় রাজণীতি

নিজের পিঠে গুলি খেয়ে নেতাজিকে বাঁচিয়ে ছিলেন “কর্নেল নিজ়ামুদ্দিন”

লক্ষ্মী সায়গলদের সঙ্গে বার্মার জঙ্গলে হাঁটছেন নেতাজী। হঠাত ঝোপের কাছে যেন ঝলসে উঠল বিদ্যুৎ সঙ্গে গুড়ুম!নেতাজিকে লক্ষ্য করে। না, লাগেনি। বাঁদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেতাজীকে বাঁচিয়ে দেন। তিনি নিজামুদ্দিন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা, দেহরক্ষী, গাড়ির চালক কর্নেল নিজ়ামুদ্দিন। বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুতত্ত্ব এক কথায় খারিজ করে দেন এই মানুষটাই।উত্তরপ্রদেশ সরকারের তৈরি জনতা আয়োগে নেতাজি নিয়ে তদন্তের সাক্ষী ছিলেন নিজ়ামুদ্দিন। নেতাজি মৃত্যু রহস্য সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। জানিয়েছেন, ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট নেতাজিকে শেষবার বার্মার ছিতাং নদীতে নৌকায় তুলে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই সাবমেরিনে জাপানে চলে যান নেতাজি। এরপর আর কখনও নেতাজির সঙ্গে নিজামুদ্দিনের সাক্ষাৎ হয়নি।

১৯৪২ সালে আজামগড় থেকে পালিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যান ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এরপর নেতাজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্ত হন আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে। নেতাজীর সঙ্গেই প্রাচ্যের রণাঙ্গনেঅংশ নিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সালে ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বারাণসী এলে নিজামুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন। গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৬ বছর তিন মাস ১৪ দিন বয়সে আজমগড়ের বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। রেখে গেলেন স্ত্রী আজবুল নিশা, তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে। ১০৭ বছর বয়সে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে যাওয়ার সময় তাঁর নাম ফের নতুন করে সর্বসমক্ষে আসে। ১১৬ বছর বয়সি কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলছেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি।

সবথেকে বেশি বয়সি হিসেবেও তাঁকেই ধরা হত।নিজামুদ্দিনের আসল নাম সইফুদ্দিন। আজ়মগড়ের মুবারকপুরের ঢাকুয়া গ্রামে ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইমাম আলি সিঙ্গাপুরে একটি ক্যান্টিন চালাতেন। গ্রাম ছেড়ে তিনি বাবার কাছে চলে যান। পরে সেখানেই আজ়াদ হিন্দ বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৪৩-৪৫ পর্যন্ত আজ়াদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন তিনি। ক্রমেই নেতাজির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁকে দেহরক্ষী, গাড়ির চালক হিসেবেও নিযুক্ত করেন নেতাজি। এই সময়েই ১৯৪৩ সালে বার্মার জঙ্গলে নেতাজিকে বাঁচাতে গুলি খেয়েছিলেন নিজামুদ্দিন। ২০১৬ সালে টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আমরা হাটছিলাম। হঠাত ঝোপের আড়াল থেকে একটা বন্দুক গর্জে উঠল। আর আমি ঝাঁপ দিলাম নেতাজির সামনে। ৩ টি বুলেট লাগে পিঠে। বহুক্ষণ বেহুঁশ ছিলাম।

জ্ঞান ফিরতে দেখি নেতাজি পাশে দাঁড়িয়ে। ক্যাপ্টেন লক্ষী সায়গল আমার শরীর থেকে বুলেটগুলো বের করেছিলেন। ‘তাঁর নিজ়ামুদ্দিন নামও নেতাজির দেওয়া। কর্নেল নিজ়ামুদ্দিন নিজে গাড়ি করে নেতাজিকে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন মায়ানমারের ছিতাং নদীর ধারে। যেখান থেকে সাবমেরিনে জাপানে চলে যান নেতাজি। যাওয়ার সময় রেজিমেন্টের দায়িত্ব বর্তায় নিজ়ামুদ্দিনের ঘাড়ে। নেতাজির দেওয়া দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করেছিলেন নিজ়ামুদ্দিন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পন করে ১৯৪৫ সালে। তিনি চলে আসেন রেঙ্গুন।

বিয়ে করেন আজবুন নিশাকে। রেঙ্গুনেরই স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের গাড়ি চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের ৫ জুন ফিরে আসেন আজমগড়ের গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ২০০১ সালে নিজের পরিচয় সবার জনসমক্ষে আনেন তিনি।নেতাজির মতোই রহস্যময়! নেতাজির মতোই আমাদের হৃদয়েও অমর হয়ে থাকবেন নিজামুদ্দিন। নিজের কাছে সর্বদা আইএনএ-এর পরিচয়পত্র। বাড়ির নাম ‘হিন্দ ভবন’। ছাদে চব্বিশ ঘণ্টা ভারতের পতাকা। মুখে ‘জয় হিন্দ’। স্যালুট নিজামুদ্দিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official