তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাত দফা দাবিতে বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। দলটি নতুন কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে। নতুন কর্মসূচিতে ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদেরও যুক্ত করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ জন্য দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, নতুন কর্মসূচি গত রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে আবারও বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। এভাবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিএনপি মাঠে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে গতরাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হলেও তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ১০ অক্টোবর ধার্য আছে। আলোচিত এই মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্যতম আসামি। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এই মামলায় নেতিবাচক রায়ের আশঙ্কা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে, যাতে সরকার ২১ আগস্ট মামলার রায়ের সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে গুলিয়ে ফেলতে না পারে।
গতরাতের স্থায়ী কমিটির বৈঠক–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন কর্মসূচির পাশাপাশি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করা এবং বিএনপির সংস্কারপন্থীদের দলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত অনেক নেতা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাঁদের ব্যাপারে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত অনেকে আড়ালে–আবড়ালে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের প্রকাশ্য হতে হবে। যাঁরা আসতে চান, তাঁদের জন্য বিএনপির দরজা খোলা।’
বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তিনি কমনওয়েলথের মহাসচিবের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিগগির এই চিঠির জবাব দেবেন তিনি।
বিএনপির সূত্র আরও জানায়, গতরাতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে আসার অভিমত আসে। ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে কথা বলবেন।
ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, চিকিৎসা শেষে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ড. কামালের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বিএনপির নতুন কর্মসূচিতে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের যুক্ত করতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতরাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পক্ষে। আমাদের সবার দাবি যখন এক, তখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হতে সমস্যা কী। ড. কামাল হোসেন দেশের বাইরে, অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, হবে।’
দুই দিনের কর্মসূচি শেষ
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করাসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে দুই দিনের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এর আগের দিন বুধবার অনেক জেলায় সমাবেশ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। কোনো কোনো জেলায় পুলিশের লাঠিপেটায় কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
গতকাল ঢাকায় বিভাগীয় কমিশনারকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা পৃথক স্মারকলিপি দেয়। এ সময় পুলিশ ১৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।