27 C
Dhaka
জুলাই ৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ প্রচ্ছদ প্রশাসন বরিশাল

মাদক নিয়ন্ত্রণে একাট্টা বরিশাল পুলিশ

বরিশাল বাংলার ভেনিস নামে পরিচিত। প্রাচীন যুগ থেকেই বরিশাল শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ। সমৃদ্ধ এই বরিশালকে আরও উন্নত করতে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়। ৫ লাখ মানুষের বসবাসকৃত নগরীতে নেশার রাজত্ব চালাতে মাদক ব্যবসায়ীরা সর্বদাই তৎপর ছিলো, এখনও আছে।

এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে খুব সহজেই বরিশাল নগরীতে মাদকের রাজত্ব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মরণ নেশার মাদক ইয়াবা নগরীতে এরই  মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে। যদিও ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল নগরীকে সকল অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে গঠন করা হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।

মাদকের ভয়াবহতা যখন চরম পর্যায়ে এমন এক পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. শাহাবুদ্দিন খান। যোগদানের পরই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। তার এই যুদ্ধের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করে চলছে মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন সবচেয়ে বড় থানা কোতোয়ালি মডেল থানা। এই থানা সব সময়ই বরিশাল নগরীকে নিরাপদ রাখতে কঠোর ভূমিকা পালন করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকা গঠনের পর চলতি বছর মাদকের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বছরের শুরুতে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে ২০ হাজার ও ২ হাজার ৫শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। মাদকের বড় এ তিন অভিযানে ৬ মাদক ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়। মেট্রোপলিটন এলাকা গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এত পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। বর্তমান পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খানের দিকনির্দেশনায় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম (পিপিএম) এর কারিশমায় এসআই সমীরণের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বড় মাদকের চালানসহ ব্যবসায়ীদের আটক করা হয়।

মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের সফল অভিযানে অনেকটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। তাদের অভিমত, মাদকের এতো বড় বড় সফল অভিযান এর আগে কোনোদিন বাস্তবায়ন হয়নি। পুলিশকে অভিনন্দন জানাই। এভাবে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকলে বরিশাল সুন্দর নগরীতে পরিণত হবে। পুলিশ কমিশনারের দিকনির্দেশনায় কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভূমিকায় এসআই সমীরণ মন্ডলের মাদক উদ্ধারে সাফল্য দেখে মাদক ব্যবসায়ীরা আতংকে রয়েছে বলেও জানান তারা। অনেকের ভাষায় মাদক ব্যবসায়ীরা বর্তমানে এসআই সমীরণ মন্ডলের আতংকে রয়েছে।

অপরদিকে শহরের ক্লাবগুলোতে অঘোষিত জুয়ার আসর ও মাদক বিরোধী অভিযানে গতি বাড়িয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত কয়েক দিনে পুলিশের অভিযানে পৃথক স্থান থেকে ১৪ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। শহরের নাজিরের পোল এলাকার নবজাগরণ ক্লাবে কোতোয়ালি পুলিশের উদ্ধার অভিযানে গাঁজাসহ ৫ জন আটকের পর অনেক অপরাধী গা-ঢাকা দিয়েছে। পাশাপাশি একাধিক অভিযাত ক্লাব জুয়া ও মাদকের আসর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে কোতোয়ালি পুলিশের অভিযানে ইয়াবার বড় দুটি চালানসহ ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় মাদক সরবরাহ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

মাদক উদ্ধার অভিযানে কোতোয়ালি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামেরও রয়েছে কৌশলী ভূমিকা। মূলত কমিশনারের নির্দেশনার আলোকে এই পুলিশ কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের মাদক উদ্ধার অভিযানের পথ বাতলে দিচ্ছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে মাঠ পর্যায়ে মাদক উদ্ধারে সফলতা নিয়ে ঘরে ফিরছেন এসআই সমীরণ মন্ডল। যদিও কোতোয়ালি পুলিশের এসআই, এএসআই মর্যাদার অধিকাংশ কর্মকর্তারাই এখন মাদক উদ্ধার অভিযানে জোরালো ভূমিকা রাখছেন।

কিন্তু এসআই সমীরণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এখানেই, চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারে যে সফলতা দেখিয়েছেন তাতে তিনি প্রশংসার দাবি রাখেন। অবশ্য এই সফলতার জন্য এসআই সমীরণকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সম্মাননা ক্রেস্টসহ পুরস্কৃত করেছেন। বরিশাল পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ৫ বছরের মধ্যে এবারেই বরিশালে নজিরবিহীন মাদক উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার এবং ৬ শতাধিক মামলা দিয়েছে পুলিশ। বছর শেষে তা ১ হাজারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছে কোতোয়ালি পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানা গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বছরে ৫শ’র বেশি মাদক মামলা হয়নি। এক্ষেত্রে মাদক উদ্ধারে কোতোয়ালি পুলিশের তৎপরতা যে বেড়ে গেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব মামলায় অধিকাংশ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছে। ফলে বর্তমানে বরিশালে মাদকের বিস্তার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখনও পুলিশ তৎপর। কারণ পুলিশ কমিশনার মাদক নিয়ে পুরোপুরি হার্ডলাইনে রয়েছেন।

এমনকি মাদক উদ্ধারে প্রতিদিন ৪টি থানা সংশ্লিষ্ট অফিসারদের মাদক উদ্ধার অভিযানে নামার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীদের বাগে আনতে কৌশলও শিখিয়ে দিচ্ছেন। এই মাদক বাণিজ্যে জড়িত প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকলেও কোনো ধরনের ছাড় না দিতেও থানাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। মূলত পুলিশ কমিশনারের এই নির্দেশনার পরপরই মাদক উদ্ধারে বরিশাল পুলিশের গতি যেন কয়েকগুণ বাড়লো।

এত কঠোরতার মধ্যেও নগরীতে মাদক সরবরাহ করছে কিছু মাদক ব্যবসায়ী। বর্তমানে এসকল মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের গ্রেপ্তারে একাট্টা রয়েছে বরিশাল পুলিশ। জানাগেছে, পুলিশ কমিশনার ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যে কারণে পুলিশ সদস্যরাও মাদক উদ্ধার অভিযানে বিতর্ক এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিককালে ডিবি পুলিশের একটি টিম মাদক উদ্ধার অভিযানে গিয়ে বিতর্কে জড়ালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন তিনি। শাস্তিস্বরূপ ওই টিমের ৬ সদস্যকে আপাতত আভিযানিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবারও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে আড়াইশ পিস ইয়াবাসহ আটক করে বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গতকাল নগরী থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃত দুই পুলিশ সদস্যই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে পিওএম শাখায় কর্মরত ছিলেন। বরিশাল পুলিশ কমিশনার কঠোর অবস্থায় থাকার কারণে মাদকে জড়িত পুলিশ সদস্যরাও কোনোরূপ ছাড় পাচ্ছেন না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় গোটা পুলিশ বিভাগ নিতে নারাজ। এই কারণেই মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে পুলিশ কমিশনার তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ফলে মাদক উদ্ধার অভিযান ব্যবসায়ীদের যতটা আতংকে রাখছে তদুপরি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারাও আতংকিত।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, বছরের শুরুতে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার এবং সমসাময়িক সময়ে চরমোনাই থেকে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা নান্টুসহ দুই জনকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা এবং নগরীর গোরস্থান রোড এলাকা থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে নারীসহ দুই জনকে গ্রেপ্তারের পর মাদক উদ্ধার অভিযান জোরালো হয়েছে। প্রতিনিয়ত দু-চারটি মাদক মামলা গ্রহণের পাশাপাশি অনেক চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের লাগামও টেনে ধরা হচ্ছে।

এছাড়া নগরীর ক্লাবগুলোতে জুয়া ও মাদকের আসর বন্ধেও অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে সমানতরাল ভাবে মাদক উদ্ধারে ডিবি পুলিশও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এই বাহিনীর মাদক উদ্ধার অভিযানের পরিসংখ্যান এমনটাই তথ্য দিয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বরিশাল পুলিশের মাদক উদ্ধার অভিযানে পর্যবেক্ষক মহল পুলিশের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। অবশ্য পুলিশের এই তৎপরতার কারণে শীর্ষ কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন খানকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।

তাদের প্রত্যাশা মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

বরিশালে যুবলীগ কর্মীর তাণ্ডব: মা-মেয়েকে কুপিয়ে জখম

banglarmukh official

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official