ছাত্রলীগের পূণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল শনিবার রাতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা বিদ্রোহী বা বঞ্ছিতদের আমলনামা জানতে চেয়েছেন। গণভবনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বিষয়টি ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছে।
পদবঞ্ছিতরা এতদিন পদ না পাওয়ার বেদনা থেকে যা যা করেছেন তা থেকে শুরু করে দুইদিনের সংঘর্ষের তাদের খেপিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটতে চায় কোন মহল এমন সব বিষয়গুলো সামনে এনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগ নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি সংস্থাকে প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক শীর্ষ দুই নেতা সাইফুর রহমান সোহাগ এবং এস এম জাকির হোসাইনের কোনো ইন্ধন রয়েছে কিনা বিদ্রোহীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সে বিষয়ে বিশদ তবে গোপনীয়ভাবে প্রতিবেদন তৈরি করারও নির্দেশ এসেছে। ছাত্রলীগ নিয়ে প্রকৃতপক্ষে অন্যকোনো দলের ইন্ধন রয়েছে কিনা যারা কখনোই ছাত্রলীগের ভালো চায় না, তারা বা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যারা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছিল তাদের বিষয়েও বিশদ খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে।
যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং নাম প্রকাশ হয়েছে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১১ জন ইতিমধ্যে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ২ জন কেন্দ্রীয় নেতা যারা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা অনেকেই নিজেদের নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পেরেছেন। এখানে শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যটাই মূল প্রশ্ন। শেখ হাসিনাই যেখানে ছাত্রলীগের মূল গঠনতন্ত্র সেখানে ছাত্রলীগকে বারবার বিতর্কিত করতে যারা আন্দোলনে নেমেছেন তাদের পেছন থেকে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা খোঁজে বের করে আমলনামা চাওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজ করে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। যারা আন্দোলন করছে এবং শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগেই ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিকভাবে আন্দোলনে জড়িত ৩১ জনের একটি তালিকা নিয়ে এগুচ্ছে সংস্থাটি। সেই তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে বি এম লিপি আক্তার, তিলোত্তমা সিকদার, আল মানুম, দেলোয়ার শাহজাদা, ইডেনের তাসলিমা আক্তার, নিপু তন্বী, জেসমিন শান্তা, শ্রাবণী শায়লা, জারিন দিয়া, জয়নাল আবেদিন, শরিফুল ইসলাম শুভ, সাইফ বাবুসহ আরো কয়েকজন। তবে তারা কেন কি উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন করছেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সময় না দিয়ে তা নিয়ে বিস্তর খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে। তবে এই ৩১ জনের তালিকা থেকে যদি কেউ আদর্শিকভাবে শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের প্রতি অনুগত থেকে আন্দোলন করেন তাহলে সেটিও প্রতিবেদনের উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। নিরপরাধ কাউকে যেন মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের বিষয়ে সমাধান দিবেন শেখ হাসিনাই। তিনি ইতিমধ্যে যে ১৭ জনের তালিকা প্রকাশ করিয়েছেন, সেখান থেকে কমপক্ষে ৫ জন অভিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ায় তাদের পদ বিলুপ্ত হতে পারে। বাকি ১২ টি পদে যারা শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে আপোষহীন শুধু এই ক্যাটাগরিতেই টিকে যাবেন। এই সমস্যার সমাধান আগামীকাল বা পরের দিনই হয়ে যেতে পারে। এরপর সেই ৫ টি শূণ্য পদে যোগ্যদের বসিয়ে প্রথমে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এটাও এই সপ্তাহের মধ্যেই হবে।
উল্লেখ্য, গত ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা যেন বিদেশে গিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট গণভবনে জব্দ করা হয়েছিল। তারা কি সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসাবে পেছন থেকে বিদ্রোহীদের খেপিয়ে দিচ্ছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর চলে আসার পরই ছাত্রলীগ নিয়ে চূড়ান্তভাবে আগামীকাল বা পরের দিন কথা বলতে পারেন আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনিই প্রধানমন্ত্রীর হয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান দিবেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত শোভন রাব্বানীর ওপরই আস্থা রাখছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা। কেননা তাদের সরাসরি নেতা বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পছন্দকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হবে বলে জানা গেছে।