29 C
Dhaka
জুন ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আবহাওয়া জাতীয়

বৈচিত্র্যপূর্ণ শীতঋতু,গ্রামে চলছে প্রাণোচ্ছলতার আয়োজন খেজুর রস

নজরুল ইসলাম তোফা:

হেমন্তের শেষেই শীতঋতুর আগমন, শীতের কনকনে ঠান্ডায় বাঙালির প্রথমেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে যেন খেজুর গাছের মিষ্টি রস।আবহমান বাংলার চাষীরা সে রসে নিজেকে ডুবিয়ে নেয়ার নান্দনিক দৃশ্য না দেখলে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য একেবারেই বৃথা।

হেমন্তের ফসল ঘরে উঠার পরপরই প্রকৃতির মাঝে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে, সেই শূন্যতার মাঝে আসলেই এমন শীতঋতুর আগমন ঘটে। উত্তরের মৃদু হাওয়াতে ঠান্ডা আমেজ, তা হেমন্ত ঋতুর পরেই যেন অনুভব হয়। এমন এই আগমনী বার্তাটা প্রকৃতিকে ঘোষণা করে থাকে খুুব শীঘ্রই শীত আসছে।

শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীতঋতু। একঘেয়েমি যান্ত্রিকতার জীবনকে অনেক পরিবর্তন এনে থাকে এই শীত ঋতুচক্র। বৈচিত্র্যপূর্ণ গ্রামীণ সংস্কৃতির এমন এই শৈল্পীক ঐতিহ্যের চরম প্রাণোচ্ছলতায় আসলেই ঋতুচক্র বছর ঘুরেই দেখা দেয় বারবার। হিমেল আবরণ টেনেই উপস্থিত হয় এমন শীত, তার চরম শুষ্কতা, নির্মম রুক্ষতা, পরিপূর্ন রিক্ততা আবার বিষাদের প্রতিমূর্তী হয়েও আসে এমন এই শীতঋতু।অপর দিকে, এমন শীতঋতু গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে উঠে, তাদের জীবনে শীত অর্থাৎ বিশেষ করে চাষীদের কাছে সে তো বিভিন্ন মাত্রায় হাজির হয়।

স্বপ্ন আর প্রত্যাশায়, তাদের অনেক খানি খেজুর গাছের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবেই যেন আর্থিক উন্নয়নে বসবাস। চাষীর জীবন সংগ্রামে অনেক কষ্টের মাঝেও অনেক প্রাপ্তিই যুক্ত হয়। বাংলার জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছের সঙ্গে ভূমিহীন চাষী, প্রান্তিক চাষী বা দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষের জন্য এই সময়টা হয় অনেক আনন্দদায়ক। কারণ, গাছই তো চাষীর অন্নদাতা। খেজুর গাছে যত্ন-আত্তি না করলে ‘রস’ মিলবে না। আর রস না মিললে গুড় হবে কি করে। পাটালি না দেখলে যেন ঘুম আসে না চাষীর। চাষীরা তাদের মেয়ে কিংবা বউয়ের হাতের কাঁচা সুপারির কচি পান গালেপুরে যেন এক বাঁশের ডালি মাথায় করে গঞ্জে বা দূর্বতী হাটে যাবেই বা কি করে।

পাটালি গুড়ের মিষ্টিমধুর গন্ধে চাষীরা বিক্রয় কাজে না থাকলে পেটে ভাতে বাঁচবে কি করে। শীত আমেজেই প্রকৃতির মাঝ হতে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য চাষীরা যেন চষে বেড়ায় সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে, তার বহিঃপ্রকাশে চমৎকার নান্দনিকতার সৃষ্টি কিংবা অপরূপ দৃশ্য পরিলিক্ষত হয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মাঝে এমন এই দৃশ্য অবশ্যই শৈল্পীকতার নিদর্শন। এ শৈল্পীক আস্থা ও বিশ্বাসকে নিয়ে প্রকৃতির মাঝেই বিশাল আকৃতির এক কুয়াশা চাদরে মুড়ি দিতে হয়। শীতেকালে এ রূপ সৌন্দর্যের আর একটি উপাদেয় সামগ্রী ‘খাঁটি শরিয়া তেল’, যা শরীরে মালিশ করে অনেকাংশে ত্বকের মশ্রিণতা ও ঠান্ডা দূর করে। এভাবেই তেল মালিশে খেজুর গাছে উঠলে নাকি ঠান্ডা দূর হয়।

এই শীতেই শাল, সেগুন, আমলকী, জামরুল, কৃষ্ণ চূড়া কিংবা শরিষের বনে লাগে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া। শীতের এমন বাতাসে রিক্ততার সুর বেজে ওঠলেও অনেক চাষীর আর্থিক উন্নয়নে জন্য এই শীতঋতুই প্রিয়। গ্রামাঞ্চলে খুব ভোরে অর্থাৎ সূর্য উদয়ের আগে, বহু খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে নামিয়ে আনতে চাষীর যেন কোনো প্রকার ক্লান্তি বা অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায় না । রাতের শেষে, কুয়াশার সকালে হিমশীতল ‘রস’ এমন হাড় কাঁপানি ঠান্ডাতে খাওয়ার স্বাদ একটু আলাদা। খুব ভোরে রস খেলে শীত আরো জাঁকিয়ে বসে। তবুও এমন শীতে শরীর কাঁপানি ঠান্ডার এক স্পন্দন যেন চরম মজা দায়ক।

ভোররে এই প্রকৃতি তখন ঘন কুয়াশার ধবল চাদরে ঢাকা থাক। ঠিক তখনই উত্তর দিকের প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় হাড়ে কাঁপন লাগিয়ে তীব্র শীত এসে জেঁকে বসে। সমগ্র প্রকৃতি সেসময় শীতের দাপটেই নির্জীব হয়। শীত লাগে লাগুক না, তবুও রস খাওয়ার কোন বিরাম নেই। এক গ্লাস, দুই গ্লাস খাওয়ার পর পরেই, কাঁপতে কাঁপতে যেন আরও এক গ্লাস মুড়ি মিশিয়ে মুখে তুলে চুমক দেয়া কিংবা রোদ পোহানোর যেকি আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা দূরহ। শীতের কুয়াশায় গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খড় কুটোয় আগুন জ্বেলে হাত পা গরম করে।

আবার তারা অপেক্ষা করে কখন যে রোদের তেজ প্রখর হবে। ‘রোদ’ পোহানো আরামের সঙ্গে আরও অপেক্ষা, তা হলো তাদের প্রিয় খেঁজুর ‘রস’। সে রস আসলে যথা সময়ে হাজির হলে তাদের কাছে যেন আনন্দ উল্লাসের কোনই কমতি হয় না। আবার যেন গ্রামের অভাবী মেয়েরা রংবে রংয়ের যে সব খেজুর পাতার খেজুর পাটি তৈরী করে তার উপর চলে রস খাওয়ার আসর। উপার্জনের জন্যেই ‘খেজুর পাতা’ শুকিয়ে তা দিয়েই “খেজুর পাটি” তৈরী।

পরে বিক্রয় করে সংসারের কিছুটা অর্থ সংকোলান হয়। দেখাও যায় গ্রামের অনেক পরিবার খেজুর পাটিতে ঘুমানো কাজে তা ব্যবহার করে।

‘খেজুর পাতা’ এক ধরনের সাহেবী টুপিও তৈরি হয়। খেজুরের পাতা, ডাল এবং গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার “মোরুব্বা” তৈরিতেই খেজুর গাছের কাটার ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। এক কথায় বলা যায়, এই খেজুর গাছের পাতার এবং ডাল সেতো কবর পর্যন্ত ব্যবহার হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official