27 C
Dhaka
জুলাই ৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জাতীয় রাজণীতি

সেই নারকীয় তাণ্ডবের কথা ভুলতে পারি না: শাহান আরা বেগম

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই কালরাতে একই ঘটনায় আরও দুটি পরিবারের ওপর নেমে এসেছিল এই নিষ্ঠুর-নির্মম-নৃশংসতা। এর অন্যতম হলো বঙ্গবন্ধুর বোন আমেনা বেগম ও তার স্বামী তৎকালীন পানিসম্পদ ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবতের পরিবার এবং অপরটি হচ্ছে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির পরিবার।

সেদিন সেরনিয়াবতের বাড়িতে নৃশংসতার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন তার বড় পূত্রবধূ শাহান আরা বেগম। যিনি শরীরে চারটি গুলি লাগার পরেও বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী। এবারের শোক দিবসে কথা বলেছে তার সঙ্গে। বরিশালে অবস্থানরত শাহান আরা টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।

শাহান আরা আব্দুল্লাহ বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে হয়। কিন্তু সেই নৃশংসতার স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে, আগস্ট এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই নারকীয় তাণ্ডবের কথা।

তিনি বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর ১৫ আগস্ট ভোরে ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে। তখন আজান হচ্ছিল। হঠাৎ করেই মুহুর্মুহু গুলি। বৃষ্টির মতো গুলি চলতে থাকলো চারদিকে। বাসার সবাই তখন ভয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির ( আব্দুর রব সেরনিয়াবত ও আমেনা বেগম) রুমে জড়ো হই। শ্বশুর সাহেব ফোন করলেন বঙ্গবন্ধুকে। ওদিকে দোতলায় আরেক রুমে ফোন বাজছিল। সেই ফোন ধরতে চলে গেলেন আমার স্বামী আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। শ্বশুর সাহেব বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা শেষ করে শুধু বললেন, তার বাড়িতেও মনে হয় আক্রমণ হয়েছে।

এরপর বেগম শাহান নিজেই শেখ ফজলুল হক মনিকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘‘টেলিফোনে শেখ মনিকে তাদের বাড়ি আক্রমণ হওয়ার খবর জানালে তিনি জানতে চান, ‘যারা আক্রমণ করেছে, তারা কি পোশাক পরা?’ তখন আমি জবাব দেই, ‘অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।’ এরপর তার শাশুড়ি ( বেগম সেরনিয়াবত) ফোন নিয়ে শেখ মনিকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, কিছু একটা করো।’ ঠিক ওই সময়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে আসে ঘাতকেরা। রুমে ঢুকেই তারা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে নির্দেশ দেয়। সবাইকে নিচে নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে কর্ডন করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর তাদের পক্ষে একজন আমার দিকে অস্ত্র তাক করে জিজ্ঞেস করলো, ‘ওপরে আর কে কে আছে?’ জবাবে আব্দুর রব সেরনিয়াবত আমার দিকে এমনভাবে তাকান, যেন আমি কিছু না বলি। আমি উত্তর দেই, ‘ওপরে কেউ নাই।’ তখন তার শ্বশুর সেরনিয়াবত জানতে চান, ‘তাদের কমান্ডিং অফিসার কে?’ কিন্তু ঘাতকরা তাদের কোনও কমান্ডিং অফিসার নেই উত্তর দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশফায়ার শুরু করে।

শাহান আরা উল্লেখ করেন, ‘প্রায় সবার গায়েই গুলি লাগে। শহীদ ভাইকে (সেরনিয়াবতের ভাইয়ের ছেলে) অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা গুলি করে। উনি সঙ্গে সঙ্গে উপুড় হয়ে পড়ে যান। আমার শ্বশুরের শরীর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আমার শরীরের পেছনের অংশে হাত দিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে। ওরা চলে যেতে লাগলো। তখনও আমার জ্ঞান ছিল। এরমধ্যেই কে যেন কান্না করে ওঠে। এরপর ঘাতকরা আবারও দৌড়ে এসে ব্রাশফায়ার করে। এবার ওরা নিচ দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। আমার শ্বশুর সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। আমি আমার শ্বশুরের পেছনে ছিলাম, আমার কোমরে গুলি লাগে। সে সময় ব্রাশফায়ারে ঘটনাস্থলেই ছয়জন মারা যান। আমরা গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৯ জন কাতরাচ্ছিলাম।’

একটু থেমে শাহান আরা ফের বলেন, ‘‘এরমধ্যে আবারও একদল লোক গাড়ি নিয়ে আসে। তখন ভাবলাম—এই বুঝি শেষ। কিন্তু পরে দেখি রমনা থানার পুলিশ এসেছে। তারা আমার শ্বশুরের পালস দেখে বলে, ‘বাড়ির কেউ আহত আর কেউ মারা গেছে।’ পরে পুলিশ প্রহরায় আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’

অক্টোবর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে শাহান আরা আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন। আর সেদিন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তারা বাড়ির দোতলায় তল্লাশি না চালানোয় প্রাণে বেঁচে যান আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী স্মৃতিচারণ করতে করতেই ফুঁপিয়ে ওঠেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সেদিন তিন প্রজন্মকে একসঙ্গে হারিয়েছেন তিনি। নিজের সন্তান সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, শ্বশুর আব্দুর রব সেরনিয়াবত, চাচাতো ভাসুর শহীদ সেরনিয়াবত, দেবর আরিফ সেরনিয়াবত, ননদ বেবি সেরনিয়াবতসহ ছয়জনকে। আর তিনি নিজেসহ আহত হয়েছিলেন-আব্দুর রব সেরনিয়াবতের স্ত্রী আমেনা বেগম, বিউটি সেরনিয়াবত, হেনা সেরনিয়াবত, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, খ ম জিল্লুর রহমান, ললিত দাস ও সৈয়দ মাহমুদ।

‘সেই কালরাত্রির কথা এতদিন পরেও বার বার স্মৃতিতে ফিরে আসে,’  উল্লেখ করেন সেরনিয়াবত পরিবারের এই পূত্রবধু। তিনি পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official