২০০১ সালে অজানা এক রোগে দু’পা হারান তিনি। এর আগে তিনি ঢাকার একটি ছাপা খানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। দু’পা হারানোর পর থেকে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে তিনি ফুটপাতে শুয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাচ্ছেন। তার সংসারে রয়েছে ৪ মেয়ে ও এক ছেলে। মানুষের কাছে হাত পেতে ৬ ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেয়েকে আঁখিকে উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) গন্ডি পার করিয়েছেন। অনার্সে ভর্তি করিয়ে টাকার অভাবে আর লেখাপড়া করাতে পারেন নি ওই মেয়েকে। বর্তমানে মেয়েটি নগরীর বাংলাবাজার এলাকার একটি দর্জির দোকানে কাজ করছেন।
ছোটো ছেলেটি এখনও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলেটা ঢাকায় চাকরির চেষ্টা করছেন কিন্তু চাকরির সন্ধান পাচ্ছেন না। ৪ মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। কষ্ট করে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া করানোর খুবই ইচ্ছা ছিলো তার। কিন্তু যে পরিমাণ আয় হয় তাতে তিনি সংসার চালাতে পারছেন না, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাবেন কিভাবে। এসব কথা বলতে বলতে চোখ থেকে পানি ছেড়ে দিয়েছিলেন দপদপিয়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব আলি।
এসময় তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘‘মেয়র স্যার যদি আমাকে একটা অটো গাড়ি দিতেন তাহলে সেটা চালিয়ে আমি সংসার চালাতে পারতাম। মেয়র স্যার যে হুইল চেয়ারটি দিয়েছেন সেটা আমি চালাতে পারিনা। আমি কখনও হুইল চেয়ার চালাইনি। এর আগে কিছুদিন অটো রিকশা চালিয়েছি। মেয়র স্যার যদি হুইল চেয়ারটা ফেরত দিতেন বলে তাহলে দিয়ে দিবো কিন্তু আমাকে যেন একটা অটো গাড়ি দেন সেটা একটু বইললেন। আপনি আমার সন্তানের মতো, মেয়র স্যাররে আর পাইওনা, বলতেও পারিনা।
আপনি আমার কথাটা মেয়র স্যারকে একটু বলবেন”। এসময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘মেয়র স্যার অনেক ভালো, মেয়র স্যার আমার জন্য যা করেছে সেটা এর আগে আর কেউ করেনি। আপনি যদি মেয়র স্যাররে আমার কথাটা একটু কইতে পারেন তাহলে স্যার অবশ্যই আমার কাছে ছুটে আসবেন”। দু’পা হারানো ইয়াকুব মিয়া রোদের মধ্যে শুয়েছিলেন, তার গা থেকে অঝোরে ঝরছিলো ঘাম। তার মধ্যে আবার চোখ থেকে পানি পড়ছে কষ্টের কথা মনে পড়ে। আপনি কেন ছায়ায় যাননা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ছায়ায় গেলে লোকেরা তাড়িয়ে দেয়। কোনো দোকানের সামনে বসতে দেয়না আমাকে”।
উল্লেখ্য, কিছুদিন পূর্বে ইয়াকুব মিয়ার রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষা করার দৃশ্য নজরে আসে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর। এরপরই তিনি তাকে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। ইয়াকুব মিয়া হুইল চেয়ারটি চালাতে পারছেন না দাবি করে মেয়রের কাছে একটি অটো রিকশার দাবি করছেন। তার দাবি, মেয়র যদি একটি অটোরিকশা দেন তাকে তাহলে সেটি চালিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। এমন বাস্তবতায় মেয়র কি করেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।