ছাত্র হিসেবে বরাবরই ভালো ছিলেন ইশমাম সাকিব অর্ণব। ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি সব ক্লাসেই প্রথম ছিলেন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। সেইসঙ্গে যশোর শিক্ষা বোর্ডে নবম স্থান অধিকার করেন। এইচএসসিতেও পান জিপিএ-৫, একই বোর্ডে মেধাতালিকায় হন তৃতীয়। এরপর শুরু হয় মেডিকেলে ভর্তির যুদ্ধ। এবার মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেছেন তিনি।
বাবার হাত ধরে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে আসেন অর্ণব। শিক্ষক ও সহপাঠী (অন্যান্য যারা ভর্তি হতে এসেছেন) সবার দৃষ্টি তার দিকে। অর্ণব তার শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। কথা হয় তার বাবার সঙ্গেও।
অর্ণব জানালেন, ডাক্তার হয়ে সমাজে অবহেলিত অটিস্টিক শিশুদের সেবা করতে চান তিনি। নিজেকে একাধারে দেশের একজন খ্যাতনামা নিউরোলজিস্ট ও অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। ছেলেবেলায় মনে মনে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও পরে মত বদলান। মনস্থির করেন ডাক্তার হবেন।
মাদারীপুর জেলা সদরের আবদুস সোবহান ও হাবিবুন্নাহার দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে অর্ণব বড়। অর্ণবের ছোট ভাই অর্পণ স্পেশাল চাইল্ড (অটিস্টিক)। বাবা আবদুস সোবহান বেসরকারি এনজিও প্রশিকাতে চাকরি করেন। মা একসময় সরকারি চাকরি করলেও পরে ছেড়ে দেন।
গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর হলেও অর্ণব পড়াশোনা করেন খুলনায়। খুলনা সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি ও এমএম সিটি কলেজ- খুলনা থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
কেন তিনি অটিস্টিক শিশুদের সেবা করতে চান?
অর্ণব জানালেন, তার ছোট ভাই অর্পণ একজন স্পেশাল চাইল্ড। সে যশোরের একটি অটিজম স্কুলে পড়াশোনা করে। মূলত ওই স্কুলে আসা-যাওয়া করে তার যে অভিজ্ঞতা হয় তা হলো- এ শিশুগুলো সমাজে ভীষণভাবে অবহেলিত ও অসহায়। তাদের মতো হাজার হাজার অটিজম শিশুর জন্য কার্যকর কিছু করার জন্যই অর্ণব ডাক্তারি পড়বেন বলে মনস্থির করেন। এ জন্য তিনি অন্য কোথাও অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য ফরম পর্যন্ত তুলেননি। তার আত্মবিশ্বাস ছিল তিনি এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবেন এবং ঢাকা মেডিকেলেই চান্স পাবেন। তবে সারাদেশে প্রথম হবেন এমনটা ভাবেননি।
অর্ণবের পাশেই বসেছিলেন তার বাবা আবদুস সোবহান। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ছেলে সারাদেশে সেরাদের সেরা হয়েছে, এ জন্য তিনি ভীষণ খুশি। অর্ণব ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্র। তাকে কখনও পড়াশোনার জন্য বলতে হয়নি। বরাবর নিজের অাগ্রহে ভালো ফলাফল করেছে। আর তাই সে যে ভালো ফলাফল করবে তা আমরা বিশ্বাস করতাম। কারণ, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ কোচিং সেন্টারের পরীক্ষায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সে খুবই ভালো করতো। ভেবেছিলেন আমার ছেলে ঢামেকে এক থেকে পাঁচ নম্বর মেধাতালিকায় থাকবে। তবে প্রথম হবে, এমনটা অবশ্য ভাবিনি।’
ভালো ফলাফল নিয়ে অর্ণব বলছিলেন, ভালো ফলাফল করতে চাইলে যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য আত্মবিশ্বাস অত্যাবশ্যক। কোনো কিছু পারবো না, করা যাবে না, এমন নেতিবাচক মনোভাব কখনোও থাকা যাবে না। সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। দিনের পড়া দিনেই শেষ করাই ভালো ফলাফলের অন্যতম শর্ত। আজকের পড়া কালকে পড়ে নেবো, এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। তবেই ভালো ফলাফল আসবে।