যে ব্যক্তি দয়াময়ের (আল্লাহর) কাছে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ছাড়া অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না। (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৮৭)
তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, কিয়ামতের দিন অপরাধীদের তৃষ্ণাতুর অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে। আলোচ্য আয়াতে সেই সব অপরাধীর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে শাফাআত বা সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। শুধু ওই ব্যক্তি সুপারিশ করতে পারবে, যে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসব সুপারিশ অবিশ্বাসীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
শাফাআত-এর শাব্দিক অর্থ সুপারিশ, মাধ্যম ও দোয়া বা প্রার্থনা। পারিভাষিক অর্থ হলো, অন্যের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করা। কেউ কেউ বলেছেন, শাফাআত হলো, পাপ ও আজাব থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা। শাফাআতের একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ তাআলা। তাঁর অনুমতিক্রমে কিয়ামতের দিবসে শাফাআত অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিয়ামতের ময়দানে কেউ শাফাআত করতে পারবে না। কেননা আখিরাতের আদালতে কোনো শ্রেষ্ঠতম নবী-রাসুল এবং কোনো নিকটতম ফেরেশতাও সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস পাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কে আছে এমন, যে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে শাফাআত করতে পারবে?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন, সে ছাড়া কারো শাফাআত সেদিন কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১০৯)
পরকালের আদালতে মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে যাঁরা শাফাআত করবেন তাঁরা হলেন—নবীগণ, ফেরেশতাগণ, শহীদগণ, আলেম-উলামা, হাফেজে কোরআন ও নাবালেগ সন্তান। তাঁদের শাফাআত কোরআন ও হাদিসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত। তাঁদের মধ্যে শাফাআতকারীদের সর্দার হলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার শাফাআতই প্রথম গ্রহণ করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম) তবে এই শাফাআত পাওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে—এক. আল্লাহ যাঁর শাফাআত গ্রহণ করবেন, তাঁকে প্রথমে তিনি অনুমতি দেবেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ শাফাআত করতে পারবেন না। দুই. যিনি শাফাআত করবেন, তাঁর প্রতি আল্লাহকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তিন. যার জন্য শাফাআত করা হবে, তার প্রতি আল্লাহকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, তার ঈমান থাকতে হবে এবং নামাজ, জাকাত, গরিবদের হক আদায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমল করতে হবে।