যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তাতে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত প্রিয়া সাহা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই সাংগঠনিক সম্পাদক। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এক সাংবাদিককে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া সাক্ষাৎকারে
এসব কথা জানান তিনি। ৩৫ মিনিট ২ সেকেন্ডের এই সাক্ষাৎকার ইউটিউবেও আপলোড করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে প্রিয়া সাহা দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের নিখোঁজ হওয়ার যে তথ্য গত বুধবার (১৭ জুলাই) তিনি ট্রাম্পকে দিয়েছেন, তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই নেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাত ওই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০১১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা সে সময় গণমাধ্যমেও আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বইয়ের (২০০১ সালের) ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছে এবং সরকারি সেনসাস রিপোর্ট থেকে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। দেশভাগের সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল ২৯.৭ ভাগ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৭ ভাগে। দেশের মানুষ এখন ১৮০ মিলিয়নের মতো। এ প্রসঙ্গে নিজ জেলা পিরোজপুরের উদাহরণ টেনে প্রিয়া সাহা বলেন, ২০০৪ সালে তাদের গ্রামে ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবার ছিল, এখন আছে ১৩টি।
প্রিয়া সাহা বলছেন, ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে অভিন্ন অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেজন্যই তিনি হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতা চেয়েছেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। নিজের পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, শুক্রবার তার বাসার সামনের তালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের ছবি পত্রিকায় ছেপে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে নিজের দেওয়া বক্তব্যকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বলেও দাবি করেন প্রিয়া সাহা। বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন ৯৪ দিন ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলেছিল, তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন সংখ্যালঘুদের রক্ষায়। নানা জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার কথা অনুসরণে কথা বলেছি এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যেকোনো জায়গায় যে বলা যায়, তা আমি তার কাছে শিখেছি। প্রিয়া সাহা বলেন, বর্তমান সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। তিনি চান দুই দেশের সরকার যৌথভাবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়–ক। এ কারণেই তিনি ট্রাম্পের কাছে সেসব কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ অসাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে প্রিয়া সাহা বলেন, কিছু দুষ্ট লোক আছে। তারাই মৌলবাদ উসকে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়াই করবেন। কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না জানিয়ে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি আশা করছি এ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। সব ধরনের পরিসংখ্যান দেখলে আমার বক্তব্য পরিষ্কার হবে।
‘দলিত’ সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ১৭ জুলাই তিনিও হোয়াইট হাউজে যান। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন। প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। তার এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রিয়া সাহার বক্তব্য ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বক্তব্যকে মিথ্যা ও কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দেশে ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে গতকাল রবিবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ওই অভিযোগ নিয়ে প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা শোনার আগে তড়িঘড়ি কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।