বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদিত ও ইজারা দেয়া ১১ লঞ্চঘাটের পূর্বের নাম গোপন রেখে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছদ্মনাম ব্যবহার করে ঢাকা-বরিশাল ভায়া নন্দীরবাজার নৌরুটে একটি কোম্পানির লঞ্চ চলাচলের জন্য নতুন করে ১১ লঞ্চঘাটের সময়সূচী অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এনিয়ে বর্তমানে ওই লঞ্চঘাটগুলোতে চরম উত্তেজনাসহ জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ’র কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এ অনিয়মের কারণে একই বিভাগের পূর্বের ইজারা দেয়া ১৮ লঞ্চ ঘাটের ইজারাদারদের চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে পাঁচটি রুটে চলাচল করা বিভিন্ন কোম্পানির ১৮ লঞ্চের মালিকরাও চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রতারণার মাধ্যমে ছদ্মনাম ব্যবহার করে অনুমতি দেয়া ওই লঞ্চঘাটের সময়সূচী বাতিল করা না হলে আগামী অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএ’র পূর্বের লঞ্চঘাটগুলো স্থানীয়রা ইজারা না নিলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে সরকার। তাই পূর্বের লঞ্চঘাটগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছদ্মনামের নতুন লঞ্চঘাটের সময়সূচী বাতিলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদাররা নৌ-মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের বরাবরে আবেদন করেছেন।
এছাড়া ঘাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেও একই দাবি করা হয়েছে। জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে ঢাকা-বরিশাল ভায়া নন্দীরবাজার, ঢাকা-টরকী, ঢাকা-সূর্যমনি, ঢাকা-মাদারীপুর, ঢাকা-মুলাদী নৌরুটে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ১৮ লঞ্চের সময়সূচী অনুমোদন নিয়ে লঞ্চ মালিকরা যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে।
এরইমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর মালিকানাধীন মেসার্স ফারহান নেভিগেশন ও মেসার্স আগরপুর নেভিগেশন কোম্পানিকে সম্পূর্ণ অনিয়মের মাধ্যমে সময়সূচী অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এরমধ্যে ঢাকা-বরিশাল ভায়া নন্দীরবাজার নৌরুটের মধ্যে পূর্বের ১১ লঞ্চঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিআইডব্লিউটিএ’র কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে ছদ্মনাম ব্যবহার করে সৃষ্টি করা হয়েছে ঢাকা থেকে নবাবেরহাট, সিমসন ঘাট, কালামের ঘাট, ফিরোজের ঘাট, খুশির হাট, খলিল মোল্লার ঘাট, সিকদার বাড়ি, সাহেবেরচর, নলগোড়া, কুতুবপুর ও চরলক্ষ্মীপুর সিকদারবাড়ি নামের লঞ্চঘাট।
প্রতারণার মাধ্যমে গত ৮ আগস্ট এসব লঞ্চঘাটের অনুমোদন নিয়েই সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপুর মালিকানাধীন কোম্পানির লঞ্চগুলো চলাচল করছে। ফলে ঢাকা-বরিশাল ভায়া নন্দীরবাজার নৌপথের এবং আশেপাশের বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক দীর্ঘদিনের অনুমোদিত এবং পুরনো ঘাটগুলোর ইজারাদারসহ এসব রুটে দীর্ঘদিন থেকে যাত্রীসেবা দেয়া লঞ্চ কোম্পানিগুলোর মালিকদের সর্বাধিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে রাজস্ব আয় হারাতে বসেছে সরকার।
এ রুটের মিয়ারচর লঞ্চঘাটের ইজারাদার (ঘাট মালিক) ও সরিকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মনিরুজ্জামান মনির অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা থেকে বরিশাল ভায়া নন্দীরবাজার নৌপথে মেসার্স ডলার শিপিং লাইন্স ও মেসার্স ই-আলী শিপিং লাইন্স কোম্পানির সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
এ সুযোগে সম্পূর্ণ প্রতারণার মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ অনুমোদিত ঘাটের প্রকৃত নাম বাদ দিয়ে ছদ্মনাম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে এমপি টিপু তার মালিকানাধীন কোম্পানির লঞ্চের সময়সূচী অনুমোদন করিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নৌপথে নতুন কোন লঞ্চ কোম্পানিকে সময়সূচী অনুমোদন দিতে হলে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত কিছু নিয়ম অনুসরণ করে এবং লঞ্চ মালিক সমিতির মতামত নিয়ে দিতে হয় কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। এমনকি জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু প্রভাব খাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের একমাত্র কর্ণধার বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিসহ অন্যান্য সংসদ সদস্য এবং নির্বাচিত অসংখ্য জনপ্রতিনিধিদের পূর্বের রুট সচল রাখার সুপারিশকে উপেক্ষা করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ছদ্মনামে নতুন লঞ্চঘাটের সময়সূচী অনুমোদন করেই লঞ্চ পরিচালনা শুরু করছেন।
ফলে দীর্ঘদিন থেকে পাঁচটি রুটে চলাচল করা বিভিন্ন কোম্পানির ১৮ লঞ্চ মালিকরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে ইজারা নেয়া এ রুটের মিয়ারচর লঞ্চঘাট, হোসনাবাদ সাহেবেরচর লঞ্চঘাট, চরজাহাপুর লঞ্চঘাট, মুলাদী বন্দর লঞ্চঘাট, মনসাগঞ্জ লঞ্চঘাট, মুলাদী রাস্তারমাথা লঞ্চঘাট, মীর কুতুবশাহ লঞ্চঘাট, চরকালেখান ঢালীবাড়ি লঞ্চঘাট, পূর্ব বানিমর্দন লঞ্চঘাট, পশ্চিম বানিমর্দন লঞ্চঘাট, ভূঁইয়া বাড়ি লঞ্চঘাট, নাতিরহাট লঞ্চঘাট, নাজিরপুর লঞ্চঘাট, মোল্লারহাট লঞ্চঘাট, সফিপুর লঞ্চঘাট, পার্শ্ববর্তী হোসনাবাদ লঞ্চঘাট, গৌরনদী বন্দর লঞ্চঘাট, পিঙ্গলাকাঠী লঞ্চঘাটের ইজারাদাররা চরম আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র সব নিয়ম মেনেই লঞ্চঘাটগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেনি।