27 C
Dhaka
জুলাই ৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ বরিশাল

কলাপাড়ায় কীটনাশক ব্যবহারে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ

জলবায়ু পরিবর্তন ও ফসলি জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিলুপ্তি হচ্ছে দেশীয় মাছ। আগে পটুয়াখালী কলাপাড়ায় পুকুর , নদীনালা , খালবিল , জলাশয় ও ফসলি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা অতীত মাছে ভাতে বাঙ্গালী কথাটি ভুলতে বসেছে উপজেলার মানুষ।

নিম্নবিও মানুষের কাছে দেশীয় মাছ পাওয়া এখন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আগে নিম্নবিক্ত মানুষেরা সবচেয়ে বেশি দেশীয় মাছ খেত। এখন বাজারে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছের দেখা মিলে না বললেই চলে। যদি ও পাওয়া যায় তবে তা সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে ও বাজারে দুস্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ জাতীয় মাছ।

বর্তমানে দেশের জলবায়ু, পরিবেশ,আমিষের মান, মাছের উৎপাদন বাড়াতে নদী নালা, খালবিল, পুকুর , জলাশয় গুলোতে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে মাছের উৎপাদন বাড়তে হবে। উপজেলায় যে পরিমান নদী-নালা খাল বিল জলাশয় রয়েছে তা থেকে চাহিদার দ্বিগুন দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন সম্ভব। আধুনিক কারিগর প্রযুক্তির মাধ্যমে মৎস্য চাষ ও মাছের উৎপাদন বাড়লে ও প্রাকৃতিক ভাবে নদীনালা, খালবিল, জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে আসছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারনের মধ্যে অন্যতম কারন হচ্ছে নদীনালা , খালবিল জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে শুকিয়ে যাওয়া। শুকনো মওশুম পর্যপ্ত পানি না থাকায় মাছের বৃদ্ধির সুযোগ কমে যায়।

এছাড়া জলাশয় শুঁকিয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে বছর মা মাছের উৎপাদন কমে যায় বিধায় সার্বিক মাছের উৎপাদন কমে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘনবসতি, খাল-বিল, পুকুর, নদী-নালা, জলাশয় ইত্যাদি দিন দিন বেদখল ও ভরাট করে মানুষ বাড়িঘর তৈরী করছে। পাশাপাশি পুকুর-ডোবা গুলোতে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। ধানক্ষেতে বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরে। বিভিন্ন পুকুর ও খালের পানিতে ঔষধ ছিটানোর ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মাছের গায়ে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ। আর এ সকল রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় একটি মাছ থেকে অন্য মাছের গায়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে মাছগুলোর বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটে।

ফলে শূণ্যের কোটায় গিয়ে পৌঁছুতে থাকে দেশীয় মাছ। উপজেলায় প্রায় তিন শ’ খাল ভরাট হয়ে গেছে। এ কারনে কৃষকের কৃষিকাজে বিরুপ প্রভাব শুরু হয়েছে। সেচ ও ব্যবহারের কাজে মিঠা পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই মিঠা পানির মাছ আরো ২০-৩০ বছরে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মধ্য থেকে ৬৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি প্রায়। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে গেলেও হাইব্রিড মাছের উৎপাদন বেড়ে গেছে । ফলে দেশীয় আরো শতাধিক প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, পটুয়াখালীসহ দক্ষিনাঞ্চলে মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। এক সময় এই অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম ছিল। উপজেলায় ইঞ্জিন চালিত ১ হাজার ৮শ ট্রলার এবং সহস্রধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং শ’ শ’ দারটানা বৈঠাচালিত নৌকায় জেলেরা সাগর বক্ষে মাছ আহরন করছে। বেসরকারি সংস্থা কোডেকে এর এক জরিপে জানা গেছে, সমুদ্র উপকুলীয় কলাপাড়া উপজেলায় ৪০টি জেলে গ্রাম,২ হাজার ৫৩৩টি জেলে পরিবারের ২৭ হাজার ৮৪০ জন সদস্য রয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিনাঞ্চলে পটুয়াখালী, বরগুনা ,ভোলা তিন জেলা বার্ষিক মৎস্য উৎপাদনের পরিমান কমে গেছে। চাহিদা মিটছেনা তেমনি বিদেশ রফতানির পরিমান ও কমে যাচ্ছে। বেসরকারি এক সমীক্ষায় জানা যায়, দেশে আহরিত শতকরা ৭৩ ভাগ মাছই মিঠা পানির মাছ। স্থানীয় বাজার গুলোতে এখন আগের মতো দেশীয় মাছ আসছে না। পটুয়াখালীর অন্যতম মাছ অভয়াশ্রম লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া আন্দানমানিক. রাবনাবাঁধ নদী। মানুষের খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। মাছ পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এর মধ্যে মলা-ঢেলা প্রভৃতি ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা মেলেনি দেশীয় মাছের। আর যেসব মাছ পাওয়া যায় তা আবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে চাষ করা। আকারে বড় হলেও ওইসব মাছের গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব হওয়ায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিদেশী মাত্র ২৪ প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতায় দেশীয় আড়াই শতাধিক প্রজাতির মাছ অস্তিস্বের হুমকিতে পড়েছে। কৃষি জমিতে ব্যাপকহারে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদীনালা , খালবিল, জলাশয়ের পানি দুষিত হচ্ছে। ফলে খালবিল, জলাশয়ে স্বচ্ছ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর বিষাক্ত পানির কারনে দেশিয় মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, দেশে হাইব্রিড জাতের সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, থাই কৈ, থাই পাঙ্গাস, ব্ল্যাক কার্প, পাঁচ প্রজাতির তেলাপিয়াসহ ২৪ প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষের আগে পুকুর ডোবার পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোয় মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রানীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, অধিক মুনাফর আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়েগুলো থেকে দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।

এক সময়ের অতি পরিচিতি দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কৈ, মাগুর, চাপিলা, মিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগল, চিতল, রিটা, গুজি, আইড়, পাঙ্গাস, বোয়াল, খৈলসার, মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছ গুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না । ফলি ,বামাশ, টাটকিনি, তিতপুটি, আইড়, গুলসা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মরা, কালোবাবুশ, শোল, মহাশোলসহ-৬৫ প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ সম্পুর্ন বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ বংশসহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে দেশীয় মাছের জয় জয় কার ছিল। বর্ষার নতুন পানির সাথে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। ফলে উপজেলার মানুষ জাল, চাঁইসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী মজুর রাখতো। কিন্তু অনেকে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির কারন হিসেবে কারেন্ট জাল ব্যবহারকে দায়ী করছেন। অনেকে বলেছেন, জমিতে অধিক মাত্রা কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্তি হচ্ছে।

আবার মৎস্য বিশেষঞ্জরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জমিতে অধিক মাত্রা ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সংযোগ খাল গুলো ভরাট হয়ে যাওয়া দেশীয় মাছ বিলুপ্তি হচ্ছে। চৈত্র ও বৈশাখ এবং আষাঢ মাসের দিকে দেশীয় বিভিন্ন জাতের মাছের ডিম, রেনু, ও পোনা ছাড়ে। দেশি মাছ সংরক্ষনের জন্য কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা, মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ,পুরাতন জলাশয়গুলো সংস্কার করা , ছোট দেশি জাতের মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয় সংরক্ষন , প্লাবনভুমি নিয়ন্ত্রাধীন রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও অপরিহার্য।

বাবলাতল ও লক্ষ্মীর বাজার মাছের বাজারজাতে সাথে জড়িত কয়েকজনের সাথে আলাপ করতে গেলে মো. ইব্রাহী হোসেন, খালেক হাং জানন, খালবিলে যতই পানি থাকে ততই মাছ হয়। এবার খালবিল পানি নেই। তাই মাছ কমে গেছ্। তাছাড়া প্রতি বছর খাল-বিলে সেচ দিয়ে মাছ ধরায় মাছের বংশ নষ্ট হয়ে গেছ্। এক সময় উপজেলা প্রচুর পরিমানে দেশয়ি জাতের মাছ পাওয়া যেত। কালের আবর্তে নদীনালা, খালবিল ভরাট হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি। আগে নদী থেকে পানি প্রবেশ করত, এখন তা হয় না। মাছ না পাওয়ার এটিও আরেক কারন। এতে মাছ আহরন ও বাজারজাতের সাথে জড়িতদের করুন অবস্থা ।

তাছাড়া কোনো কোনো খালবিল পুকুর তৈরি করে হাইব্রিড মাছ চাষ হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক উৎস সস্কুচিত হওয়ায় দেশী জাতের মাছের উৎপাদন হৃাস পাচ্ছে। এখন বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে উদ্যোগি হয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া খালবিল, নদীনালাসহ পানি প্রবাহের সংযোগ স্থলগুলো খনন করা হলে শুকানো মওসুমেও পানি থাকবে।
দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে মৎস্য অধিদপ্তর ও সচেতন মহলসহ আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমরা মনে করি।

অপরদিকে মাছ বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। এখন আর কেউ ছোট মাছের দিকে নজর দেয়না। যারা মাছ চাষ করেন তারা বড় মাছের উপর নির্ভরশীল, যে কারণে দিন দিন বাজারে ছোট মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে এক পুষ্টি বিশেষজ্ঞ জানান, ছোট মাছ কমে গেলে মানুষের শরীরে পুষ্টির চাহিদা ব্যাহত হবে। তাই ছোট মাছের প্রজনন ও বিচরণস্থল নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী (দুমকি) বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের চেয়াম্যান অফ ফিশারিজ ম্যানেজম্যান্ড ডিপার্টমেন্ডের মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাসস্থল ছিল তা রাখেনা। ভরাটের কারনে মাছের আবাসস্থল নেই। সেচ দিয়ে মাছ ধরে । শুকানো মওসুমে আমরা শুকিয়ে মাছ ধরে। সেখানে দেখা গেছে কোনো মাছ থাকতে পারছেনা । শুকিয়ে ফেলার কারনে মাটি ফেটে যায়। সেখানে মাছ থাকে কিভাবে। তা আইন গত নিষিদ্ধ। চরবেধজাল জোয়ারের সময় পাতা হয় ভাটার সময় মাছ ধরা হয় ঐ সময় বিভিন্ন ধরনের মাছ মরে যায়। বাধাঁজাল, মশারি ও নেট দিয়ে মাছ ধরার কারনে আস্তে আস্তে বিলুপ্তি হচ্ছে দেশীয় মাছ ।

সম্পর্কিত পোস্ট

বরিশালে যুবলীগ কর্মীর তাণ্ডব: মা-মেয়েকে কুপিয়ে জখম

banglarmukh official

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official