বরিশাল নগরীতে কিছু ক্লিনিক আছে যেগুলো প্রধানত এমআর’ (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) সেবা দেয়ার জন্যই কাজ করে। সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এমআর ওয়ার্ড আছে। বাংলাদেশে গর্ভপাত বেআইনি। কিন্তু ‘এমআর’ তো গর্ভপাতেরই বিকল্প নাম!
বরিশাল নগরীর ৫নং ওর্য়াড পলাশপুরে ফার্মেসীর ডাক্তার পরিচয়দানকারী এক মহিলার বিরুদ্ধে অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পলাশপুর ৫নং ওয়ার্ডে রোকেয়া মেডিকেল নামক একটি ফার্মেসীর ডাক্তার সেজে অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে অনেক পরিবারকে সর্বশান্ত করে দিয়েছেন এই নারী। তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু দালাল।
অসাধু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবৎ এ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে রোকেয়া মেডিকেল ফার্মেসীর ডাক্তার পরিচয়দানকারী মাকসুদা আক্তার রিপা।
জানা যায়, পলাশপুর দলিল উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের পাশে প্যারামেডিকেল পাশ ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে একটি ফার্মেসি খুলেছেন মাকসুদা আক্তার রিপা। সেখানে তিনি নিজেই দিবা-রাত চিকিৎসার নামে জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রিপা এমআরের নামে রিপা নিজেই বৈধ-অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে সাধারন ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। গত কয়েক মাস পূর্বে (ছদ্মনাম) কলি নামে এক পুত্রবধূ সাত মাসের গর্ভবতী ছিলো। পারিবারিক কলহলের কারনে ওই গৃহবধূ স্বামী বাচ্চা রাখতে চায় না। সেই সুবাদে কলির স্বামী রোকেয়া মেডিকেল ফার্মেসীতে পরামর্শ নিতে গেলে ভূয়া ডাক্তার মাকসুদা আক্তার রিপা তাকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে দেখা করতে বলে। সেই সুযোগে কলির স্বামী কাজে লাগিয়ে কলিকে তার ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। পরে কথিত ডাক্তার রিপার বাসায় নিয়ে গৃহবধূ কলির পেট কেটে বাচ্চার শরীরের কিছু অংশ বের করে।
পরবর্তী সময় গৃহবধূ কলির শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হলে অবস্থা বেগতিক দেখে তৎক্ষনিক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। তা ছাড়া (ছদ্মনাম) মলির তিন মাসের গর্ভপাত এমআর করার জন্য ৪ হাজার টাকা নেয় রিপা। যার প্রমাণ হিসাবে সংবাদকর্মীদের কাছে কিছু কাগজপত্র, রিপার কথপোকথন ও ছবি রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক স্থানীয় বাসিন্দা লিখিত অভিযোগে জানান, রিপা ঢাকায় কোন এক ক্লিনিকে আয়ার কাজ করতো, সেখানকার ডাক্তার সাথে থেকে কিছু কাজ শিখে আজ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিচ্ছে। রিপার চিকিৎসার নামে ভ্রুন হত্যার ফাঁদ পেতেছে। অনেক মেয়ের একই সর্বনাশ করেছে। রিপার বাসায় ভিতরে এসব অবৈধ কাজ করেন। তিনি সূর্যের হাসি ক্লিনিকের এক আয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়েদের সর্বনাশ করেছেন।
এই বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান জানা যায়, রোকেয়া ফার্মেসীর কথিত ডাক্তার মাকসুদা আক্তার রিপার কোন সনদপত্র নেই। তিনি ভূয়া কিছু সনদপত্র বানিয়েছে। তা ছাড়া ওইসব সনদপত্রে কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই।
এ বিষয় মুঠোফোনে রিপা জানান, তার প্যারামেডিক ট্রেনিং করা আছে, অপরদিকে রিপা কোনো সনদ না থাকায় তিনি দোহাই দিলেন ট্রেনিং ওয়ার্কসপের প্রত্যয়ন পত্র কথা।
তবে তিনি এমআরের করার ঘটনা স্বিকার করে আরো বলেন, আমার বোনের মেয়ের এমআর করেছি। তার তো কোন অভিযোগ নাই এ বিষয়।
আপরদিকে একাধীক চিকিৎসক জানান, বাংলাদেশের আইনে শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে মায়ের জীবন বাঁচাতে গর্ভপাতের সুযোগ আছে। এমআর-এর নামে ছোট ছোট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ‘গর্ভপাতের’ যে ব্যবসা গড়ে উঠেছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত ডাক্তার নাই। আয়া বা নার্স দিয়েই গর্ভপাতের কাজ করা হচ্ছে। এর ফলে কখনো কখনো গর্ভবর্তী মারা যান। আবার কখনো তার মা হওয়ার সক্ষমতা শেষ হয়ে যায় অথবা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন। সরকারের উচিত বিষয়টি মনিটরিং করা।