27 C
Dhaka
জুলাই ৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় জেলার সংবাদ বরিশাল রাজণীতি

এবার বোমা ফাটালেন সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ

কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবকলীগের সকল প্রকার কার্যক্রমে বিরত থাকতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ এই প্রথম মিডিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুললেন। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের পর মিডিয়ায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত মিশ্রিত তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও সম্পদে ফুলে-ফেঁপে ওঠার অভিযোগ খন্ডন করে বলেছেন- প্রকাশিত সংবাদের সাথে তার জীবনের বাস্তবতার কোন মিল নেই। মনগড়া ও চটকদার সংবাদ পরিবেশন মাধ্যমে তাকে হেয় করার এই ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তার দাবি এসবই ঘটছে বরিশাল থেকে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের নীতিগত দ্ব›দ্ব থেকেই দলের একটি অংশ ষড়যন্ত্রের জাল বপন করে সময় বিশেষ তাকে হেয় করার সুযোগ নেয়। সর্বশেষ দলীয় সমর্থিত একজন নরসুন্দরকে ব্যবহার করে আক্রোশমুলক নানা অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে।

বুধবার সকালে তার নির্বাচনি এলাকা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা শহরের ‘মুক্তিযোদ্ধা পার্ক’ মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল ৪ আসনের সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ উপরোক্ত মন্তব্য করে তার বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে তা খন্ডন করেন। সাংসদের এই উদ্যোগের দুইদিন আগে স্থানীয় কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পেশায় নরসুন্দর সঞ্জয় চন্দ্র দলীয় নেতা পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির একাধিক অভিযোগ উপস্থাপন করে তার অঢেল সম্পদ অর্জনের অষ্পষ্ট বর্ণণা দিয়েছিলেন। বরিশাল শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সাংসদ পঙ্কজ মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন এ ধারনা করা হলেও গোটা আয়োজনজুড়ে কীভাবে, কারা কখন থেকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তুলেছিল এবং তা মিডিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার নেপথ্যের রহস্য ভেদ করার যুক্তিকতা তুলে ধরেন। এসময় তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শীর্ষে থাকা নেতৃবৃন্দের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি পরিস্কার করার চেষ্টা করেন।

সাংসদ পঙ্কজের দাবি- তিনি সঠিক পথে অবস্থান নেওয়ায় দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়া জেলার দায়িত্বশীল নেতারা তাকে কোনঠাসা করতেই দীর্ঘদিন ধরে তৎপর। এসময় তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসকে প্রকাশ্যে দায়ী করলেও একই কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে পরোক্ষভাবে এর সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। জেলার এই দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য ও থানা- ইউনিয়ন কমিটি গঠনের অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার উল্টো অভিযোগ তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সদস্য অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট মুনসুর আহম্মেদকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে দলীয় বিভেদ তৈরি করা হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার দাবি- বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজ উল আলম লিটনের পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটেছিল। জেলা আ’লীগ চেয়েছিল মুনসুর আহম্মেদকে মাঠে নামিয়ে একটি আবহাওয়া তৈরি করে তাকে বিতর্কিত করা। নির্বাচন পূর্ব সংসদ ভবন এলাকায় অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে মুনসুর আহম্মেদকে কোন এক নেতা ছেড়া পাঞ্জাবী পরে ঢাকায় ওঠার পরামর্শ দেওয়ার প্রমাণ উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনে জেলা নেতৃবৃন্দ কীভাবে তাকে ঠেসে ধরে চলেছে তার একটি কায়দাও তুলে ধরেন। এমনকি সেই মুনসুর আহম্মেদকে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বরিশালে ডেকে নিয়ে সাংসদ পঙ্কজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে মেহেন্দিগঞ্জের উপজেলা নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। জেলা কমিটির এই নেতরাই সঞ্জয় চন্দ্রকে পুনরায় মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে গত সোমবার তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলতে কৌশল নেয়। এর আগে একই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে সন্ত্রাস নৈরাজ্যর অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই ভুমিকায় জেলা কমিটি শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের সন্তান শাম্মি আক্তারের সাথে একট্টা হওয়ার দাবি করেন।

সোমবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জয় সাংসদ পঙ্কজের বিরুদ্ধে তার নিজ ভাইয়ের স্ত্রীকে দুর্নীতির মাধ্যমে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, তার ভাইকে ভূমিদস্যু এবং তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজিসহ দেশ-বিদেশে দৃশ্যমাণ সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা উদাহরণ তুলে ধরা হয়। সাংসদ পঙ্কজের দাবি- ওই অভিযোগসমূহ মনগড়া। একটিরও প্রমাণ নেই দাবি করে তিনি বলেন- নিজ যোগ্যতা ও মেধায় তার ভাইয়ের স্ত্রী কল্যাণী দেবনাথ চাকরি নিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় যে বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে- সেই স্থাপনা তার নিজের নয়, অনুদান হিসেবে ২০০৪ সালে সরকারের দেওয়া ওই সম্পত্তিতে নিয়ম মেনে তার মা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করেন। ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তা স্বীকার করে বলেন- সেটি দেড় যুগ আগে ক্রয় করা। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং একটি মার্কেট রয়েছে বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে- তাও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে হাস্যরসের মাধ্যমের সাংসদ পঙ্কজ বলেন- ওই সম্পত্তি নিজের তো নয়, উপরন্ত যখন কথা উঠেছে তখন তাকে লিখে দিলে খুশি হতেন।

বিশেষ করে ঢাকার সড়কপথে চলা বিহঙ্গ পরিবহন নিয়ে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনে অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্পষ্ট করেন যে- ৬ জনের অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এই পরিবহন ব্যবসার সাথে তিনি যুক্ত। এবং তার জ্ঞাত আয় সম্পর্কিত তথ্যে তা উল্লেখ করা আছে। পারিবারিক ব্যবহারে একটি জিপগাড়ির অস্তিত্ব নিজেই তুলে ধরে বলেন এটি মান্ধাতা আমলের। যা তৎসময়ে ৪ লাখ টাকায় অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রয় করেন সাংসদ হওয়ার আগেই। ভূমিদস্যু ও টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত থাকলে তার প্রমাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন- হিজলা মেহেন্দিগঞ্জে এই ধরনের রেকর্ড তার নেই। বরং এই জনপদের হাটবাজারের ইজারা বাতিলসহ নৌ-টার্মিনাল ও খেয়াঘাট টোলমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

সেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃত্ব থেকে তাকে কেন দূরে রাখা হলো, মিডিয়াকর্মীরা এমন প্রশ্ন রাখার আগে আভাস পেয়েই এ প্রসঙ্গটি তিনি নিজেই সামনে নিয়ে আসেন। এই সাংসদ মনে করেন- দীর্ঘ ১৭ বছর একই পদে থাকায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত বিতর্ক এড়াতেই তাকে সম্মেলনের কার্যক্রম থেকে আপাতত দূরে সরিয়ে রাখতেই এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু দেশব্যাপি দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানের মাঝে এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকের ধারনা হতে পারে- তিনিও দুর্নীতির তালিকায় থাকায় এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পঙ্কজ জোর দিয়ে বলেন- নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এখানে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। কিন্তু ইর্ষাকাতর জেলার নেতৃবৃন্দ সুযোগ বুঝে অপপ্রচারের সামিল হওয়ায় মিডিয়ায় বিষয়টি ভিন্নভাবে আসছে। তার ওপর জেলা নেতৃবৃন্দের অবিচারের নমুনা দেখিয়ে বলেন- দুই দফা সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে জেলা কমিটির সদস্য পদ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা কমিটির বৈঠকেও তাকে ডাকা হচ্ছে না। অনুন্নত ও বিএনপির দুর্গ হিসেবে বিবেচিত সেই হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে অবস্থার আমুল পরিবর্তন এবং আওয়ামী লীগের ভোট বৃদ্ধির দাবি করে এই সাংসদের অভিমত- ইতিবাচক এই ভুমিকায় জেলার নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে একপাশে করে রাখায় তিনি রাজনীতিতে বরিশাল নয়, ঢাকামুখী হতে বাধ্য হয়েছেন। এতে আরও সংক্ষুব্ধ জেলার নেতারা যাকে তাকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে নৌকার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে তাকে বিতর্কের মধ্যে ফেলতে চায়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন নির্বাচনে ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকুলে রাখতেই স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিজয় ঘরে তুলে নিয়ে আসছেন। কিন্তু কেন্দ্রে তা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দলের লোকদের আ’লীগে নিয়ে এসে কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন- দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তারা চিহ্নিত হলেও অনেকের নাম উহ্য রেখে প্রকৃত বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের এই তালিকায় কৌশলে ঠাই দিয়ে তাকে কোনঠাসা করতে গিয়ে দলকেই দুর্বল করছেন।

জেলার নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে তার এই সংবাদ সম্মেলনকে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপস্থী কীনা এমন প্রশ্নে এই সাংসদের ভাষ্য হচ্ছে- তিনি কারও নাম উল্লেখ করে কথা বলতে চান না। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে ঠেকিয়েছে যাকে-তাকে দিয়ে তাকে হেয় করতে ঘনঘন সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ তুলে পত্রিকার শিরোনাম করার ধারাবাহিকতায় তিনি মিডিয়ার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছেন।

দলীয় নেতাকর্মী ও ১৫ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে মাঠে প্যান্ডেল করে অনেকটা কর্মীসভার আদলে ডাকা বুধবারের এই সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়াকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেলেও তার লেজ টেনে জেলার রাজনীতির টানপোড়নের অজানা তথ্য প্রকাশ করে উত্তর সাজাতে এই ঝানু রাজনীতিবিদের কারিশমা দেখা গেছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

বরিশালে যুবলীগ কর্মীর তাণ্ডব: মা-মেয়েকে কুপিয়ে জখম

banglarmukh official

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official