একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীতে বহিরাগতদের অবস্থান ঠেকাতে সব আবাসিক হোটেলে রয়েছে কঠোর নজরদারি। র্যাবের পক্ষ থেকে ঢাকার হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যারা অবস্থান করছেন তাদের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেওয়া কিংবা নতুনদের গমনাগমনের বিষয়ে তথ্য পেতে কাজ করছে র্যাব সদস্যরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয় রাজধানীর ব্যাচেলরদের। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসা যাবে না ব্যাচেলর বা মেস বাসায়। পুলিশের বরাতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত ব্যাচেলররা। বিষয়টি স্বীকার করেছে পুলিশও। রাজধানীর বাড্ডা, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, মণিপুরি পাড়া ও মিরপুর এলাকায় বসবাসরত বেশ কয়েকজন ব্যাচেলর পুলিশের বরাতে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে ফ্ল্যাট ছাড়ার নির্দেশনা পেয়েছেন।
বুধবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হোটেলগুলোতে তল্লাশি শুরু করে র্যাব। এ সময় হোটেলের রেজিস্টার চেকসহ সন্দেহ হলে প্রয়োজনে কক্ষে গিয়ে বোর্ডারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা।
র্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার রাতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হোটেলে কোনো সন্ত্রাসী বা সন্দেহজনক কেউ অবস্থান করছে কিনা তা নিশ্চিত হতেই এ তল্লাশি।’
এদিকে, নির্বাচন ঘিরে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে বিশেষ টহল অব্যাহত রেখেছে র্যাব। নির্বাচন পর্যন্ত এ টহল চলমান রাখার কথাও জানিয়েছে বাহিনীটি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাবের এই বিশেষ টহল দেখা গেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি আমাদের বিশেষ টহল চলছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।’
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দেশজুড়ে র্যাবের ১০ হাজার সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৫৭টি বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ৪টি হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্তে কোনো গোষ্ঠী সহিংসতার দুঃসাহস দেখালে দ্রুততম সময়ে বিশেষ প্রশিক্ষিত স্পেশাল ফোর্স সদস্যদের পাঠানো হবে। এছাড়া বোমা নিষ্ক্রিয় দল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা কার্যক্রমও অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছেন র্যাব প্রধান।
ফার্মগেইটের মেসে থাকা রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূরে আলম বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাসার মালিক ফোন দিয়ে বলেন- তাড়াতাড়ি বাসায় এসে ফ্ল্যাট খালি করে দিতে। ফ্ল্যাট ছেড়ে যাবো সমস্যা নেই, কিন্তু এতো দ্রুত কোথায় যাবো? একে তো আজ বৃহস্পতিবার। রংপুর যাওয়ার জন্য ট্রেন বা বাসের টিকিট কিছুই পাচ্ছি না।’ উত্তরা এলাকার একটি ভবনে ব্যাচেলর হিসেবে থাকেন নাইমুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাসার দারোয়ান এসে জানিয়ে গেলো থানা থেকে পুলিশ এসে বলে গেছে আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব ব্যাচেলরকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে। ভোটের পরে ফিরতে। আমাদের ভবনে থাকা বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে চলেও গেছে। কেউ কেউ হয়তো আজ রাত বা আগামীকাল সকালের মধ্যে চলে যাবে। আমরা খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম।’ ব্যাচেলরদের এভাবে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা তা বলতে পারেননি উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমানের। তবে খিলক্ষেত এলাকায় ব্যাচেলর ও হোস্টেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি। নির্বাচনের পরেই তারা আবার বাসায় ফিরে আসতে পারবেন। এখন তাদের চলে যেতে হবে।