26 C
Dhaka
মে ১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ক্রিকেট খেলাধুলা জাতীয়

সাত নম্বরে এই সাহসী-তেজোদ্দীপ্ত সাব্বিরকেই যে দরকার

তাকে নিয়ে সমালোচকরা বরাবরই সরব। সাব্বির রহমান রুম্মনকে নিয়ে বাজারে অনেক কথা। নানা মত। সাব্বির শৃঙ্খলা মেনে চলেন না। তার চলাফেরা, কথাবার্তা ও আচরণে পরিমিতিবোধ কম।

আবার বিপরীত কথাও আছে। সেটা অবশ্য আম জনতার জানা নেই। যারা তাকে খুব কাছ থেকে চেনেন, তাদের খুব ভাল জানা। তা হলো, সাব্বির শারীরিকভাবে দারুণ ফিট। কাউকে এতটুকু ছোট না করে বলেই ফেলা যায়, টিম বাংলাদেশের সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটারের নাম সাব্বির রহমান।

ফিটনেস নির্ধারণী পরীক্ষা বিশেষ করে ব্লিপ টেস্টে বেশির ভাগ সময় প্রথম হন সাব্বির। দেশের অন্যতম সাহসী ব্যাটসম্যানের নামও সাব্বির। ভয়ডর নেই তার অভিধানে। টেকনিকটাও পরিপাটি। ড্রাইভ, কাট, পুল, হুক, ফ্লিক- ক্রিকেট ব্যাকরণের প্রায় সব শট হাতে আছে।

বাংলাদেশের উইলোবাজদের মধ্যে হাতে গোনা যে কজন মেধাবী ও সহজাত প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান আছেন, যাদের আছে ফ্রি স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা- সাব্বিরের নাম আছে সেই দলের ওপরের দিকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সে সামর্থ্যর পরিচয় দিলেও আন্তর্জাতিক আসর বিশেষ করে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এতকাল সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাব্বির।

তার সমসাময়িক এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার আর লিটন দাস (একটি শতক, ভারতের বিপক্ষে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দুবাইতে এশিয়া কাপের ফাইনালে ১২১) প্রত্যেকের অন্তত একটি করে সেঞ্চুরি থাকলেও সাব্বিরের সে কৃতিত্বটি ছিল না। ভাল খেলে ও ভাল পারফরম করে সাফল্যের সিড়ি বেঁয়ে ওপরে ওঠার বদলে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে উল্টো অবনমন ঘটেছিল সাব্বিরের। ব্যাট কথা বলেনি।

৫৬ ম্যাচে ৫০ ইনিংসে পাঁচ হাফ সেঞ্চুরিতে রান ছিল ১১১০। সর্বোচ্চ ৬৫। শুধু ওয়ানডেতেই নয়, টেস্ট (৬৬) আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও (সর্বোচ্চ ৮০) একবারের জন্য তিন অংকে পৌঁছানো হয়নি।
২০১৭ সালের ২৪ মে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে তিন জাতি আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংসটিই ছিল ওয়ানডেতে তার এতকাল সর্বোচ্চ ইনিংস। ঐ ইনিংস খেলার পর গত ১৬ মাসে শেষ ১৬ ম্যাচে (২৪+৮+৮+১৯+১৯+১৭+৩৯+২৪+৬+১০+২+৩+১২+১২+১৩+৪৩) আর পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছুতে পারেননি।

শুধু মাঠের পারফরমেন্সই খারাপ হয়নি। রান করতে ভুলে যান, গত এক বছরের বেশি সময় মাঠের বাইরের ঘটনায় সাব্বির হয়েছেন নিন্দিত। সমালোচিত।

দুই দফা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজশাহীর এ ২৭ বছরের যুবা। প্রথমে মোটা অংকের টাকা জরিমানা। সাথে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলায় নিষেধাজ্ঞা। তারপর আবার শাস্তির খড়গ; জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। এবার অনেক হৈ চৈ আর নানা নাটকীয়তার পর তার শাস্তি একমাস কমিয়ে তাকে নিউজিল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। সেই শাস্তি কমানোর প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, সাব্বিরের শাস্তি কিভাবে কমানো তা তিনি জানতেন না।

সাব্বির জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রাখেন। তার যা ব্যাটিং মেধা ও সামর্থ্য, তাতে টিম বাংলাদেশের সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু শৃঙ্খলহীন জীবন, মাঠের বাইরের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া এবং রান খরায় ভোগার কারণেই আসলে সাব্বিরের দলভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফির ঐকান্তিক ইচ্ছের কারণে সাব্বির আবার দলে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, মাঝে সৌম্য, মিঠুন, আরিফুল, মোসাদ্দেক -বেশ কয়েকজনকে সাত নম্বরের খেলিয়ে পরখ করা হয়েছে , কিন্তু ঐ পজিসনে তারা কেউই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সাত নম্বর পজিসনে নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণও রাখতে পারেননি কেউ। আর সে কারণে সাত নম্বরে শূন্যতা ছিল পরিষ্কার। ফলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শত দুর্নাম ও নানা অভিযোগের পরও মাশরাফি সাত নম্বরে সাব্বিরকে নেয়ার পক্ষে তাগিদ দেন।

অধিনায়ক মাশরাফির একান্ত বিশ্বাস ছিল, সাত নম্বর তথা নিচের দিকে কোয়ালিটি ও এক্সপ্রেস ফাষ্টবোলিং আর বিশ্ব মানের স্পিনারদের স্পিন ছোবল সামলে ভাল খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে সাব্বিরের। মাশরাফি খুব ভালভাবেই অনুভব করেছিলেন মাঝে যাদের দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে, সাত নম্বরে সাব্বির তাদের সবার সেরা ও সবচেয়ে দক্ষ। কার্যকর হবেন। তাই তো বিশ্বকাপের আগে তাকে খানিকটা জোর করেই নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া।

খুশির খবর, আজ ডানেডিনে অধিনায়ক, প্রশিক্ষক তথা নির্বাচকদের সে আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্য দিয়েছেন সাব্বির রহমান। এতকাল সে শতরানের আক্ষেপ ছিল, আজ তা ঘুচে গেল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতরানটি করলেন সাব্বির। এ শতক তার ক্যারিয়ারের সাফল্যর এক নতুন মাইলফলক। তার দলে জায়গা পাকাপোক্ত করার সহায়ক দলিল।

এমন নয়, ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দল জিতিয়ে হিরো সাব্বির। তা নয়। বাংলাদেশ হেরেছে ৮৮ রানে। কিন্তু সাব্বির না দাঁড়ালে অনিবার্য্যভাবে ঐ ব্যবধান আরও অনেক বড় এমনকি দ্বিগুণও হতে পারতো। ৪০ রানে চার উইকেট (তামিম ০, লিটন ১, সৌম্য ০, মুশফিক ১৭) হারিয়ে দল যখন ধুঁকছিল , ঠিক তখন উইকেটে যান সাব্বির।

শুরুতেই জীবন লাভ! টিম সাউদির খাটো লেন্থের এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে হুক করতে গিয়ে প্রায় আউট হতে যাচ্ছিলেন। একটু তড়িঘড়ি খেলা সে হুক আর পুলের মাঝাশাঝি শটে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। বল গিয়ে পড়ে সীমানায় দাঁড়ানো লুকি ফার্গুসনের হাতে। কিন্তু কিউই ফাষ্টবোলার ফার্গুসন তা ধরেও ফেলে দেন। তার হাত ফষ্কে বেরিয়ে বল সীমানার ওপারে ছিটকে পড়ে।

একেই বলে ভাগ্য! আউট হবার হাত থেকে বেঁচে উল্টো ছয় রান দিয়ে ইনিংস শুরু। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাননি সাব্বির। অল্প সময়ের ব্যবধানে থার্ডম্যান আর পয়েন্টের মাঝখানে চপ করে বাউন্ডারি। তারপর পয়েন্টের মাথার ওপর দিয়ে ফ্ল্যামে আবার চার মেরে আস্থা ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা। তারপর ক্রমেই সামনে এগিয়ে যাওয়া। অবশেষে ৪৬ নম্বর ওভারে গিয়ে তিন অংকে পৌঁছে যাওয়া। ১০৫ বলে ১২ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হলো পূর্ণ।

গঠনমূলক সমালোচকরাও মানছেন, সিরিজ ও ম্যাচের আলোকে চিন্তা করলে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনে গেলে এ শতকের তেমন কোন বিশেষ তাৎপর্য ও মাহাত্ত্ব নেই। কিন্তু টিম বাংলাদেশের আলোকে চিন্তা করলে, আগামী দিনের কথা ভাবলে সাব্বিরের এ সেঞ্চুরি হতে পারে আশার আলো। বিশ্বকাপের বড় আসরে টিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে আলোকবর্তিকা।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, তিন মাস পর ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চে সব বাঘা বাঘা ফাষ্টবোলার আর এক ঝাঁক কোয়ালিটি স্পিনারদের সামলাতে হবে। এ সিরিজে নিজেকে খুঁজে না পেলেও তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা ওপরের দিকে হয়ত ঠিকই সামলে নেবেন। কিন্তু নিচের দিকেও যে একজন সাহসী নাবিকের প্রয়োজন। যিনি পেস ও স্পিন-দুই বোলিংয়ের বিপক্ষেই সমান সাবলীল। সেই জায়গায় সাব্বির হতে পারেন বেস্ট অপশন।

এ সিরিজে আঙুলের ইনজুরির কারণে নেই সাকিব আল হাসান। নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চে জোড়া হাফসেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিঠুনও খেলতে পারেননি আজ। তাই ডানেডিনে সাব্বিরের ব্যাটিং পজিসন ছিল ছয় নম্বর। কিন্তু আসল সময়ে যখন সবাই থাকবেন, তখন অনিবার্যভাবেই সাব্বিরকে খেলতে হবে সাতে।

সাত নম্বরে এ সময়ে সাব্বিরের সাহসী, তেজোদ্দীপ্ত আর অনায়াস-সাবলীল ব্যাটিংটাই খুব দরকার। এটা নিশ্চিত, সেই প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতাটা সাব্বিরেরই আছে। তার পরিষ্কার ইঙ্গিত মিললো আজ ডানেডিনে।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official