কোনো স্টলে ডেউয়া, লটকন, কাউফল, সফেদা, জামরুল, আঁশফল কিংবা আমরার সমাহার আবার অন্য স্টলে তালের চিনি, কাঠালের পাকোরা, কাঠালের পায়েস, ডাবের পুডিং, পাকা কলার বড়া-চপ, কাঁচা কাঠালের সাসলিক আবার কোথাও উইতে, ডালিম, কামরাঙ্গা, এলাচী লেবু, সতকরা, তৈকর, আলুবোখরা, হানিকুইন আম্রপালী, চাপালিশ (বুনো কাঠাল) কিংবা বাহারী জাতের আমের সংগ্রহশালা; রবিবার দিনজুড়ে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের চাহিদার কেন্দ্রে থাকলো জানা ও অজানা এসব ফল।
আমের জন্য বিখ্যাত চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা বাগানের ভেজালহীন আমগুলোতে আকৃষ্ট হয়ে দর্শনার্থীদের সেকি কী আম কেনার ধুম! সারাদিন প্রদর্শনীতে ঘুরে ও ফল কিনে যেনো ‘রথ দেখা ও কলা বেঁচা’র কাজটাও সারলেন অনেকে।
রাজধানীর গ্রীনরোড থেকে আসা হেনরি গোমেজ প্রিন্টিং ব্যবসার সাথে জড়িত। ভেজালহীন ফল কিনতে এসেছেন জানিয়ে বলেন,‘ফল তো সবখানেই পাওয়া যায় তবে কোনটা ভালো আর কোনটা নির্ভেজাল তা নির্ণয় করা কঠিন। এখানে সব ফল নির্ভেজাল ও কম ক্ষতিকর এই আস্থাতেই এখানে প্রতিবছর ফল কিনতে ও দেখতে আসি।’
তেজগাঁও কলেজের একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর তিনবন্ধু জাকিয়া, রায়হান ও মুনতাহা ঘুরে ঘুরে স্টলে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে জানা-অজানা ফল দেখছেন। কালের কণ্ঠকে তারা জানালেন,‘এখানে এসে এমন অনেক ফলের সম্পর্কে জানলাম যা জীবনে কোনদিন দেখিনি। কাঠাল দিয়েও যে ভিন্ন ভিন্ন এতো সুন্দর রেসিপি করা যায় সেটাও প্রথম দেখলাম। অবশ্যই এগুলো রান্না করার চেষ্টা করবো।
এবারের মেলায় বিভিন্ন ফলের বহুমুখি ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন ফলের রেসিপি নিয়ে হাজির কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শামসুর রহমান ও মো. রশিদুল ইসলাম জানালেন,‘দেশের কোন ফল এই প্রদর্শনীতে বাদ না যায় সেটি যেমন দেখছি তেমনি বিভিন্ন ফলের বহুমুখি ব্যাবহারের বিষয়ে দর্শনার্থীদের ধারণা দিতে এবার রেসিপি গাইড দেওয়া হচ্ছে।
‘পরিকল্পিত ফল চাষ জোগাবে পুষ্টিসম্মত খাবার’ শীর্ষক প্রতিব্যাদে জাতীয় ফল প্রদর্শনী ও বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ২০১৯’র প্রথম দিনেই মেতে উঠেছে দর্শনার্থী ও ক্রেতার পদচারণায়। রবিবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর ফার্মগেটের আ.কা.মু. গিয়াস উদ্দিন মিলকী অডিটোরিয়ামে এর উদ্বোধন করবেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল সাড়ে ১০টায় বৃক্ষ রোপণ ও ফল চাষের উপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলা এই প্রদর্শনীতে এবছর মোট ৮৩ টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তও, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও পাইকারি ফল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহন করে।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, সরকারি বিভিন্ন স্টলগুলোতে হরেক প্রজাতির ফল প্রদর্শিত হচ্ছে। বিভিন্ন জাতের আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, আনারস ছাড়াও সেখানে স্থান পেয়েছে কাউফল, কামরাঙা, জাম, মারফা, অরবরই, খেজুর, পেয়ারা, আমড়া, বেতফল, নারিকেলী লেবু, আদাজামির, জরালেবু, লটকন, আমলকি, বেল, সুপারি, সিডলেস লেবু, সাতকরা, রাম্বুটান, তৈকর, ড্রাগনফল, করমচা, জাম্বুরা, ল্যাংশায়ার, কদবেল, কাঠবাদাম, ডুমুর, জামরম্নল, চালতা, নারকেল, আশফল, আঙ্গুর, বিলাতি গাব, সফেদা, জামরুল ও তাল প্রমুখ।
অন্যদিকে মেলার বেসরকারি স্টলগুলো থেকে আসা দর্শনার্থীরা সুনির্দিষ্ট ও সাশ্রয়ী মূল্যে রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের আম, কাঁঠাল, আনারস, ড্রাগনফল, লিচু, কলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম বিক্রয় করছে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ কৃষক যারা নিজের বাগানের ফল বিক্রি করতে এসেছেন আবার পাইকারি ফল বিক্রেতারাও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন।
চুয়াডাঙ্গার সরিষাবাড়ি থেকে আসা আম বিক্রেতা মো. মাহিম বলেন, আম্রফলি, হিমসাগর ও লেংড়া আম নিয়ে এসেছি। প্রথম দিনেই যে বিক্রি তাতে আমি সন্তুষ্ট।
নঁওগা থেকে নিজের বাগানের আম নিয়ে আসা কৃষক দেওয়ান আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সেই ২০১১ সাল থেকে আমি নিয়মিত আমার বাগানের আম নিয়ে এই মেলায় আসি মানুষকে ফরমালীনমুক্ত ও সুস্বাদু আম খাওয়াতে। খিশাপাত, ছাতাকুড়ি, নাকফজলী ও মনভোগ আম নিয়ে এখানে এসেছি। তবে এগুলোর মধ্যে মানুষ নাকফজলী আম বেশি কিনছে।
তিনদিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার।