ভোলা প্রতিনিধি//মো: নিশাত:
ভোলার বোরহানউদ্দিন থানা ভবন থেকে একশত মিটারের দূরে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পৌর এলাকার একটি মহল্লার নাম ভাওয়াল বাড়ি। একসময় এখানে ভাওয়ালরা থাকতেন। তাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে এখানে হিন্দু-মুসলিমসহ প্রায় ৪০টি পরিবার বাস করছে। রবিবার বোরহানউদ্দিনে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে ৪জন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনার পর একদল লোক ভাওয়াল বাড়ির মধ্যে শ্রী শ্রী গৌর নিতাই আশ্রম মন্দিরে হামলা করে সেখানে থাকা চেয়ার ও প্রতিমা ভাংচুর এবং কয়েকটি হিন্দু বাসায় ভাংচুর করে ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
এঘটনায় মন্দিরের সভাপতি সত্য প্রসাদ দাস বোরহানউদ্দিন থানায় অজ্ঞাত ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে রবিবারের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার ভোলার উপ-পরিচালক মামুদুর রহমান, কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটিও শিক্ষা) আতাহর মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহসিন আল ফারুক এবং বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক বুধবার দুপুরে ভাওয়াল বাড়িতে ভাংচুর করা মন্দির ও বাসাগুলি পরিদর্শন করেন।
সত্য প্রসাদ দাস জানান, রবিবার দুপুরের দিকে হঠাৎ শতাধিক সন্ত্রাসী তাদের মন্দিরে হামলা, ৮/৯টি বাসা ভাংচুর এবং তাকেও মারধর করে।
জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্থানীয় সরকার ভোলার উপ-পরিচালক মামুদুর রহমান জানান, তিনি আজ বুধবার দুপুরে ভাওয়াল বাড়িতে ভাংচুর করা মন্দির ও বাসা পরিদর্শন করেন। এ সময় কমিটির অন্য দু’সদস্য ও উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, আলেম ওলামাদের সঙ্গে সভা করেছেন এবং তাদের বক্তব্য ও ঘটনার তথ্য উপাত্ত নিয়েছেন।
তিনি আরো জনান, তাদের তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার শেষ দিন বুধবার। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট করতে আরো কিছু সময় লাগবে তাই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আরো দু’দিন সময় বাড়িয়ে নেবেন। বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক জানান, মন্দির ও হিন্দু বাড়ি হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এখন প্রকৃত আসামি ও অপরাধীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারের কাজ চলছে।
মন্দিরের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় দাস জানান, রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়রা যখন আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিচ্ছিলেন তখন এক দল মন্দির ও হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায়। বোরহানউদ্দিনে এখনো বিজিবি ও র্যাবের টহল চলছে। এদিকে সোমবার থেকে নিখোঁজ বোরহানউদ্দিনের বিপ্লবের ভগ্নিপতি বিধান মজুমদার ও তার দোকানের কর্মচারী সাগরকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিধানের পিতা বিনয় ভূষন মজুমদারের নিকট হস্তান্তর করেছেন। বিধানের বাবা বিনয় মজুমদার জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মোবাইলে বিধান জানান তাকে ভোলার র্যাব অফিস থেকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি রাত একটার দিকে এলাকার ইউপি সদস্য আশরাফুল আলম টুলু এবং তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজন নিয়ে ভোলার অস্থায়ী র্যাব ক্যাম্প এ যান। তারপর কাগজে তাদের স্বাক্ষর রেখে বিধান মজুমদার ও বিপ্লবের চাচাতো ভাই সাগরকে ছেড়ে দেয় র্যাব।
এ ব্যাপারে র্যাব-৮ এর ভোলা ক্যাম্পের মেজর খান সজিব জানান, তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিধান ও সাগরকে এনেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, আজ তাদের সাথে জেলা প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে বৃহস্পতিবারের মানববন্ধন তারা করবেন না। তবে তারা পূর্ব ঘোষিত শুক্রবারের দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠান করতে চান। এখানকার পরিবেশ প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে।