ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটারের বেশি শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূল অতিক্রম করবে তখন জোয়ার থাকবে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৭ ফুট বেশি উচ্চতার ঢেউ থাকবে। জোয়ার শুরু হবে বিকেল ৫টা থেকে, পিক টাইম হবে রাত ৯টা। সুন্দরবনে এসে এটি ধাক্কা খাবে। তবে বাতাসের গতিবেগ থাকবে অনেক।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যায় বাগেরহাটে আঘাত হানতে পারে। এসময় বাতাসের গতিবেগ কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার থাকতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে। সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করা শুরু করলে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা উপকূল অতিক্রম করে যাবে।
‘এরপর এটি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়ের বেগ অনেক থাকবে। বিকেল ৪টা বা ৫টা থেকে ধরলে আগামী ২৪ ঘণ্টা পুরো বাংলাদেশে এর প্রভাব থাকবে। রংপুর বিভাগে প্রভাব একটু কম থাকলেও সারাদেশেই এর প্রভাব থাকতে পারে।’
কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি অতি প্রবল হয়ে প্রবেশ করবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সুন্দরবন একটা বাধা বলতে পারেন। এটা হয়তো অনেকটাই রক্ষা করবে। যেহেতু এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড়, তারপরও ওইরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় এখনও অতি প্রবল অবস্থায় রয়েছে। উপকূলের কাছাকাছি এসে হয়তো সামান্য তীব্রতা কমতে পারে। তবে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আবহাওয়াবিদ জানান, জোয়ার শুরু হবে বিকেল ৩টা দিকে। রাত ৯টা ৬ মিনিটে জোয়ারের বা জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ২ দশমিক ৮৫ মিটার হতে পারে পশুর নদীতে। পশুর নদী ছাড়াও খুলনা ও বরিশালে যেসব নদীতে জোয়ার থাকবে সেখানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশের পর ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাসার্ধ কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার আর ব্যাস ২০০ কিলোমিটার থাকতে পারে।
এর আগে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিমি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজ’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।’
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।’