করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতোমধ্যে আঘাত হেনেছে। ইউরোপের শীতপ্রধান অনেক দেশে পুনরায় লকডাউন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আঘাত হানতে শুরু করেছে দ্বিতীয় ঢেউ। তবে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের চিন্তা নেই সরকারের। করোনা পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেবে সরকার। গত কয়েকদিনে দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বেড়েছে। সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে ফের জোরাল ভূমিকায় নামছে প্রশাসন। অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানার দিকে এগোচ্ছে প্রশাসন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর পরই জেলা-উপজেলা প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় নামবে। পথচারীরা মাস্ক ব্যবহার না করলে জরিমানার পাশাপাশি কারাদ- দেওয়ারও চিন্তা রয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ‘মাস্কবিহীন উদাসীন’ মানুষদের হুঁশিয়ার করে বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘরের বাইরে মাস্ক ছাড়া বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারেও যেতে হতে পারে। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ‘শক্ত অবস্থানে’ যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগেই বলেছি- আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয় ঢাকার বাইরে কিছুটা পজিটিভ, ডিসিরা বলছেন জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি কেয়ারফুল (সচেতন) হচ্ছে। ঢাকা শহরে মানুষ বোধহয় এখনো পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি। তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে- ফাইন হয়ে যাবে, দিতে হবে ৫০০ টাকা।
তার পরও মাস্ক না পরলে কী হবে এমন প্রশ্নে আনোয়ারুল বলেন, তার পর জেলে যেতে হবে, আর কী করবে যদি না শোনে। … আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না, আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে, আমরা বলে দিয়েছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, করোনার প্রথম ধাক্কায় দেশ টানা ৬৬ দিন লকডাউনে ছিল। এতে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউন দিয়ে আর ক্ষতির মুখে পড়তে চায় না সরকার। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু চলবে। এজন্য নিয়মিত জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেন খুব বেশি মানুষকে আক্রান্ত না করতে পারে, সেজন্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাজারে করোনার টিকা না আসা পর্যন্ত মাস্ককেই টিকা হিসেবে গণ্য করছে সরকার। এ জন্য মানুষ যেন ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মানে, মাস্ক পরে; সেজন্য মাঠ প্রশাসনের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কর্মকর্তারা যদি এক্ষেত্রে শিথিলতা দেখান, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে তারা পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শ্রমিকদের সচেতন করবেন। এ ছাড়া টার্মিনালগুলোয় অভিযান চালাবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রধানমন্ত্রী বারবার মাস্ক পরার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তার এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে ছাড় দেবেন না কর্মকর্তারা।